Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

মাস্ক না পরলে ‘স্পট ফাইন’ নয় কেন?

যাঁরা মাস্ক না পরে নিজের এবং অন্যের বিপদের কারণ হয়ে উঠছেন, তাঁদের জন্য স্পট ফাইনের দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিকদের একটি অংশ।

ফেরেনি হুঁশ: সংক্রমণের হার কমাতে কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে ফের হয়েছে লকডাউন। তবে এখনও বাড়েনি নাগরিকদের একাংশের সচেতনতা। শনিবার উল্টোডাঙার বাজারে  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ফেরেনি হুঁশ: সংক্রমণের হার কমাতে কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে ফের হয়েছে লকডাউন। তবে এখনও বাড়েনি নাগরিকদের একাংশের সচেতনতা। শনিবার উল্টোডাঙার বাজারে ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

থুতু ফেললে কিংবা ট্র্যাফিক আইন না মানলে যদি ‘স্পট ফাইন’-এর ব্যবস্থা থাকতে পারে, তা হলে মাস্ক না পরলে ‘স্পট ফাইন’ হবে না কেন?

করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠার পরেও যাঁরা মাস্ক না পরে নিজের এবং অন্যের বিপদের কারণ হয়ে উঠছেন, তাঁদের জন্য স্পট ফাইনের দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিকদের একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম আক্রান্তের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ রোধে একাধিক আইন বলবৎ করার পাশাপাশি গত এপ্রিলেই রাজ্য সরকার মাস্ক পরে বেরোনো বাধ্যতামূলক করেছে। তার পরেও অনেকের মধ্যে এখনও সেই অভ্যাস তৈরি করা যায়নি!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা যেখানে বার বার করোনা সংক্রণের বিরুদ্ধে মাস্কই অন্যতম রক্ষাকবচ বলছেন, সেখানে নাগরিকদের একটি অংশের বেপরোয়া মনোভাব সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার সুবিধা রয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ তা করছেও। তা সত্ত্বেও অনেকেই রাস্তায় মাস্ক না পরে অবাধে ঘুরছেন। অথবা এমন ভাবে মাস্ক পরছেন, তাতে নাক-মুখ কোনওটিই ঢাকছে না, বরং মাস্ক তখন ‘চিনগার্ড’ হয়ে থুতনিটুকুই আড়াল করছে।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী কেউ কোনও সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালত যা শাস্তি দেবে, তা বর্তাবে নিয়মভঙ্গকারীর উপরে। ওই ধারা অনুযায়ী এক মাস কারাদণ্ড বা দুশো টাকা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে। নিয়ম না মানার ফলে যদি অন্যের স্বাস্থ্য, জীবন ও নিরাপত্তার হানি হয়, তখন ছ’মাস কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দুটোই হতে পারে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘এই ধারায় ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশ বহু পদক্ষেপ করেছে।’’

তবে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালত, উকিলের দফতর বন্ধ থাকায় পুরো প্রক্রিয়াই বিলম্বিত হয়ে পড়ছে, তাই এখনই ‘স্পট ফাইন’ চালু করা প্রয়োজন। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এখন আদালতে মামলা পাঠানোটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। কারণ, সব কিছুই প্রায় বন্ধ। ফলে মাস্ক না পরলে শাস্তির জন্যও অনেক সময় লাগবে। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতে না পাঠিয়ে স্পট ফাইন করুক পুলিশ। রাজ্য সরকার নোটিফিকেশন জারি করে শুধুমাত্র এই জরুরি অবস্থায় পুলিশকে স্পট ফাইনের ক্ষমতা দিতে পারে। তাতে কোষাগারে টাকাও আসবে। আবার মাস্ক না পরলে জরিমানা দিতে হবে, মানুষের মনে সেই ভয়টাও তৈরি হবে।’’ দিল্লি, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ দেশের একাধিক জায়গায় ইতিমধ্যেই মাস্ক না পরলে জরিমানা ধার্য হয়েছে। আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল বলেন, ‘‘মাস্ক পরাটা অভ্যাসের মধ্যে নেই বলে অনেকে হয়তো তা নিয়ে বেরোতে ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু স্পট ফাইন চালু করলে মাস্ক পরাটা অভ্যাস হয়ে যাবে।’’

ইএনটি চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা বলছেন, ‘‘অনেককে দেখে বোঝা যাচ্ছে না প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন! মাস্ক ছাড়াই দিব্যি তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্পট ফাইন চালু হলে এই বেপরোয়া মনোভাব কিছুটা অন্তত কমবে। সে ক্ষেত্রে মোটা টাকার জরিমানা ধার্য করা প্রয়োজন।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ নিয়ে প্রতিদিন নতুন তথ্য উঠে আসছে। অনেক সময়েই পূর্বের তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্যের কোনও সাযুজ্য থাকছে না। কিন্তু একটি বিষয় অপরিবর্তিত রয়েছে, তা হল মানবশরীরে ভাইরাসের প্রবেশপথ। মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডল বলছেন, ‘‘নাক, মুখ ও চোখ, এই তিনটিই হল নোভেল করোনাভাইরাসের প্রবেশপথ। মাস্ক পরে থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে বেপরোয়া হলে শুধু নিজের নয়, অন্যদেরও ক্ষতি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy