সর্দার পটেল জ়ুলজিকাল পার্কের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার গুজরাতের কেবড়িয়ায়। পিটিআই
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪ নম্বর স্থানে ঠাঁই হয়েছে ভারতের। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশের মতো পড়শি মুলুক তো বটেই, এই ক্রম তালিকায় আগে নাম পাকিস্তানেরও। লজ্জার এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পরে দু’সপ্তাহও কাটেনি। শুক্রবার গুজরাতের কেবড়িয়ায় পুষ্টি পার্কের উদ্বোধন করলেন নরেন্দ্র মোদী।
বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি হিসেবে নর্মদার তীরে সর্দার বল্লভভাই পটেলের ‘ধাতব উপস্থিতি’ যেখানে আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, সেই কেবড়িয়াকে আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে এ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার অঙ্গ পুষ্টি পার্কও। ৩৫ হাজার বর্গ ফুটের প্রযুক্তি-নির্ভর এই পার্ক বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের উপকরণে ঠাসা। ভারতের বিভিন্ন খাদ্যশস্যের পুষ্টিগত গুণাগুণ খেলার ছলে শিখে নেওয়া যাবে এখানে। ‘নিউট্রি ট্রেন’ নামে যে টয় ট্রেনে মোদী এ দিন চড়লেন, তার স্টেশনের নাম অন্নপূর্ণা, পোষণ পূরণ ইত্যাদি। চোখে বিশেষ চশমা এঁটে যে ৫-ডি চলচ্চিত্র তিনি দেখলেন, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের হরেক রকম খাবারের থালির সম্ভার তুলে ধরা হয়েছে সেখানে।
সিপিএম নেতা তথা সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের কটাক্ষ, “উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও মূলত অপুষ্টির সমস্যার কারণে ক্ষুধা সূচকে শেষ সারিতে ঠাঁই হয়েছে ভারতের। সেই লজ্জাজনক পরিসংখ্যানের পরে এখন পুষ্টি পার্কের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী!” এই পার্ক পর্যটন কেন্দ্রের অঙ্গ মেনেও তাঁর অভিযোগ, “দেশে ক্ষুধা বা অপুষ্টি এমনিই বাড়েনি। তা হয়েছে আধপেটা মানুষের পেটে খাবার জোটার বদলে মুষ্টিমেয় ধনকুবেরের পকেট ভারী হওয়ার কারণে। অথচ সেই রূঢ় বাস্তব চাপা দিয়ে চমকের দিকে নজর ঘোরাতে পুষ্টি ট্রেনে চড়ছেন মোদী। ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদ দখলের পরে সাড়ে চার দশকে বেকারত্বের সর্বোচ্চ হার তাঁর জমানায়। অর্থনীতি সঙ্কুচিত। তাই এখন চাকরি কিংবা বৃদ্ধির হার নিয়ে কথা না-তুলে শুধু নজর ঘোরাতে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী।” সরকারের তরফে দাবি, করোনা-কালে কাউকে অভুক্ত থাকতে না-দেওয়ার পণ করেই নিখরচায় রেশন জোগানো হচ্ছে ৮০ কোটি মানুষকে। আগামী দিনে কেবড়িয়া ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে কাজের বহু সুযোগও তৈরি হবে এই পর্যটন কেন্দ্রের হাত ধরে।
আরও পড়ুন: কমল নাথ আর ‘তারকা প্রচারক’ নন, জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন
এ দিন আয়ুর্বেদিক ওষুধের আরোগ্য বন, আরোগ্য কুটিরের মতো প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মোদী। ফিতে কেটেছেন জঙ্গল সাফারি আর পাখি দেখার (বার্ড ওয়াচিং) কেন্দ্রের। নিজে ঘুরে দেখেছেন প্রায় পুরো তল্লাট। এক সময়ে দু’হাতে দুই টিয়াপাখিকে বসিয়ে চেষ্টা করেছেন শরীরের ভারসাম্য নিঁখুত রাখার। যাতে উড়ে না-পালায়। তারই মধ্যে একটি উঠে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে। এই ‘কসরত’ দেখে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কটাক্ষ, “এমন ভারসাম্য যদি প্রধানমন্ত্রী কোভিড মোকাবিলা আর অর্থনীতির হাল ধরে রাখার ক্ষেত্রে দেখাতে পারতেন, দেশের মঙ্গল হত। পুষ্টি পার্কের উদ্বোধনের বদলে পাতে পুষ্টিকর খাবার জোগাতে পারলে, প্রাণ বাঁচত বহু মানুষের।”
দু’দিনের গুজরাত সফরের প্রথম দিনে রাজনৈতিক বার্তাও পরতে পরতে ছড়িয়ে রেখেছেন মোদী। গাঁধী পরিবারের বাইরে ভাবতে না-পারা কংগ্রেস যে সর্দার বল্লভভাইকে প্রাপ্য সম্মান দেয়নি, আকাশছোঁয়া মূর্তি তৈরির প্রসঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে আগে সে কথা বার বার মনে করিয়েছেন তিনি। অনেকে মনে করছেন, তাঁর মূর্তির পাদদেশের কেবড়িয়ায় একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমেই ২০২২ সালের গুজরাত বিধানসভার ভোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন সর্দারজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মোদী। গুজরাতের ভোট ছাড়া যাঁর উল্লেখ কংগ্রেস আর কোথাও সে ভাবে করে না বলে, বিজেপির দাবি। ফেরিতে চক্কর কেটেছেন নর্মদায়। গতকাল প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা কেশুভাই পটেলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন তাঁর বাড়ি গিয়ে। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ থাকলে, উন্নয়ন যে দ্রুত হয়, তার নমুনা দেখাতে প্রকল্পের উদ্বোধন আর শিলান্যাস করেছেন অনেকগুলি।
২০২২ অনেক দেরি। কিন্তু ২০১৭ সালের ভোটে যে তাঁর নিজের রাজ্যে তাজ ধরে রাখার লড়াই কঠিন হয়েছিল, মোদী সম্ভবত সে কথা ভোলেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy