Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

নওয়াজ শরিফের বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না, মোদীকে নিয়ে শেষ বইয়ে প্রণব

২০১৫-র ডিসেম্বরে আচমকা লাহৌরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হওয়া নিয়ে সেই সময়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মোদী।

লাহৌরে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

লাহৌরে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:২৮
Share: Save:

গায়ে পড়ে নওয়াজ শরিফের বাড়িতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজনই ছিল না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আত্মজীবনীর চতুর্থ তথা শেষ খণ্ড ‘দ্য প্রেসিডেনশিয়াল ইয়ারস: ২০১২-২০১৭’-এ মোদীর লাহৌর সফর নিয়ে এমনই লিখেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, সেই সময় ভারত-পাক সম্পর্ক যে জায়গায় ছিল, তার প্রেক্ষিতে মোদীর এই পদক্ষেপ একেবারেই অনভিপ্রেত ছিল।

২০১৫-র ডিসেম্বরে আচমকা লাহৌরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হওয়া নিয়ে সেই সময়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মোদী। সেই আগুনে ঘি ঢালে তার দিন কয়েক পর পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পাকিস্তানি ফিদায়েঁ জঙ্গিদের হামলার ঘটনা। গোটা ঘটনায় মোদী সরকারের বিদেশনীতি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

সেই প্রসঙ্গই উঠে এসেছে প্রণবের বইয়ে। তাঁর লেখায় রয়েছে, ‘লাহৌরে নওয়াজ শরিফের বাড়িতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজনই ছিল না প্রধানমন্ত্রীর। সেই সময় দু’দেশের সম্পর্কের যা পরিস্থিতি ছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে গায়ে পড়ে এই দৌত্য স্থাপন শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয়ই নয়, সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল’।

আরও পড়ুন: বিরোধীদের কথা অবশ্যই শোনা উচিত, শেষ বইয়ে মোদীকে প্রণব​

কূটনৈতিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে মোদীর যেচে বন্ধু স্থাপনের প্রচেষ্টারও সমালোচনা করেছেন প্রণব। জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ‘ভরসাযোগ্য বন্ধু’ বলে মোদীকে উল্লেখ করেছিলেন এক সময়। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রণব লেখেন, ‘রাষ্ট্রনেতাদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের ঘোরবিরোধী আমি, কারণ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পথে তা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের বন্ধুত্বের গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করি না আমি। কারণ এ ক্ষেত্রে কোনও সম্পর্কই ব্যক্তিগত হয় না’।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের রসায়নের কথা টেনে এনেছেন প্রণব। তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ছিল। শেখ হাসিনা যখন নির্বাসনে ছিলেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে অবশ্যই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্যক্তিগত সমীকরণ নিয়ে বেশি বাগাড়ম্বর করছেন। এই ধরনের সম্পর্ককে সত্যিকারের বন্ধুত্ব ভেবে বসা একেবারে অযৌক্তিক’।

তবে বিদেশ নীতি নিয়ে সে রকম কোনও অভিজ্ঞতা না থাকাতেই মোদীর একের পর এক সিদ্ধান্ত সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বলে মত প্রণবের। তাঁর বক্তব্য, ‘নরেন্দ্র মোদী যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন, বিদেশ নীতি নিয়ে কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না তাঁর। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর থাকাকালীন কয়েকটা দেশ ঘুরেছেন বটে, তবে অভ্যন্তরীণ অথবা আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক ছিল না। বিদেশনীতিতে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ছিলেন তিনি। তাই তিনি একের পর এক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী সে দিকে ঘেঁষেননি। তাই ২০১৪-য় নওয়াজ শরিফ-সহ সার্কের অন্তর্ভুক্ত এবং অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রনেতাদের নিজের শপথগ্রহণে ডাকার মতো তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত হয়ে যান কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা’।

আরও পড়ুন: ধর্মান্তরণ আইনের বৈধতা খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট, নোটিস কেন্দ্র-সহ ৩ রাজ্যকে​

উরি হামলার জবাবে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে মোদী সরকার বাড়াবাড়ি রকমের প্রচার করেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রণব। তিনি লেখেন, ‘পাক আগ্রাসনের জবাব দিতে সীমান্তে হামেশাই এই ধরনের অভিযান চালায় ভারতীয় সেনা। তাই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে এত বাড়াবাড়ি না করলেও হত। এ নিয়ে এত কথা বলে কোনও লাভ হয়নি দেশের’।

শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে সঙ্ঘাতে না গিয়ে ইমরান খানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেও কেন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রণব। তাঁর মতে, ‘ইমরান খান নয়া প্রজন্মের রাজনীতিক। স্বাধীনতার পরে জন্মেছেন। তাই মুসলিম লিগ যে ধরনের রাজনীতির জন্য পরিচিত, দেশভাগ পূর্ববর্তী সেই ধরনের রাজনীতির কোনও দায়ই তাঁর কাঁধে নেই। ভারত সম্পর্কে ওঁর অবস্থান সম্পর্কে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে আমাদের। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, ইমরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত আমাদের’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy