ফের ক্যামেরার সামনে চোখে জল প্রধানমন্ত্রীর। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
“আমি ভগবান দেখিনি, কিন্তু ভগবানের রূপে আপনাকে পেয়েছি। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।” মাত্র তিনটি বাক্য, হয়তো অনেকেই তাঁর প্রিয়জনের উদ্দেশে বলেছেন। কিন্তু এই কথাগুলি শুনে চোখের জল বাঁধ মানল না দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও, বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। কোনও রকমে নিজের আবেগ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন ক্যামেরার সামনে। শনিবার ফের চোখে জল দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীর। এর আগেও একাধিক বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আবেগতাড়িত হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনৌষধি পরিযোজনা’-য় কেমন ভাবে দেশের নানান প্রান্তের মানুষ উপকৃত হয়েছেন, জীবন বেঁচে গিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা, অনুভূতির কথা শুনছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা সরাসরি দেখতে পাচ্ছিলেন। যে আবেগ এতদিন মনের মধ্যে চাপা ছিল, প্রধানমন্ত্রীকে এক রকম সামনে পেয়ে তা আর বাঁধ মানেনি। দেশের মানুষের সেই আবেগে ভেসে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর চোখও।
এদিন উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ আসে দীপা শাহ নামে এক মহিলার। দীপা বলে চলেন, ২০১১ সালে তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। ফলে চলাফেরা এমনকি, কথা বলাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রয়োজন মতো চিকিত্সাও করাতে পারছিলেন না। কারণ ওষুধের দাম ছিল নাগালের বাইরে। মাসে তখন প্রায় পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হত। যা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু জনৌষধি প্রকল্প আসার পর তাঁর প্রয়োজনীয় ওষুধ এখন দেড় হাজার টাকা কিনতে পারেন। আজ তিনি অনেক সুস্থ আছেন। এর পরই কান্না-ভেজা গলায় দীপা বলেন, “আমি ঈশ্বরকে দেখিনি। কিন্তু ঈশ্বরের রূপে আপনাকে দেখেছি।” বার বার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে থাকেন দীপা।
আরও পড়ুন: শৃঙ্গ কেটে নিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা, তিলে তিলে মরছে রক্তাক্ত গন্ডার
দীপার এই আবেগতাড়িত কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারেননি প্রধানমন্ত্রীও। গলা বুজে আসে, ঠোঁট কাঁপতে থাকে, চোখের জল গড়িয়ে না পড়লেও বোঝা যায়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকেন তিনি। তারপর অনেক কষ্টে নিজের আবেগকে সামনে নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
#WATCH Prime Minister Narendra Modi gets emotional after Pradhan Mantri Bhartiya Janaushadi Pariyojana beneficiary Deepa Shah breaks down during interaction with PM. pic.twitter.com/Ihs2kRvkaI
— ANI (@ANI) March 7, 2020
তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে কেঁদে ফেলতে দেখা গিয়েছে। ২০১৪ সালে এনডিএ জোট লোকসভা ভোটে জেতার পর বিজেপির সংসদীয় নেতা নির্বাচন করা হয় নরেন্দ্র মোদীকে। যা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগের ধাপ। সংসদ ভবনে দলের সেই অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেন লালকৃষ্ণ আডবানি সহ অন্য নেতারা। এর পর বক্তব্য রাখার পালা মোদীর। পোডিয়ামে উঠে আর আবেগ চেপে রাখতে পারেননি গুজরাতের চার বারের মুখ্যমন্ত্রী, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। মা-রূপী দেশের সেবার করার এই সুযোগ তাঁকে দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন তিনি।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
এমনকি, ২০১৫ সালে ফেসবুকের হেড কোয়ার্টারের টাউন হলে ফেসবুক কর্তা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে গিয়েও এমন অবস্থা হয়েছিল। সেখানেও ধরে রাখতে পারেননি নিজের বজ্রকঠিন ভাবমুর্তি। কথা প্রসঙ্গে মোদীর প্রায় ৯০ বছর বয়সি মায়ের কথা আসে। কী ভাবে কষ্ট করে মা তাঁদের বড় করেছেন, সেই কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে তাঁর। কথা বলার জন্য বার বার জল খেতে দেখা যায়, অনেক কষ্টে নিজের আবেগ সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যান।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
শুধু মা-ই নয়, দেশের পুলিশ কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা মনে করেও প্রধানমন্ত্রী এক রমকম কেঁদে ফেলেন। ২০১৮ সালে জাতীয় পুলিশ দিবসে ন্যাশনাল পুলিশ মেমোরিয়ালের উদ্বোধনে বক্তব্য রাখার সময় তাঁকে আচ্ছন্ন করে আবেগের মেঘ।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
গত বছরও প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলতে দেখা গিয়েছে। দীর্ঘদিনের সহকর্মী, উত্থান-পতন, লড়াইয়ের সঙ্গী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুর পর তাঁর বাড়িতে যান মোদী। সুষমা স্বরাজের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেই এক প্রকার ভেঙে পড়ছিলেন। ধরে রাখতে পারেননি চোখের জল।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
এমন একাধিক বার ক্যামেরার সামনে চোখে জল ফেলার ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচকরা, প্রচারের অস্ত্র হিসেবেই দেখেন। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠরা বার বার মনে করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি একজন রক্তমাংসের মানুষ। প্রিয়জনের কথা উঠলে, মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা সামনে এলে তিনিও আবেগ ধরে রাখতে পারবেন না। সেটা স্বাভাবিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy