Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

শিক্ষায় সঙ্ঘ-ধ্বনি, নিয়ন্ত্রক সংস্থাতেও কি আরএসএস

নরেন্দ্র মোদী সরকারের নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা হওয়ার পর সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা বলছেন, এই শিক্ষানীতিতে তাঁদের সেই ভাবনার সিংহভাগই ফুটে উঠেছে। সঙ্ঘের দাবি মেনে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম বদলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রক হয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

প্রেমাংশু চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৪:২২
Share: Save:

রসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত গত বছর অগস্টে আশা প্রকাশ করেছিলেন, নতুন শিক্ষানীতি পড়ুয়াদের আত্মনির্ভর, স্বাধীন ও স্বাভিমানী করে তুলতে সাহায্য করবে। শিক্ষানীতির শিকড় পোঁতা থাকবে ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতিতে।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা হওয়ার পর সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা বলছেন, এই শিক্ষানীতিতে তাঁদের সেই ভাবনার সিংহভাগই ফুটে উঠেছে। সঙ্ঘের দাবি মেনে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম বদলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রক হয়নি। শুধু শিক্ষা মন্ত্রক হয়েছে। সে টুকু বাদ দিলে, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষা, সংস্কৃতের মতো ভারতীয় ভাষা জনপ্রিয় করার চেষ্টা, জাতীয় রিসার্চ ফাউন্ডেশন তৈরি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ তৈরি করে তার ছাতার তলায় ইউজিসি, এআইসিটিই-র মতো সংস্থাকে নিয়ে আসা—এর সব কিছুতেই সঙ্ঘ পরিবারের ছাপ স্পষ্ট।

নতুন শিক্ষানীতি তৈরিতে সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন ভারতীয় শিক্ষণ মণ্ডল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। মণ্ডলের শিক্ষা শাখার সহ-প্রধান অমিত দাশোরার যুক্তি, তাঁদের মতামত আসলে দেশের মানুষেরই মতামত। দাশোরা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমরা গোটা দেশ থেকে মতামত সংগ্রহ করে সরকারের সামনে তুলে ধরেছিলাম। সরকার নিজেও আরও অনেক বেশি মানুষের মতামত নিয়েছে। একই রকম মতামত উঠে এসেছে।’’

সঙ্ঘ পরিবারের মত ছিল, নতুন শিক্ষানীতি প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকরণে তৈরি হোক। শিক্ষানীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত, পড়াশোনা শিখে একজন ব্যক্তি যাতে ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করেন। নিজের ‘মৌলিক দায়িত্ব’ সম্পর্কে সচেতন হন। দেশের সঙ্গে আরও একাত্ম বোধ করেন। নতুন শিক্ষানীতির ঘোষিত উদ্দেশ্যতেও ঠিক সে কথাই বলা হয়েছে।

দাশোরা বলেন, ‘‘নতুন শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্থানীয় ভাষায় পড়ানোর সঙ্গে অন্য ভারতীয় ভাষা শেখার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। দেশের একতা ও অখণ্ডতার জন্য এ’টি খুবই জরুরি।’’ একই যুক্তিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম বদলে শিক্ষা-সংস্কৃতি মন্ত্রক রাখার দাবি তুলেছিল সঙ্ঘ। শিক্ষণ মণ্ডলের সভাপতি সচ্চিদানন্দ জোশীর যুক্তি ছিল, স্বাধীনতার পরে এই নামই ছিল। মোদী সরকার শুধু শিক্ষা মন্ত্রকে রাজি হলেও আরএসএস নেতারা অখুশি নন।

কিন্তু প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে পড়াশোনা শেখার পরে চাকরি মিলবে তো? দাশোরার দাবি, ‘‘এই শিক্ষা ব্যবস্থায় কেউ বিনা চাকরি বা রোজগারে বসে থাকবে না। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে। দ্বাদশ শ্রেণির পরে কোনও না কোনও দক্ষতা তৈরি হয়ে যাবে। চাকরির ক্ষেত্রেও সরকার আত্মনির্ভর ভারতের দিকে এগোচ্ছে। প্রচুর প্রশিক্ষিত কর্মীর দরকার পড়বে। এখানে প্রাচীনের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: যোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যুবকের গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন

বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা, নতুন শিক্ষানীতি তৈরির পরে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাথায় সঙ্ঘের নেতাদেরই বসানো হবে। বিদ্যা ভারতী-র মতো আরএসএস-এর সংগঠনের জাল আরও ছড়াবে। দাশোরা বলেন, ‘‘আমরা চাই, শিক্ষাক্ষেত্রের মাথায় আমলাতন্ত্রের বদলে শিক্ষাবিদরা থাকুন। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ফলে ব্যবসায় পরিণত হচ্ছিল। তার বদলে যাঁরা সেবার মনোভাব থেকে কাজ করতে আসেন, তাঁরা প্রাধান্য পান। শিক্ষানীতিও তা-ই বলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education Center Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy