Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Prashant Bhushan

শাস্তি মঞ্জুর, ক্ষমা নয়, প্রশান্ত ভূষণের মানসিকতাকে কুর্নিশ নেটাগরিকদের

আদালত তাঁকে ক্ষমা করে দিক বা তিনি নিজে ক্ষমা চেয়ে মিটিয়ে নিন, তা যে তিনি চান না, তা স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত।

প্রশান্ত ভুষণের প্রশস্তিতে নেটাগরিকরা। —ফাইল চিত্র

প্রশান্ত ভুষণের প্রশস্তিতে নেটাগরিকরা। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ১৭:২৯
Share: Save:

আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হবে, তা তিনি মাথা পেতে নেবেন। কিন্তু ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের এই বক্তব্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। প্রশান্তের মানসিকতার প্রশংসায় বুঁদ নেটাগরিকরা। মহাত্মা গাঁধীর প্রায় একই ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে তুলনা টেনে প্রশান্তের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বহু মানুষ। তিনি যেটা সত্যি মনে করেছেন, সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে কার্যত বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।

তাঁর দু’টি টুইটের জন্য গত ১৪ অগস্ট প্রশান্ত ভূষণকে আদালত অবমাননার কারণে দোষী সাব্যস্ত করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ সাজা ঘোষণার দিন নির্ধারণ করে গত কাল ২০ অগস্ট বৃহস্পতিবার। কিন্তু তার আগে প্রশান্তের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল আদালত। তাতেই তিনি আদালতে বলেছিলেন, ‘‘আমি ক্ষমাভিক্ষা করতে চাই না। মহান বা বিশাল হওয়ার আর্জিও জানাচ্ছি না। আদালত যে শাস্তি দেবে, তা আমি মাথা পেতে নেব।’’ অর্থাৎ আদালত তাঁকে ক্ষমা করে দিক বা তিনি নিজে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিন, এমনটা যে তিনি চান না, তা স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত।

একজন নাগরিকের কর্তব্য হিসেবেই ওই টুইট দু’টি তিনি করেছিলেন বলে জানিয়ে প্রশান্ত আদালতে আরও বলেছিলেন, ‘‘ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যদি আমি সরব না হই, তা হলে আমি আমার কর্তব্যে ব্যর্থ হব। আদালতের যে কোনও শাস্তি বা জরিমানা দিতে আমি রাজি। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব দিলে সেটা আমার জন্য মর্যাদাহানিকর হবে।’’

আরও পড়ুন: প্রণবের রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন স্থিতিশীল, এখনও ভেন্টিলেশনেই

প্রশান্তের এই বক্তব্যের পর আদালত সাজা ঘোষণা পিছিয়ে ২৪ অক্টোবর নির্ধারিত করেছে। একই সঙ্গে প্রশান্ত ভূষণকে তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনার কথাও বলেছে বেঞ্চ। বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘‘ফৌজদারি আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে মারাত্মক সাজা রয়েছে। যা হয়েছে, হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (প্রশান্ত ভূষণের) অনুতাপের মনোভাব থাক। ওঁর মনোভাব পুনর্বিবেচনা করুন।’’ কিন্তু প্রশান্ত ভূষণ এখনও পর্যন্ত সেই মনোভাব দেখাননি বলেই মত আইনজীবী মহলের। অন্য দিকে প্রশান্ত ভূষণ আর্জি জানিয়েছিলেন, তাঁর সাজা শোনাক অন্য কোনও বেঞ্চ। কিন্তু শীর্ষ আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তবে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, আদালতের সাজার নির্দেশের পর প্রশান্তের মনোভাব না জানা পর্যন্ত তা কার্যকর হবে না।

আরও পড়ুন: ‘শেষ করব অন্ধকারের যুগ’, ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে ঘোষণা বাইডেনের

প্রশান্তের এই শিরদাঁড়া সোজা রাখার মনোভাবকেই কুর্নিশ করছে সোশ্যাল মিডিয়া। মহাত্মা গাঁধী বলেছিলেন, ‘‘সঠিক হওয়ার জন্য অথবা তোমার আগামী সময়ের জন্য কখনও ক্ষমা চেয়ো না। তুমি যদি সঠিক হও, এবং সেটা তুমি জান, তা হলে মনকে জিজ্ঞেস কর। তোমার মত যদি সংখ্যালঘুও হয়, তবু সত্যিটা সত্যিই।’’ গাঁধিজির এই মনোভাবের সঙ্গে প্রশান্তের তুলনা টেনেছেন অনেকেই। কেউ বলেছেন, ‘আমাদের সময়ের হিরো’। এ ছাড়া বহু প্রশংসা-প্রশস্তিমূলক বক্তব্যে ভরে উঠেছে টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ।

প্রশান্ত ভূষণের দু’টি টুইট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রথম টুইটে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের বাইকে চড়ার একটি ছবি দিয়ে মহামারির সময়েও কেন তিনি মাস্ক পরেননি, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। দ্বিতীয় টুইটে দেশের ৬ জন প্রধান বিচারপতির ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন প্রশান্ত। তার জেরেই তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য ছিল, ওই দুই টুইটে গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভ বিচারব্যবস্থাকে অবমাননা করা হয়েছে। যদিও শুনানিতে প্রশান্তের আইনজীবী একাধিক বার যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বিচারব্যবস্থার গরিমা বা মর্যাদায় কোনও আঘাত করেননি প্রশান্ত ভূষণ। সেই মামলাতেই প্রশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে শীর্ষ আদালত।

অন্য বিষয়গুলি:

Prashant Bhushan Contempt of Court Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE