বন্দুকের কাছে অসহায় হয়ে আশ্রয় দিতে হয়েছিল জঙ্গিদের, আর তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আজকে— এমনই দাবি কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার হরকিপোরা গ্রামের নাসিমা বানোর। পুলওয়ামা বিস্ফোরণে যুক্ত সন্দেহে মার্চে তাঁর স্বামী পির তারিক আহমেদ (৫০) এবং মেয়ে ইনশা জান (২৩)-কে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা)। আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে এনআইএ বলেছে, আধাসেনাদের গাড়ির বহরে গাড়িবোমা হামলাটি চালিয়েছিল পাকিস্তানের জইশ-ই-মহম্মদ। ৪০ জন জওয়ান মারা যান সে হামলায়। ১৯ জন সেই হামলার চক্রান্তে সরাসরি যুক্ত, যার মধ্যে নাসিমার স্বামী ও কন্যাও রয়েছেন। বস্তুত, ইনশা জানই চার্জশিটে উল্লিখিত এক মাত্র মহিলা।
লোকমুখে নাসিমা শুনেছেন এই চার্জশিটের কথা। বলেন, ‘‘গরিব মানুষ আমরা। ঘরে টেলিভিশন নেই, বড় ফোনও নেই। কী ভাবে জানব? লোকে শুনে এসে বলেছে।’’ এনআইএ যে জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর মেয়ের ছবি প্রকাশ করেছে, সামরিক পোশাক গায়ে অস্ত্র হাতে ছবিও রয়েছে তাতে— নাসিমা কি তা জানেন? মায়ের উত্তর, ‘‘তা-ও শুনেছি। তবে আমি সে সব দেখতে চাই না। জঙ্গিরা প্রায়ই ছবি তুলত। কেন তুলত, এখন বুঝতে পারছি।’’
মার্চে এনআইএ-র দল এসে নাসিমার বাড়ির সকলকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করে। নাসিমা বলেন, ‘‘কোনও কিছুই লুকোইনি আমরা। তারা যে আসত, আমি বলতাম পালাও, না হলে মিলিটারিকে খবর দেব। তারা বন্দুক দেখিয়ে জোর করত। বলত— আমরা যে তোমার বাড়িতে এসেছি, অন্যরা জানে। কোনও ক্ষতি হলে তোমরাও প্রাণে বাঁচবে না। সব বলেছি এনআইএ-কে। আমাদের এক আত্মীয়কে এর আগে জঙ্গিরা যে পুলিশের চর অপবাদ দিয়ে খুন করেছে, তা-ও বলেছি।’’ নাসিমা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের তিন দিন পরে ফের আসে এনআইএ। এ বার গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাঁর স্বামী ও মেয়েকে।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে নিহত সেনা, জম্মুতে মিলল সুড়ঙ্গ
চার্জশিটে এনআইএ দাবি করেছে, ২০১৮-০১৯-এ অন্তত ১৫ বার জঙ্গিরা এসে আশ্রয় নিয়েছে নাসিমাদের বাড়িতে। গৃহকর্তা পির তারিক আহমেদ তাদের আতিথ্য দিয়েছেন। হামলার প্রধান অভিযুক্ত পাকিস্তানি নাগরিক জইশ-জঙ্গি মহম্মদ উমর ফারুকের সঙ্গে ইনশা জানের যে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল, তাদের মোবাইল ফোনের মেসেজ ঘেঁটে জানা গিয়েছে। এই ফারুকই গাড়িবোমাটি বানিয়েছিল। পরে অন্য একটি ঘটনায় সেনাদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মারা যায় ফারুক। ২৪ বছরের এই তরুণের বাবা ইব্রাহিম রাঠের ছিল ১৯৯৯-এ এয়ার ইন্ডিয়ার কাঠমান্ডু-দিল্লি বিমান ছিনতাইকারীদের এক জন। ফারুকের সঙ্গে ইনশার ছবিও প্রকাশ করেছে এনআইএ।
তবে এ সব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ নাসিমা। তাঁর দাবি, পরিস্থিতির শিকার তাঁরা। গ্রামের প্রান্তে তাঁদের ছোট্ট বাড়ি। আশপাশে বাড়িঘরও তেমন ছিল না তখন। বাড়ি ঘিরে পাঁচিল না-থাকায় যে কেউ এসে দরজা ধাক্কা দিত। সেই কারণেই এই বাড়ি নজরে পড়ে জঙ্গিদের। বন্দুকের কাছে অসহায় হয়ে আতিথ্য দিত হত তাদের। আজ তারই ফল ভোগ করতে হচ্ছে তাঁদের।