ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল।—ছবি সংগৃহীত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) ‘সুফল’ বোঝাতে অতীতের দুই বাঙালিকে অস্ত্র করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তুলে আনলেন জওহরলাল নেহরুর বক্তব্যকেও।
ইতিহাসের পাতা থেকে বাঙালি রাজনীতিক ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের উদাহরণ তুলে মোদী আজ বলেন, ‘‘এঁরা প্রথমে পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। পরে হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের কারণে ভারতে ফিরতে বাধ্য হন।’’ কংগ্রেস নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী ভূপেন্দ্র দত্ত দেশভাগের পরে পাকিস্তানে রয়ে গিয়েছিলেন। সে দেশের সংবিধান সভার সদস্যও ছিলেন। মোদী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সংবিধান তৈরির কাজ চলার মধ্যেই ইস্তফা দেন তিনি। সংবিধান সভায় ভূপেন্দ্র বলেন, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের মুছে দেওয়া হচ্ছে। কয়েক কোটি মানুষ, যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানে রয়েছেন তাঁরা হতাশ।’’ আর এক বাঙালি পূর্ব পাকিস্তানের নেতা, পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। বলেন, ‘‘সরকার গড়ার আড়াই বছরের মধ্যে, ১৯৫০ সালে ইস্তফা দেন যোগেন্দ্র। ইস্তফাপত্রে লিখেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের পর পূর্ব পাকিস্তানেও হিন্দুদের তাড়ানোর প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, প্রতিবেশী দেশগুলিতে এখনও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলছে। সে জন্যই নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে অত্যাচারের শিকার অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে পাশ হয়েছে সিএএ। মোদী সরকার ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে সরব বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন শুধু অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান তিনি। অভিযোগ খণ্ডনে নেহরুকে হাতিয়ার করেন মোদী। ১৯৫০ সালে ভারত-পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য চুক্তি করেছিলেন জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকৎ খান। সেখানে বলা হয়, দু’দেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বৈষম্য করবে না।
আরও পড়ুন: ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে তা জানা আছে’’
চুক্তিতে থাকা ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ শব্দটিকে নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করেন মোদী। বলেন, ‘‘যে নেহরু ধর্মনিরপেক্ষ, দূরদর্শী, কংগ্রেসের সব কিছু— তিনি সব নাগরিকের কথা না বলে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কথা চুক্তিকে উল্লেখ করেছিলেন কেন?’’ অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলুইকে লেখা নেহরুর চিঠির কথাও তোলেন মোদী। বলেন, ‘‘নেহরু অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, আপনাকে হিন্দু শরণার্থী ও মুসলিম অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ফারাক করতে হবে। দেশকে ওই শরণার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে।’’ লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও লালবাহাদুর শাস্ত্রী, রামমনোহর লোহিয়া, বি আর অম্বেডকরদের হিন্দুদের আশ্রয় দেওয়া সংক্রান্ত একই রকম মন্তব্য তুলে ধরে মোদীর প্রশ্ন, ‘‘ওই নেতারাও কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন?’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতেও একই কথা বলা হয়েছিল। মোদীর কথায়, ‘‘আমি মনে করি না, কংগ্রেস তখন সাম্প্রদায়িক ছিল। আর এখন ধর্মনিরপেক্ষ দল তা-ও মনে করি না।’’ জবাবে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy