Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
National News

অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন, কেউ বলছেন অন্যায়, তেলঙ্গানা এনকাউন্টার নিয়ে তোলপাড় দেশ

দেশ জুড়ে প্রশংসার বন্যা। তবে এ ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে সাবাশির স্রোতের মধ্যেও। আইনরক্ষদের হাতে বিচারাধীন বন্দিদের হত্যাকেই শেষে কি বিচার ভেবে বসলেন দেশের জনতা! এ দিন পুলিশকে লক্ষ্য করে পুষ্পবৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকরই প্রশ্ন, গোটা ঘটনায় কি বিচারব্যবস্থার অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে না?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:৪১
Share: Save:

ভোররাতের তেলঙ্গানা এনকাউন্টারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশ জুড়ে প্রশংসার বন্যা। তবে এ ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে সাবাশির স্রোতের মধ্যেও। আইনরক্ষদের হাতে বিচারাধীন বন্দিদের হত্যাকেই শেষে কি বিচার ভেবে বসলেন দেশের জনতা! এ দিন পুলিশকে লক্ষ্য করে পুষ্পবৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকরই প্রশ্ন, গোটা ঘটনায় কি বিচারব্যবস্থার অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে না?

শুক্রবার ভোররাতে পুলিশি এনকাউন্টারে গণধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্তদের নিহত হওয়ার ঘটনা এ দিন সাতসকালে শোনার পর নিজের স্বস্তি চেপে রাখতে পারেননি নির্যাতিতার বাবা। তাঁর মতে, এই ঘটনার পর মেয়ের আত্মা শান্তি পেল। তিনি বলেন, ‘‘দশ দিন হল আমার মেয়ে মারা গিয়েছে। পুলিশ এবং সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। মেয়ের আত্মা এখন অবশ্যই শান্তি পেয়েছে।’’

২৭ নভেম্বর হায়দরাবাদের শামশাবাদে এক তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুন করে ওই চার অভিযুক্ত। এর পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সাদনগরে পুড়িয়ে ফেলা হয় ওই তরুণীর দেহ। এ দিন গভীর রাতে ওই ঘটনার পুনর্নিমাণ করতে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, সে সময় তাঁদের অস্ত্র ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তেরা। আত্মরক্ষার্থে তাদের গুলি করে মারা হয়।

এনকাউন্টারের খবর শোনার পর নির্যাতিতার বাবার মতোই স্বস্তি পেয়েছেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী। এ দিন তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় যেন তাঁর ক্ষতে মলমের প্রলেপ লেগেছে। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে মেয়ে জ্যোতি সিংহকে গণধর্ষণ করে ছ’জন। সে মাসের শেষে হাসপাতালে মৃত্য হয় জ্যোতির। সাত বছর আগের সেই ক্ষতই বয়ে বেড়াচ্ছেন জ্যোতির মা আশা দেবী। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ যে ওদের এ ভাবে শাস্তি দিয়েছে, তাতে আমি অত্যত আনন্দিত। পুলিশকর্মীরা খুব ভাল করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সে দাবি জানাচ্ছি।’’

তবে নির্যাতিতার বাবা অথবা নির্ভয়ার মায়ের সঙ্গে সহমত নন অনেকেই। এই ঘটনার পর পুলিশের নিন্দা করে বিজেপি সাংসদ মেনকা গাঁধী বলেন,‘‘যা হয়েছে তা এই দেশের জন্য ভয়ানক।... চাইলেই যাকে খুশি এ ভাবে মারতে পারেন না আপনি। আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। আদালতে তো ওদের (অভিযুক্তদের) ফাঁসিই হত।’’

আরও পড়ুন: ‘ক্ষতের উপর মলম লাগল’, হায়দরাবাদ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের মৃত্যুতে বললেন নির্ভয়ার মা

তবে মেনকা গাঁধীর দলেরই আর এক সাংসদ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করেছেন। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এতে মেয়েটির আত্মা শান্তি পেয়েছে। এত বড় ও জঘণ্য ঘটনার পর ওরা পালানোর চেষ্টা করেছে। তাতে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।’’ যদিও লকেট চট্টোপাধ্যায় মতোই পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করলেও গোটা বিষয়টি যে তদন্তসাপেক্ষ সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা তো তদন্তাধীন বিষয়। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি চেয়েছিলাম। তবে ঘটনার সময় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ তা তারিফযোগ্য।’’

আরও পড়ুন: ভোররাতে পুলিশ এনকাউন্টার, তেলঙ্গানায় গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় চার অভিযুক্তের মৃত্যু

রেখা শর্মার মতোই সাবধানী মন্তব্য কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা যদি পালানোর চেষ্টা করে এবং পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে, তা হলে ঠিকই আছে। তবে এই মুহূর্তে ঘটনাটি যে ভাবে ঘটেছে, তেমন ভাবেই দেখা উচিত। কারণ এর পর তো গোটা ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত হবে।’’

এ দিনের ঘটনার পর তেলঙ্গানা পুলিশের প্রশংসা করেছেন বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। তাঁর মতে, ‘‘যে সমস্ত পুলিশকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সকলেই প্রশংসার যোগ্য। আমি নিশ্চিত অন্য রাজ্যের পুলিশও এমন কোনও উপায় বার করবেন, যাতে অপরাধীদের উচিত শিক্ষা মেলে।’’

বিরোধী দলের একাংশের মতে সায় নেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর মতে, ‘‘এ ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া যায় না। দ্রুত চার্জশিট দিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’

সমাজের একাংশের সমালোচনার পাশাপাশি বিপুল প্রশংসাও পাচ্ছে এ দিনের ঘটনা। এ দিনের ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর তেলঙ্গানা পুলিশের উপর পুষ্পবৃষ্টির করেছেন অনেকে। তবে একাংশের মতে, এই উল্লাসের পিছনে রয়েছে বিচারব্যবস্থার প্রতি এক প্রকার অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। অপরাধের পর তা বিচারাধীন প্রক্রিয়াটি এতটাই দীর্ঘায়িত হয় যে বিচারব্যবস্থার প্রতিই আস্থা হারিয়ে ফেলেন অনেকে। এতে যেন বিচারব্যবস্থার অস্তিত্বই চ্যালেঞ্জে মুখে পড়েছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে খুনের ঘটনা কখনও মহিলাদের সুরক্ষা প্রশ্নের সমাধান হতে পারে না।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘অপরাধীদের মেরে ফেলাটা সোজা। তবে মানুষকে এমন ভাবে শিক্ষিত করা উচিত যাতে তাঁরা কখনই অপরাধী হয়ে উঠবেন না, এটা একেবারেই সোজা নয়। আমরা সোজা পন্থাটাই পছন্দ করি।’’

আরও পড়ুন: ‘মেয়ের আত্মা শান্তি পেল’, এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তের মৃত্যুর পর বললেন ধর্ষিতা চিকিত্সকের বাবা

লোকসভার সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের মতে গোটা ঘটনাটি আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে একে সমর্থন করছি। তবে বিষয়টি আরও জানা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, অপরাধীরা সশস্ত্র থাকায় পুলিশ হয়তো স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গুলি চালিয়েছে। ঘটনাটা আসলে কী ঘটেছিল তা যত ক্ষণ প্রকাশ্যে না আসছে, তত ক্ষণ আমাদের এ নিয়ে নিন্দা করা উচিত নয়। তবে বিচার ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে খুন সামাজিক আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy