পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি গুড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
ফের পাক সীমান্তের জঙ্গি ঘাঁটিতে বড়সড় হামলা চালাল ভারত। তবে এ বার সীমান্ত পেরিয়ে নয়, নিয়ন্ত্রণরেখার অভ্যন্তরে থেকেই হামলা চালিয়ে সাফল্য পেল ভারতীয় সেনা। টংধর সেক্টরের ওপারে নীলম ভ্যালিতে জঙ্গিদের ৩টি লঞ্চ প্যাড গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও তার আঁচ পড়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় উপ-রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠাল পাকিস্তান। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেনাপ্রধান বিপিন রওয়ত জানিয়েছেন, ৩টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। মারা গিয়েছে ৭-১০ জন পাক সেনা।
শনিবার রাত থেকেই জম্মুর কুপওয়ারা জেলার টংধর সেক্টরে গোলাগুলি বিনিময়। প্রথমে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে গোলা ছুড়তে শুরু করে পাক সেনা। জবাবে ভারতও ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে। পাক সেনার গুলিতে দুই ভারতীয় সেনা জওয়ান ও এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই আরও জোরালো আক্রমণ শুরু করে ভারত। কামান, মর্টার দিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নীলম ভ্যালিতে চার-পাঁচটি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারত।অন্তত পাঁচ পাক সেনা জওয়ানের মৃত্যুর খবর পেয়েছে ভারতীয় সেনা। যদিও অসমর্থিত সূত্রে খবর, জঙ্গি ও সেনা জওয়ান মিলিয়ে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি।
এ দিন সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বিপিন রওয়ত জানান, ‘‘গতকাল রাতে টংধর সেক্টরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে জঙ্গিরা। আমরা বাধা দিই। তার পর আমাদের পোস্ট লক্ষ্য করে গোলাগুলি চালায় পাকিস্তান। তাতে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ভারতে ঢুকতে পারেনি জঙ্গিরা।’’
গুলি বিনিময়ের পরেই এক দিকে যেমন নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বেড়েছে, তেমনই দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও তার ছাপ পড়েছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় উপ-রাষ্ট্রদূত গৌরব অহলুওয়ালিয়াকে ডেকে পাঠায় পাক বিদেশমন্ত্রক। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে সীমান্তের উত্তেজনার কথা জানানো হয়েছে উপ-রাষ্ট্রদূতকে।
অন্য দিকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ঘটনার পরেই সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। গোটা পরিস্থিতির খবর নেন তিনি। একই সঙ্গে প্রতি মূহূর্তের আপডেট তাঁকে জানানোর জন্য সেনা প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজনাথ।
আরও পডু়ন: ভারতীয় সেনার বড় প্রত্যাঘাত, অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস, হতাহত অনেক
কূটনৈতিক এই টানাপড়েনের পাশাপাশি দুই দেশের সেনার মধ্যেও চলছে চাপানউতোর। পাক সেনার দাবি, ভারতের অন্তত ন’জন সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আর তাদের মাত্র এক জন সেনা জওয়ান এবং তিন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে। দু’পক্ষই বিনা প্ররোচনায় অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি ছোড়ার অভিযোগ তুলেছে একে অন্যের বিরুদ্ধে।
অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে ভারতীয় পোস্ট লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুড়ে সেনাকে ব্যস্ত রাখা এবং সেই সুযোগে জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা পাক সেনার বরাবরের কৌশল। শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার ভোর রাত পর্যন্ত পাকিস্তান সেই চেষ্টাই চালিয়েছিল বলে ভারতের দাবি। জঙ্গিদের গতিবিধি নজরে আসতেই লঞ্চ প্যাডগুলি লক্ষ্য করে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে ভারত। কামান, মর্টার-শেলের আঘাতে জঙ্গি ডেরাগুলি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর। যদিও পাকিস্তান সে কথা মানতে নারাজ।
আরও পড়ুন: কে করল গুলি, কোথা থেকে? প্রিন্স-বিশালের বয়ানে বাড়ছে রহস্য, উঠে আসছে আরও প্রশ্ন
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরি সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হানার পরে আকাশপথে পাক সীমান্তে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। আবার এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর এয়ার স্ট্রাইকে বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। রবিবার ভোর রাতে কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি। শুধু এ বারের হামলা সীমান্তের এ পার থেকে। সেনা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও এয়ার স্ট্রাইকের পর সাম্প্রতিক অতীতে রবিবারই নিয়ন্ত্রণরেখায় সবচেয়ে বড় হামলা চালাল ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy