গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মধ্যবিত্তদের পক্ষে সুখবর এইটুকুই যে, নতুন বাজেট-প্রস্তাবে আর আয়করের বোঝা বাড়ল না তাঁদের কাঁধে। আয়কর-কাঠামোয় কোনও রদবদল ঘটানো হল না। এখন যেমন বছরে ৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় করলেই কর দিতে হয়, সেই নিয়মই বহাল রাখা হল।
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে পীযূষ গয়াল যে বাজেট পেশ করেছিলেন সেখানে বছরে আড়াই লক্ষ টাকা আয়ের উপর কোনও আয়করই দিতে হত না। বাকি আড়াই লক্ষ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে যে কর (২,৫০০ টাকা) জমা করতে হত সরকারের ঘরে, তা বছর-শেষে ফেরতও দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। নির্মলা কার্যত সেটাই বহাল রাখলেন। ফলে, প্রকৃত পক্ষে ৫ লক্ষ টাকার নীচে আয় হলে কার্যত, কোনও করই দিতে হবে না মধ্যবিত্তদের। তবে গৃহঋণে এ বার কিছুটা বাড়তি উৎসাহ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে।
বাজেট-প্রস্তাব পেশের সময় শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘অল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাঁধ থেকে সরকার গত পাঁচ বছরেও করের বোঝা হাল্কা করেছিল। আর তার ফলে যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রবীণ নাগরিকদের মতো স্বনির্ভররাও উপকৃত হতে পারেন, সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। এ বারও সেই লক্ষ্যে সরকার অবিচল থাকতে চেয়েছে।’’
আয়কর রিটার্ন পদ্ধতিও সরলতর
আয়কর-কাঠামোয় রদবদল না ঘটায় যেমন স্বস্তি পেয়েছেন মধ্যবিত্তরা, তেমনই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়মকানুনও আগের চেয়ে সরল করা হয়েছে। যার ফলে, আয়করদাতাদের কাজটা যেমন সহজতর হবে, তেমনই আয়কর-বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও আগের চেয়ে বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন- আয়করে ছাড়? আশা সমীক্ষায়
আরও পড়ুন- টাকা দিলেই ছাড় নয় নয়া আইনে
এত দিন আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য করদাতাদের আধার কার্ড ও প্যান কার্ড থাকতে হত। কিন্তু এ বার সেই নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। যার ফলে, এ বার প্যান কার্ড না থাকলেও, শুধুমাত্র আধার কার্ডের ভিত্তিতেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা। বিশেষজ্ঞদের আশা, এর ফলেও আয়কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘এ বার শুধু আধার কার্ডের নম্বর উল্লেখ করেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা। এতে আয়কর জমা দিতে কোনও অসুবিধা থাকবে না। কারণ, দেশের ১২০ কোটি মানুষের হাতেই আধার কার্ড পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে।’’
২ কোটিরও বেশি রোজগেরেদের উপর বাড়তি সারচার্জ
তবে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এ বার বেশি আয়ের মানুষের কাঁধে করের বোঝা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। আর সেটা হবে বাড়তি সারচার্জ চাপিয়ে। বছরে ২ থেকে ৫ কোটি টাকা রোজগার করলে আগে যতটা সারচার্জ নেওয়া হত, এ বার তা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর বছরে সেই রোজগার ৭ কোটি টাকা বা তা ছাড়িয়ে গেলে, সেই সারচার্জের পরিমাণ বেড়ে হবে ৭ শতাংশ।
প্রত্যক্ষ কর-আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে: সীতারামন
গত পাঁচ বছরে দেশে প্রত্যক্ষ আয়করদাতাদের উৎসাহ অনেকটা বেড়েছে বলেও এ দিন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে দেশে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। তার ফলে, ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে গত বছর কর-বাবদ যে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা, গত বছর তা বেড়ে ১১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে।’’
গৃহঋণে বাড়তি উৎসাহ
দেশে আবাসন সমস্যা মেটাতে গৃহঋণেও এ বার কিছুটা বাড়তি উৎসাহ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। বলা হয়েছে, কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দাম যদি ৪৫ লক্ষ টাকা বা তার চেয়ে কম হয়, তা হলে, তা কেনার জন্য নেওয়া ঋণের উপর ২০২০-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত যত সুদ দেওয়া হয়েছে, তার উপর আরও দেড় লক্ষ টাকা কর-ছাড় দেওয়া হবে। এখন যে পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy