Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
National News

অসমের ইতিহাসবিদকে এনআইএ-জিজ্ঞাসাবাদ, প্রতিবাদে চিঠি রামচন্দ্র গুহদের

ঠিক কী কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তা খোলসা করেনি এনআইএ।

ইতিহাসবিদ তথা গুয়াহাটি আইআইটির অধ্যাপক অরূপজ্যোতি শইকিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

ইতিহাসবিদ তথা গুয়াহাটি আইআইটির অধ্যাপক অরূপজ্যোতি শইকিয়া। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:২৫
Share: Save:

কোনও কারণ না দেখিয়েই এনআইএ-জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন ইতিহাসবিদ তথা গুয়াহাটি আইআইটির অধ্যাপক অরূপজ্যোতি শইকিয়া। এক দিন নয়, টানা দু’দিন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র এই আচরণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ দেশের বিদগ্ধমহলের একাংশ। অরূপজ্যোতির সমর্থনে এ বার এনআইএ-কে চিঠি লিখেছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ-সহ দেশের ৪২ জন বিদ্বজ্জন। এনআইএ আধিকারিকদের কাছে তাঁদের দাবি, অরূপজ্যোতির সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করুন এবং তাঁকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিন। তবে অরূপজ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবাদের পিছনে অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার মন্তব্য কাজ করছে কি না, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

শনিবার অরূপজ্যোতিকে ফোন করে গুয়াহাটির বাইরে সোনাপুরে ডেকে পাঠান এনআইএ-র আধিকারিকেরা। এর পর চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ। তবে ঠিক কী কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তা খোলসা করেনি এনআইএ। অরূপজ্যোতির আইনজীবী শান্তনু বরঠাকুর অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁকে অখিল গগৈ মামলায় ‘সাক্ষী’ হিসাবে ডেকে পাঠানো হয়েছে। যদিও এ নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি এনআইএ।

অসমে কৃষকদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলনকারী অখিল গগৈ ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের নামে অসমে ঘাঁটি গড়ার কাজে মাওবাদীদের সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে অখিলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটি আইআইটি-র ইতিহাসের অধ্যাপক অরূপজ্যোতি শইকিয়াকে ওই মামলায় সাক্ষী হিসাবে ডেকে পাঠায় এনআইএ। এর পর দু’দিন মিলিয়ে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন এনআইএ আধিকারিকেরা। রবিবারও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এই মামলায় অরূপজ্যোতিকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি এনআইএ।

গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই এনআইএ-কে চিঠি দিয়েছেন রামচন্দ্র গুহ, শিক্ষাবিদ সুকান্ত চৌধুরী, দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এর অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দর, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা নয়নজ্যোত লাহিড়ি প্রমুখ। চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘অসম তথা ভারতের সাহিত্য ও বিদগ্ধ মহলের অলঙ্কার অধ্যাপক শইকিয়া। পাশাপাশি তিনি উচ্চ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। ভদ্র, মৃদুভাষী এবং একেবারে অহিংস মতাদর্শে বিশ্বাসী। গুয়াহাটি আইআইটির পড়ুয়াদের প্রতি তাঁর আনুগত্য দৃষ্টান্তমূলক। তাঁর মতো এমন শিক্ষাবিদ তথা ভদ্র মানুষকে এ ভাবে এনআইএ-র জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে, তা সত্যিই পীড়াদায়ক। এনআইএ-র কাছে অনুরোধ তাঁকে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করা হোক। এবং নির্বিঘ্নে অধ্যাপনা করতে দেওয়া হোক।’’

আরও পড়ুন: শাহিন বাগ বিতর্ক তুঙ্গে তুলছে বিজেপি, কেজরীবাল কি শাঁখের করাতে?

এই চিঠির পর মুখ খুলেছে কংগ্রেসও। দলের শীর্ষ নেতা জয়রাম রমেশ গোটা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। টুইটারে ওই চিঠিটিকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘‘অরূপজ্যোতিকে যে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাতে আমি একেবারে স্তম্ভিত এবং হতবাক। তিনি আমাদের দেশের এক জন অন্যতম ইতিহাসবিদ। ব্রহ্মপুত্রের উপর লেখা তাঁর সাম্প্রতিক বইটি ধ্রুপদী। শিক্ষাবিদেরা যে অনুরোধ করেছেন, তাকে সমর্থন জানাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: আদনানকে পদ্মশ্রী দেওয়ায় ‘পাকিস্তান প্রেম’ নিয়ে মোদী সরকারকে খোঁচা স্বরার

গোটা ঘটনায় অসমের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হিমন্তের ভূমিকা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত মাসেই হিমন্ত মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এক কেন্দ্রীয় সরকারের এক কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, সে সময় হিমন্তের দাবি ছিল, দিসপুরে রাজ্যের সচিবালয়ে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা করছেন অসমের এক শিক্ষাবিদ। এবং সে সংক্রান্ত প্রমাণও নাকি প্রশাসনের কাছে রয়েছে। ঘটনাচক্রে এর কিছু দিন পরেই অরূপজ্যোতিকে এনআইএ-জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ায় প্রশ্নের মুখে হিমন্তের ভূমিকা। যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অসমের অর্থমন্ত্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE