Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

শিক্ষানীতি নিয়ে কথা চান মোদী, কেন এড়ানো হল সংসদ, প্রশ্ন

নতুন শিক্ষা নীতি রূপায়ণে কেন কেন্দ্র-রাজ্যকে হাত মিলিয়ে এগোতে হবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৬
Share: Save:

নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়নের মতো এত বড় মাপের সংস্কার হলে হাজার প্রশ্ন যে মনে থাকবেই, তা মানলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, সে কথা মাথায় রেখেই এই নীতিকে কার্যকর করার আগে কেন্দ্রের সঙ্গে প্রত্যেক রাজ্য-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের লাগাতার আলোচনা চান তিনি। যাতে নতুন নীতির বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটে। দূর হয় অমূলক আশঙ্কা। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে সংসদকে এড়িয়ে এত বড় সংস্কারের পথে কেন হাঁটল মোদী সরকার? কেনই বা এই করোনা-কালেও তাকে বাস্তবায়িত করার এত তাড়াহুড়ো?

সোমবার রাজ্যপাল, শিক্ষামন্ত্রীদের জন্য আয়োজিত শিক্ষানীতি সংক্রান্ত ভিডিয়ো-আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪-৫ বছর ধরে দেশ জুড়ে বিপুল শলা-পরামর্শের পরে তবে তৈরি হয়েছিল শিক্ষা নীতির খসড়া। চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছিল দু’লক্ষের বেশি পরামর্শের। এই নীতি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ তৈরির অন্যতম ভিত্তি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভোল বদলে দিতে সক্ষম। কিন্তু তেমনই এত বড় মাপের সংস্কার বলেই তার সম্পর্কে মনে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। যেমন, অভিভাবকেরা ভাবতেই পারেন যে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কী হবে? শিক্ষকদের মাথায় ঘুরতে পারে উপযুক্ত পাঠ্যক্রমের চিন্তা। তাঁর কথায়, “এমন অজস্র প্রশ্ন মনে দানা বাঁধতে পারে। তা গুরুত্বপূর্ণও। সেই কারণেই লাগাতার আলোচনা জরুরি।” প্রত্যেক রাজ্যের বক্তব্য খোলা মনে শোনা হচ্ছে বলেও মোদীর দাবি।

নীতি রূপায়ণে কেন কেন্দ্র-রাজ্যকে হাত মিলিয়ে এগোতে হবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “এটি কোনও সরকারের নীতি নয়, দেশের নীতি। ঠিক যেমন প্রতিরক্ষা কিংবা বিদেশনীতি।”

আরও পড়ুন: পরিচয়পত্রে এ বার থাকবে মায়েরও নাম, বদল আফগান আইনে

আরও পড়ুন: গবেষণার জন্য বরাদ্দে জোর রাষ্ট্রপতিরও

এই কথার সূত্র ধরেই বিরোধীদের প্রশ্ন, সংসদে আলোচনা না-করে কেন এবং কী ভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ নীতি ঘোষণা করে দিল সরকার? করোনা-কালে যেখানে গত প্রায় ছ’মাস স্কুল-কলেজের দরজা বন্ধ, সেখানে নতুন নীতি ঘোষণা এবং বাস্তবায়নে এত তাড়া কিসের? তাঁদের কটাক্ষ, শিক্ষানীতি ঘোষণার পরে তা নিয়ে আলোচনায় যত আগ্রহ কেন্দ্রের! কথা তো অনেক বেশি করে বলা উচিত ছিল নীতি ঘোষণার আগে! তবে তো তার ভুল-ত্রুটি, সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত। সুযোগ থাকত সংশোধনের।

শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক এ দিনও দাবি করেছেন, লোকসভা ও রাজ্যসভায় রাজ্য ধরে-ধরে প্রায় প্রত্যেক সাংসদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন, তা হলে সংসদের সরকারি আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি উঠল না কেন? কেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধীশাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যের অভিযোগ, তাদের পরামর্শে কান না-দেওয়ার? এক বিরোধী নেতার কটাক্ষ, “যখন স্বাস্থ্য আর অর্থনীতি পাখির চোখ হওয়ার কথা, তখন সরকার শিক্ষানীতির প্রচারে ব্যস্ত। অথচ এই নীতির বাস্তবায়ন দীর্ঘমেয়াদি। তা হওয়া উচিত বিস্তারিত আলোচনার পরে। কিন্তু কেন্দ্রের ভাবটা এমন, যেন এই মুহূর্তে ওই নতুন নীতি চালু না-করলে, দুনিয়া রসাতলে যাবে। তাই আলোচনার কথা মুখে বলা হলেও, তার সময় বাঁধা।”

মোদী এ দিন বলেছেন, শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ কমা জরুরি। বরং মতামত বেশি খাটুক শিক্ষকদের। কিন্তু অনেকের জিজ্ঞাসা, যে ভাবে নীতি দ্রুত কার্যকর করতে কেন্দ্র কোমর বেঁধেছে, তাতে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের শিক্ষকেরা মত দেবেন কখন?

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, একেবারে নিচু তলা পর্যন্ত কী করে এই নীতি কার্যকর করা সম্ভব, তার সম্পূর্ণ রূপরেখা তৈরি। তবু তাঁরা চান, সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে। এ জন্য শীঘ্রই প্রত্যেক রাজ্যকে পাঠানো হবে ৩০০টি বিষয়ের তালিকা। যার ভিত্তিতে আলোচনার পরে তৈরি করা হবে বাস্তবায়নের চূড়ান্ত নির্দেশিকা। তাঁর আশ্বাস, “(কেন্দ্র-রাজ্য মিলে) টিম-ইন্ডিয়া হিসেবে কাজ করব আমরা।… কারও মনে শঙ্কা বা প্রশ্ন থাকলে, আমি ‘নিশঙ্ক’ তো বসেই আছি।” কিন্তু প্রশ্ন, নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছনোর নীল-নকশা তৈরির আগেও আলোচনা জরুরি ছিল না কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi National Education Policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy