চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদী (সেপ্টেম্বর ২০১৪)। —ফাইল চিত্র।
প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরেই বিদেশনীতির প্রশ্নে নতুন কিছু করে দেখাতে উদ্যোগী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে, সাবরমতীর কাছে দোলনায় দুলেছিলেন চিনের প্রবল প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে। ২০১৮ সালে উহানের মনোরম হ্রদের ধারে কূটনৈতিক আড্ডায় মেতেছিলেন এই চিনা সর্বাধিনায়কের সঙ্গেই। মাত্র আট মাস আগে মমল্লপুরমের ঐতিহাসিক আবহে নদীবক্ষে আলোচনা হয়েছিল মোদী-শি-র।
পূর্ব লাদাখে গত দু’মাস ধরে চিনের নিরবচ্ছিন্ন চাপের মুখে বিরোধীরা ধারাবাহিক ভাবেই প্রশ্ন তুলছিলেন, এত করে লাভটা কী হল? আর আজ লাল ফৌজের হাতে অন্তত ২০ জন সেনার মৃত্যুর পরে (সাড়ে চার দশক পরে চিনের সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু) ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রশ্নটা আরও বাড়ছে। এমন অভিযোগও উঠছে, যতটা গর্জে ওঠার কথা ছিল ‘ছাপান্ন ইঞ্চি’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রীর, তার ধার-কাছ দিয়েও গেল না তাঁর সরকার। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘৫ মে-র পর থেকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব। বিদেশি সেনা ভূখণ্ড দখল করে বসে রয়েছে, অথচ দেশের প্রধান চুপ, অন্য কোনও দেশে এমন হত বলে ভাবা যায়?’’ শুধু তা-ই নয়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধীরা যখন ৫ মে-র পর থেকে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, চিন ভারতের ভূখণ্ড কতটা দখল করেছে, সরকার টুঁ শব্দ করেনি। বরং এক গুরুত্বপূর্ণ, বর্ষীয়ান মন্ত্রী বেফাঁস কিছু বলে ফেলে আবার তা প্রত্যাহার করেন। অথচ আজ বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, চিন নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে। তা হলে এত দিন কেন তা স্বীকার করা হয়নি?
বিরোধীরা এ প্রশ্নও তুলেছেন, এত জন সেনার মৃত্যুর পরে বিদেশ মন্ত্রক কেন প্রায় ২০ ঘণ্টা বাদে প্রথম বিবৃতি দিল এবং তা-ও সাংবাদিকদের অবিরল প্রশ্নের পর! যে বিবৃতিতে বলা হল, ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার স্থিতাবস্থার পরিবর্তন করার লক্ষ্যে চিন সচেষ্ট হয় ১৫ জুন রাতে। তার ফলাফল, হিংসাত্মক সংঘর্ষ। চিন দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের তৈরি চুক্তি পালন করলে দু’পক্ষেরই প্রাণহানি এড়ানো যেত।’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবের মন্তব্য, ‘‘সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রেখে আলোচনার মাধ্যমে জট ছাড়াতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। ভারতের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, যে প্রাণহানি হয়েছে, তার তুলনায় কেন্দ্রের পাল্টা জবাব অনেকটাই নরম সুরে বাঁধা।
গাঁধী আশ্রমে চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদী (সেপ্টেম্বর ২০১৪)। ফাইল চিত্র
অন্য দিকে, বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ নিহত জওয়ানদের ‘দেশভক্ত’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘‘এখন উত্তেজনা প্রশমিত করাই আমাদের লক্ষ্য। যে রাস্তাটি তৈরি হচ্ছে সীমান্তে তার কাজ চালু রাখাও কর্তব্য।’’
আরও পড়ুন: রাতের সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত, চিনের তরফেও হতাহত ৪৩
আরও পড়ুন: লাদাখ থেকে যা খবর পাচ্ছি... ।। লিখলেন কর্নেল সৌমিত্র রায়
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী থেকে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি— সবাই চিনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ভারতকে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় দেখতে চেয়ে মুখ খুলেছেন। সনিয়া গাঁধী ও রাহুল শোকজ্ঞাপন করেছেন নিহত সেনাদের জন্য। অধীরের কথায়, ‘‘প্রত্যাঘাত, প্রত্যাঘাত, প্রত্যাঘাত! চিনের এই জঘন্য আক্রমণের এটাই বদলা হওয়া উচিত।’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘গত রাতে আমাদের সেনারা নিহত হলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বিবৃতি দিল দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে। কিছু ক্ষণ পরেই সেটি বদলানো হল। এ সব কেন হল, জবাব চাই।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘সরকারের উচিত, ঠিক কী হয়েছে সে ব্যাপারে আরও দায়িত্বপূর্ণ বিবৃতি দেওয়া।’’
তবে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সম্মিলিত মত, পাকিস্তানের সীমান্ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে ভাবে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে প্রত্যাঘাতের রাস্তায় যাওয়া হয়, ভারতের চিন নীতি যে তার থেকে বহুগুণ নরম, তা আজকের ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে। পুলওয়ামা হামলার প্রত্যাঘাতে বালাকোট অভিযানের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ঘরে ঢুকে মেরে আসাই তাঁদের নীতি। এ বার তো চিন ঘরে ঢুকে মেরে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy