সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কংগ্রেসের চার জন মুখ্যমন্ত্রী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের তিন জন মুখ্যমন্ত্রী। সনিয়া গাঁধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক থেকে আজ ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর চেষ্টা শুরু হল। শুরুর দিনেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেন মমতা। উদ্ধব ঠাকরে-সহ বাকি মুখ্যমন্ত্রীরাও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বিরোধী ঐক্যের উপরে জোর দেন বৈঠকে।
মুখ্যমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকের শুরুতে সনিয়া বলেছিলেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তাই সমন্বয়ের জন্য কথাবার্তা বলা দরকার বলে তাঁর মনে হয়েছে। সেখান থেকে আক্রমণের সুর চড়িয়ে মমতা বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের এককাট্টা হওয়ার ডাক দেন। তাঁর বক্তব্য, মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে সবাই মিলে সরব হতে হবে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেই যে কেন্দ্র তার নানা ‘এজেন্সি’ দিয়ে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করবে, তা-ও মনে করিয়ে দেন তিনি। মমতা বলেন, “আমাদের যদি ওরা গ্রেফতার করতে চায়, আমরা গ্রেফতার হব। আমাদের ঝুঁকি নিতেই হবে।”
বৈঠকের পরে মমতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীরা সবাই বলছেন, মানুষের কোনও বিষয় তুলে ধরলেই বিভাজন তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আবার এজেন্সিকে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয় পেলে তো দেশে একটাই রাজনৈতিক দল পড়ে থাকবে। আমাদের বাগে আনতে কখনও কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কখনও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এটা হচ্ছে। এই যে পদ্ধতিতে দেশ চলছে, তার বিরোধিতা করছি।”
আরও পড়ুন: মমতার মতেই সায়, নিট-আর্জি কোর্টে
আরও পড়ুন: সনিয়া-মমতার সখ্য স্পষ্ট বৈঠক জুড়েই
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বক্তব্য, “আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা লড়াই করব, না ভয় পাব?” সনিয়ার কাছে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের অনুযোগ, বিপক্ষ শিবিরের স্বর দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর পর রাজস্থান, পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়, পুদুচেরির কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরাও কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন।
দলের মধ্যে সবে ঝড় সামলে ওঠা সনিয়া একা মুখ্যমন্ত্রীদের এই বৈঠক ডাকেননি। আহ্বায়ক হিসেবে মমতাকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, নিজের দলে অসন্তোষের জেরে সনিয়া হয়তো নিশ্চিত ছিলেন না, তাঁর আমন্ত্রণে কত জন সাড়া দেবেন। তাই মমতাকেও সামনে রেখেছিলেন। বৈঠকে তেমন সাড়া না-মিললে মমতাকেও দায় নিতে হত। কিন্তু মমতা সেই সুযোগ যথাসম্ভব কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন এ দিন।
মমতা ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগেও বিরোধী জোটকে এককাট্টা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা দানা বাঁধেনি। এ বারও তা কতখানি দানা বাঁধবে কিংবা ২০২৪-এ ভোটের সময় পর্যন্ত কতটা টিকে থাকবে— এখনই তা বলা কঠিন। তবে বিরোধী শিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের পরে জোটকে দলীয় স্তরে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। পাশাপাশি, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মানছেন, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী জোটের মুখ হয়ে উঠতে পারলে ২০২১-এ বাংলার বিধানসভা ভোটেও মমতা এর ফায়দা পেতে পারেন। ডাক পেয়েও এ দিনের বৈঠকে যাননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। প্রত্যাশা মতোই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির শরিক এডিএমকে নেতা ই কে পলানিস্বামী হাজির হননি। বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন তেলঙ্গানার কে সি রাও, অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহন রেড্ডি, ওড়িশার নবীন পট্টনায়কেরা। কেরলে কংগ্রেসের নিশানায় থাকা বাম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও ছিলেন না। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা বলছেন, শেষ বেলায় উদ্ধব যোগ দেওয়ায় বৈঠকের গুরুত্ব বেড়েছে। সর্বোপরি এত দিন কংগ্রেসের ডাকা বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূল নেত্রী যে ভাবে সনিয়ার ডাকে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, তা কংগ্রেস সভানেত্রীর কৃতিত্ব হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের মতে, সনিয়াই যে বিরোধী জোটকে এককাট্টা করার ক্ষমতা রাখেন তা ফের প্রমাণিত।
বৈঠকে এ দিন কেউই সরাসরি ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের প্রসঙ্গ তোলেননি। তবে বিরোধী ঐক্যের জন্য বারবার এই ধরনের বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন উদ্ধব। তাঁর মতে, “কোনও সমস্যা এলে তবে আমরা একে অন্যের কাছে ছুটছি। আমাদের একসঙ্গে হওয়ার জন্য সমস্যার কেন দরকার! আমরা এককাট্টা থাকলেই বরং সমস্যা আসবে না।” হেমন্তের মতে, “বিরোধীদের কণ্ঠ দুর্বল হয়ে পড়েছে। না-হলে মোদী সরকার এত গাফিলতি করে রেখেছে যে, বিরোধীরা ঠিক মতো সরব হলে কেন্দ্র অস্বস্তিতে পড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy