সংখ্যার হিসেবে দুই শিবিরই আরও ঘর গুছনোর সময় পেয়ে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
‘রাজ্যপাল মহোদয়, হাউস বুলাও’। ‘প্রজাতন্ত্রমে তানাশাহি, নেহি চলেগি, নেহি চলেগি’।
রাজস্থানের রাজভবনের সবুজ লন। ঘাসেই আসন করে দু’গজের দূরত্ব রেখে বসে কংগ্রেস বিধায়কেরা। রাজভবনের মধ্যে বসেই রাজ্যপালকে লক্ষ্য করে স্লোগান উঠছে।
রাজস্থানের রাজনীতিতে এত দিন অশোক গহলৌত বনাম সচিন পাইলটের দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার তা রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র বনাম মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতে পরিণত হল। যার প্রমাণ দিয়ে সকালে এক বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর পরে রাজ্যবাসী রাজভবন ঘেরাও করলে আমার কোনও দায়িত্ব থাকবে না।’
আরও পড়ুন: কোভিড সারাতে বিজেপি নেতাদের ওষুধ পাঁপড় থেকে রামমন্দির!
রাজ্যপাল-গহলৌত সারা দিনের এই দড়ি টানাটানি অব্যাহত রইল রাত পর্যন্ত। রাজভবনে ৫ ঘণ্টা ধরে ধরনার পরে বাইরে এসে গহলৌত অনুগামী বিধায়কেরা জানান, রাজ্যপাল বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তার আগে মন্ত্রিসভাকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে বলেছেন। তা নিয়ে আলোচনা করতে রাতেই বৈঠকে বসেছে মন্ত্রিসভা।
এর মধ্যেই রাজভবন সূত্রে জানানো হল, বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে সোমবার বিধানসভা্র অধিবেশন ডাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। এত সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিসে অধিবেশন ডাকার কোনও যুক্তি নেই। সাধারণত ২১ দিন সময় দিতে হয়। রাজভবন সূত্রে এমন বক্তব্যের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতকে চিঠিও দেন রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র। সেই চিঠিতে গহলৌতের সকালের রাজভবন ঘেরাও সংক্রান্ত মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, ওই ধরনের মন্তব্য টিভি-তে জেনে তিনি ‘দুঃখিত এবং আহত’। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, গত কাল অধিবেশন ডাকার চিঠি নিয়ে আলোচনার আগেই এমন বিবৃতি! সে ক্ষেত্রে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গহলৌতের বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। একই সঙ্গে চিঠিতে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, ‘আমি আগে কখনও এমন শুনিনি এবং বিধায়ক দিয়ে রাজভবন ঘেরাও খুবই খারাপ পরম্পরা।’
আরও পড়ুন: মানবদেহে করোনার টিকার প্রথম পরীক্ষা হল এমসে
গহলৌত শিবিরের ঘেরাও-দাবি এবং পাল্টা রাজ্যপালের পত্রাঘাতে স্পষ্ট- রাজস্থানের পারদ এখনই কমার কোনও লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় সব পক্ষেরই নজর রাজস্থানের রাজভবনের দিকে। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুদুচেরি— একাধিক রাজ্যে রাজ্যপালকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানোর অভিযোগ বারবার উঠেছে। আজ গহলৌত অভিযোগ তুললেন, সরকারের আবেদন সত্ত্বেও রাজ্যপাল ‘উপরমহল থেকে চাপ’-এর মুখে বিধানসভার অধিবেশন ডাকছেন না। কিন্তু তিনি বিধানসভায় নিজের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে তৈরি।
আজই সচিন পাইলট শিবিরকে স্বস্তি দিয়ে রাজস্থান হাইকোর্ট পাইলট ও তাঁর অনুগামীদের বিধায়ক পদ খারিজ নিয়ে স্পিকারের নোটিসে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে সচিন-শিবির হাতে কিছুটা সময় পেল। তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ হবে কি না, তার জন্য এখন সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি অবধি অপেক্ষা করতে হবে গহলৌত তথা কংগ্রেসকে। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে গহলৌত বলেন, “বিধানসভার অধিবেশন ডাকার জন্য বৃহস্পতিবারই রাজ্যপালকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কেন তিনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না? সে কারণেই প্রতিবাদে বসেছি। আশা করব, কোনও চাপের মুখে না এসে তিনি অধিবেশন ডাকবেন।” একে কংগ্রেসের ‘গুণ্ডাগিরি’ আখ্যা দিয়ে বিজেপির দাবি, কেন্দ্র রাজ্যপালের নিরাপত্তায় সিআরপি পাঠাক।
গহলৌত মুখে যা-ই বলুন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসলে এতে গহলৌত-সচিন, দুই শিবিরেই লাভ। কারণ গহলৌতের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুতোর উপর ঝুলছে। আজ তিনি নিজেই মেনে নিয়েছেন, ২০০ আসনের বিধানসভায় তাঁর সঙ্গে ১০২ জন কংগ্রেস বিধায়ক রয়েছেন। তবে ১১ জন নির্দল ও একজন আরজেডি বিধায়ক তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। সিপিএমের দুই বিধায়ক এত দিন সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছেন। তবে সচিনের শিবির থেকে ৩ জন ফিরে আসবেন বলে গহলৌত শিবির আশা করছে। অন্য দিকে সচিনের শিবির তাঁদের সঙ্গে ৩০ জন বিধায়ক রয়েছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে মাত্র ১৯ জন রয়েছেন। বিজেপির নিজের বিধায়ক সংখ্যা ৭২। সঙ্গে ৩ জন লোকতান্ত্রিক পার্টির বিধায়ক। সংখ্যার এই হিসেবে দুই শিবিরই আরও ঘর গুছনোর সময় পেয়ে যাচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের অভিযোগ, রাজস্থান হাইকোর্ট ও রাজ্যপাল, দু’জনেই সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কারণ সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার চাইলে রাজ্যপালকে বিধানসভার অধিবেশন ডাকতেই হবে। বিধায়ক পদ খারিজের ক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্তের আগে পর্যন্ত আদালত তাতে নাক গলাতে পারবে না। সিব্বল বলেন, “হাইকোর্টের বিচারপতিরা যদি সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায় না মানেন, তা হলে আইনজীবীর কালো গাউন খুলে রেখে দিতে হয়।”
আজ রাজস্থান হাইকোর্টে সচিনের শিবির আর্জি জানিয়েছে, স্পিকারের নোটিসের বিরুদ্ধে তাঁদের মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারকেও অংশীদার করা হোক। তা হাইকোর্ট মেনে নিয়েছে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, সচিন মুখে বলছেন, তাঁর সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ নেই। কিন্তু তিনি আদালতেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মদত
এর মধ্যেই আজ কংগ্রেস ফের অভিযোগ করেছে, রাজস্থানে সরকার ফেলতে মরিয়া কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে হাতিয়ার করছে। রাজস্থানে ডামাডোল শুরুর পর থেকেই সে রাজ্যে ইডি-র সক্রিয়তা নিয়ে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এ বারে জয়পুরের যে ফেয়ারমন্ট হোটেলে গহলৌত অনুগামী কংগ্রেস বিধায়কদের রাখা হয়েছে, সেই হোটেলের মালিককে ইডি ইয়েস ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারিতে আজ নোটিস পাঠানোয় সেই সুর আরও চড়িয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy