Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কোন রাজ্য কোন ভাষায় পড়াবে, কেন্দ্র ঠিক করার কে? হিন্দি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা

শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তাই জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বৃহত্তর রূপরেখা ঠিক করে দেওয়ার অধিকার কেন্দ্রের হাতে। কিন্তু কোনও রাজ্য তাদের স্কুলে কোন ভাষায় পড়াবে, তা ঠিক করার অধিকার কেন্দ্রের আদৌ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায় হিন্দি নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে।

শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তাই জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বৃহত্তর রূপরেখা ঠিক করে দেওয়ার অধিকার কেন্দ্রের হাতে। কিন্তু কোনও রাজ্য তাদের স্কুলে কোন ভাষায় পড়াবে, তা ঠিক করার অধিকার কেন্দ্রের আদৌ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। কর্নাটকের শিক্ষাবিদ অশ্বিন বা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ে‌র মতে, এই সুপারিশের অর্থই হল রাজ্যগুলির উপরে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।

হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব দক্ষিণ ভারত। ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত কাল যে জাতীয় খসড়া শিক্ষা নীতি পেশ করেছে, তাতে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে স্থানীয় ভাষা এবং ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি শেখারও সুপারিশ করা হয়েছে। এ নিয়েই সরব তামিলনাড়ু। আজ সুর চড়িয়েছে কর্নাটকও। কন্নড় ভাষা সংগঠন ‘কন্নড় গ্রহকারা কুটা’র অন্যতম কর্তা গণেশ চেতনের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই পরিকল্পিত ভাবে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে দক্ষিণে। ওই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই খসড়া নীতিতে বিষয়টি রাখা হয়েছে।’’

বিজেপি বিরোধী অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বক্তব্য হল, দীর্ঘদিন ধরেই সঙ্ঘ পরিবার গোটা দেশে ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ নীতি প্রণয়নের পক্ষে। সঙ্ঘ পরিবারের অন্যতম লক্ষ্য হল, গোটা দেশের জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে হিন্দিকে অভিন্ন ভাষা হিসেবে তুলে ধরা। দেশের প্রত্যেকটি পড়ুয়া যাতে হিন্দি শিখতে বাধ্য হয়, তার জন্যই কৌশলে ওই নীতি আনা হয়েছে বলে মত কর্নাটকের যুব কংগ্রেস নেতা শ্রীবৎসের। তাঁর পাল্টা প্রস্তাব, ‘‘কেবল দক্ষিণ ভারতের উপর হিন্দি না চাপিয়ে কেন্দ্রের উচিত হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির স্কুলে অন্তত একটি দ্রাবিড় ভাষা শেখানো।’’ নাসার প্রাক্তন বিজ্ঞানী তথা শিক্ষাবিদ অশ্বিন মহেশের কথায়, ‘‘কেন্দ্রের নিয়োগ করা কমিটি রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়ে বলছে, তাদের কী করণীয়। অথচ সংবিধান অনুসারে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধু রাজ্যের।’’

মুখ খুলেছে তৃণমূলও। আজ পার্থবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। কিন্তু রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই এক তরফা ভাবে ওই শিক্ষানীতি তৈরি করেছে কেন্দ্র। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই নীতি মানে না। রাজ্য ওই নীতির বিরোধিতা করবে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, ডিএমকে, বিজেডির মতো দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে এ নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সিপিএম পলিটবুরোও আজ

এক বিবৃতিতে ওই নীতির সমালোচনা করে জানিয়েছে, এ ভাবে কোনও ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া দেশের ঐক্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এর বিরুদ্ধে পথে নামার ডাক দিয়েছে দল। ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের হুঁশিয়ারি, ‘‘আমাদের রক্তে হিন্দি নেই। তাই তামিলনাডুতে হিন্দি চালু করার অর্থই হল, মৌচাকে ঢিল মারা।’’

দ্বিতীয় মোদী সরকারের শুরুতেই এমন বিতর্কে অস্বস্তিতে কেন্দ্র। গত কালই এক বিবৃতিতে তারা এ নিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, এটি খসড়া রিপোর্ট। দেশের মানুষের মতামত আসার পরে তা নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে। আশ্বাস দিয়েছিলেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন এবং বর্তমান দুই মন্ত্রী। আজ উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর, বেঙ্গালুরুর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া একই সুরে বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত করেন। গৌড়া বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রথম বৈঠকেই জানিয়েছেন, আঞ্চলিক ভাষা ও আঞ্চলিক সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাই মনে হয় না, এ নিয়ে কোনও সংশয় থাকতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hindi HRD Ministry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy