Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Menstruation

ঋতুকালীন সময়ে মহিলাদের সুবিধায় প্রথম ‘পিরিয়ড রুম’, চালু ঠাণেতে

ঠাণের ওয়াগল এস্টেটের শান্তিনগর এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গণ শৌচালয়টি তৈরি করেছে ঠাণে পুরসভা।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৬
Share: Save:

ঋতুকালীন সময়ে মহিলাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিশেষ ধরনের সাধারণ শৌচাগার চালু হল মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে। দেওয়ালে উজ্জ্বল রঙে আঁকা ছটফটে মেয়েদের ছবি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নানা পরামর্শ দেওয়া সেখানে। নাম ‘পিয়িরড রুম’। ঝকঝকে সেই শৌচালয়ে জেট-স্প্রে, হাত ধোওয়ার সাবান, টয়লেট পেপার রাখার জায়গা, আবর্জনাধার-সহ আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে। ভবিষ্যতে রাজ্যেও এমন শৌচালয় গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

ঠাণের ওয়াগল এস্টেটের শান্তিনগর এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গণ শৌচালয়টি তৈরি করেছে ঠাণে পুরসভা। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মূলত ঘিঞ্জি বস্তিতে যাঁরা থাকেন, সেই মহিলাদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋতুকালীন সময়ে মহিলাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। ওই সময়ে আরও বেশি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। অথচ বস্তির বেশির ভাগ বাড়িতে নিজস্ব শৌচাগার থাকে না। জলের সমস্যা তো আছেই। ওই সময়ে মহল্লার সাধারণ শৌচাগার ব্যবহারে মহিলারা আরও অসুবিধায় পড়েন। অনেকে রোগেও ভোগেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে তাই প্রশাসন এই উদ্যোগ নিয়েছে। ওই কর্তা বলেছেন, ‘‘এই ধরনের একটি শৌচাগার গড়তে ৪৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আগামী দিনে শহরের ১২০টি সাধারণ শৌচালয়েই এই পরিষেবা গড়ে তোলার ভাবনা রয়েছে প্রশাসনের।’’

এ বিষয়ে কী ভাবছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন? কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য স্বপন সমাদ্দার রবিবার জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ করেছে। যেমন, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুরসভা পরিচালিত ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ শৌচালয়গুলিতে ভেন্ডার মেশিন রাখা আছে। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো স্যানিটারি ন্যাপকিন নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কোথাও কোথাও মহিলাদের জন্য আলাদা ঘরও রয়েছে। ভবিষ্যতে মহারাষ্ট্রের ধাঁচে ‘পিরিয়ড রুম’ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বপনবাবু।

আরও পড়ুন: #মিটু কাঁটায় বিদ্ধ টুম্পা খ্যাত অভিনেতা

আরও পড়ুন: রিলায়্যান্সের চুক্তি চাষের চুক্তি কর্নাটকে, দানা বাঁধছে বিতর্ক

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেষ্টপুর থেকে কলেজ স্ট্রিটের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হয়। সুচেতনা জানালেন, প্রেসিডেন্সিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য ভেন্ডিং মেশিন আছে।

ব্যবহৃত ন্যাপকিন পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। টয়লেট পরিচ্ছন্ন। কিন্তু রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যায়। তিনি বললেন, ‘‘এখানে রাস্তার ধারের সাধারণ শৌচালয়গুলিতে যদি আলাদা করে পিরিয়ড রুম তৈরি করে দেওয়া হয়, তা হলে অনেকেরই সুবিধা হয়। বিষয়টি খুব স্বাস্থ্যকরও।’’ রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী মহারাষ্ট্রের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। আমাদের এখানেও সাধারণ শৌচাগারে যদি আলাদা পিরিয়ড রুম করা হয়, তা হলে খুবই ভাল হয়।’’

শহরের বিভিন্ন সাধারণ শৌচালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার বিষয়ে গত কয়েক বছর ধরে উদ্যোগী হয়েছেন কলকাতার ‘প্যাড ম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়। ঠাণের ‘পিরিয়ড রুম’ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘ওটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে কলকাতার শৌচালয়ে এমন পিরিয়ড রুম শুরু করতে গেলে আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসনকেও উদ্যোগী হতে হবে। তা না-হলে রুম চালু হলেও সেটির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। জেট স্প্রে, টয়লেট পেপার চুরিও হতে পারে। সে বিষয়েও শৌচালয়ের রক্ষীকে খেয়াল রাখতে হবে।’’

শুধু প্রশাসনিক স্তরে নয়, এ রাজ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এগিয়ে এসেছেন অনেকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা কলেজের অধ্যক্ষা রুম্পা দাস জানিয়েছেন, তাঁর কলেজের এক শিক্ষিকা নিজের শাশুড়ির নামে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন কলেজকে দান করেছেন। কিন্তু ব্যবহৃত ন্যাপকিন পোড়ানোর জন্য ইনসিনেরেটর যন্ত্র তাঁদের কলেজে বসেনি। তবে টয়লেট যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। রুম্পাদেবী বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আমাদেরও এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। রাস্তাঘাটে ঋতুকালীন সময়ে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা মেয়েরাই একমাত্র জানে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy