ফয়জুর রহমান
এনআরসিতে নাম নেই। শনিবার খবরটা পেয়েই থমকে গিয়েছিলেন করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরের ফয়জুর রহমান। সারাদিন কথাবার্তা প্রায় বন্ধই ছিল। মুখে তোলেননি খাবার। রবিবার ভোরে মিলল মৃতদেহ। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ বছরের প্রৌঢ়ের। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এনআরসি-র প্রথম বলি। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬০ সালে কেনা জমির দলিল দিয়েছিলেন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে। কিন্তু পরিবারের ৭ জনের কারও আসেনি। এনআরসি তালিকা প্রকাশের আগেই গত কাল আশঙ্কায় আত্মঘাতী হয়েছেন শোণিতপুরের শায়েরা বেগমও।
যে অসম আন্দোলনের ফলশ্রুতি এই এনআরসি, সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯৮৩ সালে মারা যান ডালিমবাড়ির যুবক মদন মল্লিক। আসু তাঁকে ‘জাতীয় শহিদ’-এর স্বীকৃতি দেয়। সরকার পরিবারকে দেয় স্মারক ও পাঁচ লক্ষ টাকা। কিন্তু তাঁর স্ত্রী সর্ববালা দেবী ও পরিবারকে ডি-ভোটার করে দিয়েছে অসম পুলিশ। আসুই ভুল করে ‘মল্লিক’ পদবিকে ‘সরকার’ লিখেছিল। কাল হল সেটাই। মদনবাবুর স্ত্রী-পুত্র-সহ পরিবারের ১৩ জনের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে।
দেশভাগের সময় অসমকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মরিগাঁওয়ের লাহরিঘাটের মৌলবি মহম্মদ আমিরুদ্দিন। নগাঁও মহমেডান ইস্ট কেন্দ্র থেকে জেতা নির্দল বিধায়ক আমিরুদ্দিন ছিলেন অসম বিধানসভার প্রথম ডেপুটি স্পিকার (১৯৩-১৯৪৬)। মুসলিম লিগের প্রিমিয়ার সৈয়দ মহম্মদ শাহদুল্লার বিপক্ষে গিয়ে অসমকে ভারতে রাখার ক্ষেত্রে গোপীনাথ বরদলৈয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন আমিরুদ্দিন। কিন্তু তাঁর পরিবারের ১০০ জনের নামে পুলিশ সন্দেহজনক নাগরিকের নোটিস দেয়। ৭০ জনের নাম এনআরসিতে ওঠেনি।
প্রাক্তন আসু নেতা বরপেটার নবকুমার দাসের স্ত্রী সবিতা দাসের নামও তালিকায় নেই। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা গোপালকৃষ্ণ দাসের বাবা রঞ্জিৎ দাস ২২ বছর বিএসএফে ছিলেন। বাবা-ছেলে কারও নামই তালিকায় নেই। ইটাখোলার মলো দে অবসরপ্রাপ্ত সেচ দফতরের কর্মী। অসম মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র সামসুদ্দিনের কন্যা তথা লাহরিঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক আবদুল জলিলের স্ত্রী নিশাদ বেগমও তালিকাছুট। এমনকি ‘অরিজিন্যাল ইনহ্যাবিট্যান্ট’ ডবকার প্রদীপ বরার পরিবারের ৬ জন, সুকুমার বরদলৈ ও মলানি বরদলৈ, বকুল এলাকায় কার্বি সম্প্রদায়ের জেনিমাই, বড়োভূমিতে অনেক বড়ো পরিবারের নাম, বেশ কিছু রাভা পরিবারও তালিকাছুট। প্রায় এক লক্ষ গোর্খা তালিকায় বাদ পড়েছেন বলে গোর্খা সংগঠনের দাবি। কামরূপ মহানগর জেলার মধ্যে পড়া সোনাপুর সার্কলে পূর্ব মালয়বাড়ি গ্রামে ২০০০ লোকের মধ্যে দেড় হাজারের নামই বাদ পড়েছে। যাঁর করা মামলার জেরে এনআরসি নবীকরণ সেই ৮৫ বছর বয়সি, খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী প্রদীপ ভুঁইয়ার দাবি, তালিকাছুট ১৯ লক্ষকে অবিলম্বে ডি-ভোটার ঘোষণা করা হোক। অন্তত ৬০ লক্ষ মানুষের নাম ঢোকেনি। তাঁরা এনআরসিতে আবেদনও জানাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy