সকাল ন’টার মধ্যে সরকারি কর্মীদের অফিসে ঢোকার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। —ফাইল চিত্র
রাজ্যে সরকারি কর্মীদের কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্লোগান ছিল ‘ডু ইট নাউ’। কিন্তু সেই স্লোগানের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনও গাইডলাইন ছিল না। উত্তরপ্রদেশে এ বার সরকারি কর্মীদের অফিসে ঢোকার সময় নির্দিষ্ট করে কড়া নির্দেশিকা জারি করলেন যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশের সমস্ত সরকারি কর্মীকে সকাল ন’টার মধ্যে অফিসে ঢুকতেই হবে, কোনও ব্যাতিক্রম হলেই কড়া শাস্তি— নির্দেশ মুথ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে খারাপ পারফরম্যান্স করা এবং দুর্নীতিবাজ অফিসারদের একটি তালিকাও জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। সরকারি কর্মীরা সরাসরি বিরোধিতা না করলেও অনেকেই বলছেন, ঢোকার সময়ের মতো অফিস ছাড়ার সময়ও নির্দিষ্ট করে দিলে ভাল হত।
শুক্রবার উত্তরপ্রেদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এই কড়া বার্তা পুলিশ ও প্রশাসনের প্রধানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘পরিস্থিতি যাই হোক, রাজ্যের পুলিশ-প্রাশাসনের সমস্ত সরকারি কর্মীকে সকাল ন’টার মধ্যে অফিসে ঢুকতেই হবে। এর কোনও ব্যতিক্রম মেনে নেওয়া হবে না। কেউ না পৌঁছতে পারলে সার্ভিস বুকে প্রভাব, মাইনে কাটার মতো কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে তাঁকে। সব জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ প্রযোজ্য। এর সঙ্গে বলা হয়েছে, সকাল ন’টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে সাধারণ মানুষ যাঁরা নানা সমস্যা নিয়ে দফতরে আসবেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে।’’এর পাশাপাশি টুইটারেও এই নির্দেশিকার সারাংশ পোস্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে ওই চিঠির একটি কপি পাঠানো হয়েছে সে রাজ্যের এডিজি (এশটাবলিশমেন্ট) পীযূষ আনন্দকে। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ফাঁকিবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত অথবা সরকারি কাজে গাফিলতি-গড়িমসি করেন এমন অফিসারদের তালিকা তৈরি করতে। সময় মাত্র দু’দিন, অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে ওই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা দিতে হবে। আবার নির্দেশিকায় এ-ও বলা হয়েছে, এ বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে যে সব পুলিশকর্মী-অফিসারের বয়স ৫০ বছর পার হয়ে গিয়েছে, তাঁদের আলাদা করে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হবে।
কিন্তু এই নির্দেশিকার পরই পুলিশ-আমলাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তবে সরকারের রোষে পড়ার ভয়ে কেউই প্রকাশ্যে সে কথা বলতে চাইছেন না। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক জেলাশাসক যেমন বললেন, ‘‘জেলায় আমরা কার্যত ২৪ ঘণ্টাই কাজ করি। কোনও ঘটনা ঘটলে সময় দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় ছুটে যেতে হয়। সারাদিন কাজ করার পরও রাতে কোনও ঘটনা ঘটলে সেখানে যেতে হয়। আবার সেই সব ঘটনার রেশ মিটিয়ে অনেক সময় ঘরে ফিরতে ভোর হয়ে যায়। তাহলে পরের দিন কী ভাবে সকাল ন’টায় অফিসে পৌঁছব?’’ জেলাশাসকদেরও বক্তব্য প্রায় একই।
আরও পডু়ন: ‘বড় ঘোষণা করতে চলেছি’, মোদীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মন্তব্য ট্রাম্পের, শুল্ক-সংঘাত থামার ইঙ্গিত?
আবার রাজ্য সচিবালয়ের কর্মী-অফিসারদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, আমাদের সকাল ৯টায় অফিসে ঢোকা মানে ড্রাইভার, চাপরাশি, অফিসের কর্মীদেরও একই ভাবে কাজে আসতে হবে। তাঁরাও ক্ষুব্ধ। আবার অনেক সময় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ১১টা-১২টা পর্যন্ত বৈঠক করেন। তার পর আমাদের বাকি কাজ সেরে পরের দিন আরও রাত হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে। কিন্তু সে সব ক্ষেত্রেও কোনও ছাড় নেই। আবার বাড়ি ফেরার সময়ও নির্দিষ্ট নেই।’’ অনেকে আবার ঘনিষ্ঠ মহলে এই নির্দেশিকাকে স্বেচ্ছাচারিতা বলেও মন্তব্য করেছেন।
কিন্তু কেন এই নির্দেশিকা? যোগী আদিত্যনাথের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল, পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেন না বা কথা বলেন না। দফতরে এসে তাঁরা প্রায় সারা দিন বসে থেকে সন্ধেয় বাড়ি ফিরে যান। আবার পুলিশ-প্রশাসনের একটি অংশের মধ্যে কাজে গাফিলতির নালিশও উঠেছিল মুখ্যমন্ত্রীর কানে। সেই সব বন্ধ করতেই এমন কড়া নির্দেশিকা।
আরও পড়ুন: ছেলের ব্যাট, বাবার জুতো! কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও পিটিয়েছিলেন আধিকারিককে? ২৫ বছর আগের ছবি ভাইরাল
উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে অবশ্য এই নির্দেশিকা নতুন নয়। বরং পুরনো আদেশনামার পুনরাবৃত্তি। গত বছরের এই সময়ই নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। গত বছরের ওই নির্দেশিকা জারির পরই ৫০ বছরের বেশি বয়সের অনেক আমলা-পুলি্শ কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন। সেই নির্দেশিকার রিভিউ বৈঠকের পর ফের নতুন করে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সচিবালয় সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশের কর্মী অফিসারদের নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি সূত্রে দাবি, আদিত্যনাথ এ দিন বলেছেন, যে সব পুলিশ অসৎ এবং সরকারি নিয়মকানুনের প্রতি দায়বদ্ধ নন, তেমন অফিসারদের আমার দরকার নেই।
বাম জমানায় সিপিএমের সরকারি কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য সমর্থকদের একটা বড় অংশের মধ্যে কাজে ফাঁকি, অফিসে অনিয়মিত হাজিরা, দেরি করে আসা-তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার মতো নানা অভিযোগ উঠত। সেই কারণেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে স্লোগান ছিল ‘ডু ই নাউ’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে অবশ্য মনে করেন, বুদ্ধবাবুর ওই স্লোগান ছিল কার্যত রাজনৈতিক। কারণ তাতে কর্মীদের প্রতি না ছিল তেমন কড়া বার্তা, না ছিল নির্দিষ্ট কোনও গাইডলাইন। তাই ওই স্লোগানের পরেও কর্মসংস্কৃতি ফিরেছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য অফিসে ঢোকার সময় থেকে জনসাধারণের অভিযোগ শোনা, সব কিছুই প্রায় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy