প্রতীকী ছবি।
উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বাড়ছে জল্পনাও। চলতি বছরের মেয়াদ যত কমে আসছে, ততই প্রশ্নটা জোরালো হচ্ছে জনমানসে— কবে আসবে করোনার প্রতিষেধক? এ বছরের শেষেই? নাকি আগামী বছরে? যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটিয়ে পুণের প্রতিষেধক সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, প্রতিষেধকের দৌড়ে এগিয়ে থাকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ আগামী বছরের এপ্রিলেই ভারতের আমজনতার জন্য বাজারে চলে আসবে। এরও দু’মাস আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্করা ওই টিকা পেয়ে যাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
ভারতে কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে সিরাম। পুনাওয়ালার কথায়, দু’ডোজের ওই টিকার জন্য খরচ হবে হাজার টাকার কাছাকাছি। তবে সরকার টিকা কিনে তা দেশবাসীকে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে দাম প্রায় অর্ধেক কম হবে। আশার খবর এসেছে ভারত বায়োটেকের দেশীয় টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’-এর ক্ষেত্রেও। ওই প্রতিষেধকের প্রথম দু’টি পর্যায়ের প্রয়োগ সফল হওয়ায় আজ তৃতীয় পর্বের প্রয়োগ শুরু হয় হরিয়ানায়। অম্বালা ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রথম টিকাটি নেন সে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ।
টিকাকরণ কৌশল নিয়ে আজ পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দ্রুত টিকাকরণের লক্ষ্যে টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গতি আনা এবং সময় মতো টিকা কেনার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করে এগোনোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানান, টিকা পৌঁছে দেওয়া, যাঁদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গোটা বিষয়টির উপরে নজরদারির জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হবে। প্রথমে যাঁরা টিকা পাবেন, তাঁদের আগাম চিহ্নিত করা হবে। ভারতীয় টিকা তৈরির বিষয়ে জোট বাঁধতে চেয়ে বাংলাদেশ, মায়ানমার, কাতার, ভুটান, সুইৎজ়ারল্যান্ড, বাইরাইন, অস্ট্রিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে। ডাক্তারি ও নার্সিংয়ের পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে টিকাকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুন: ভুটানের ভিতরেই গ্রাম বানিয়েছে চিন!
বর্তমানে দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে প্রায় পাঁচ থেকে সাতটি প্রতিষেধকের শেষ পর্যায়ের প্রয়োগ চলছে। এর মধ্যে দৌড়ে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ফাইজ়ার ও মডার্না সংস্থা। ফাইজ়ারের দাবি, তাদের প্রতিষেধকে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রথমে আমেরিকার বাজারে আসতে চলেছে ওই প্রতিষেধক। তবে ভারতে তা নিয়ে আশা দেখছেন না প্রতিষেধক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম কর্তা বিনোদকুমার পল। তিনি বলেন, ‘‘ওই টিকা সংরক্ষণের জন্য মাইনাস ৭০ থেকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। ভারতের মতো অন্য অনেক দেশেরই পক্ষে এ ধরনের কোল্ড চেন গড়ে তোলা কার্যত অসম্ভব।’’ মডার্নার টিকা মূলত আমেরিকার বাজারের কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে। সেটিও আগামী মাসে বাজারে আসতে চলেছে। ভারতে বিদেশি প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল না-হওয়া পর্যন্ত তা বাজারে ছাড়া যায় না। ওই দুই সংস্থা এখনও ভারতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আগ্রহ না-দেখানোয় ওই টিকাগুলি নিয়ে আপাতত উৎসাহ দেখাচ্ছে না কেন্দ্রও।
আরও পড়ুন: দিল্লি থেকে রেল-বিমান বন্ধের ভাবনা মহারাষ্ট্রের
পরিবর্তে দেশীয় ভাবে তৈরি কিংবা দেশীয় সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে টিকাগুলির এ দেশে প্রয়োগের কাজ চলছে, সেগুলিরই উপরেই ভরসা রাখছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই টিকাগুলির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিশিল্ড। সিরামের সিইও পুনাওয়ালা গত কাল একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনায় দাবি করেন, ‘‘কোভিশিল্ড মানবশরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কত দিন পর্যন্ত প্রতিষেধক কাজ করবে, তা সময়ই একমাত্র বলতে পারবে।’’ কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দু’টি পর্বের সাফল্যে উৎসাহিত পুনাওয়ালা আগামী মাসেই দেশের ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কাছে ওই প্রতিষেধকের জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানাতে চলেছেন। তবে আগামী বছরের গোড়ায় টিকাকরণ শুরু হলে দেশের শেষ মানুষটির টিকাকরণ হতে-হতে প্রায় তিন বছর লেগে যাবে। পুনাওয়ালার কথায়, ‘‘পরিকাঠামো, প্রতিষেধকের উপলব্ধতা, মানুষকে টিকা নিতে রাজি করানো— সব মিলিয়ে দেশের সবাইকে টিকা দিতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।’’
সম্পূর্ণ দেশীয় ভাবে তৈরি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকার তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক ডোজ় দেওয়া হবে মোট ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। এর ফল আসতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগার কথা। আগামী বছরের গোড়ার দিকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবে সংস্থা। তবে সূত্রের মতে, আগামী বছরের মার্চ থেকে মে নাগাদ বাজারে আসার সম্ভাবনা কোভ্যাক্সিনের। বাকি তিনটি প্রতিষেধকের মধ্যে দেশীয় সংস্থা জ়াইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকোভ ডি’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রয়োগের ফলাফল আসার মুখে। তার পরেই তৃতীয় পর্বের প্রয়োগের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া ভারতে রুশ প্রতিষেধক স্পুটনিক-ভি-এর দ্বিতীয়/তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা খুব দ্রুত রেড্ডিজ় ল্যাবরেটরিজ় শুরু করবে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ভারতের আর এক সংস্থা ‘বায়োলজিক্যাল-ই’-এর প্রতিষেধকটি এখন প্রথম/দ্বিতীয় ধাপের প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy