সংসদে রাহুল গাঁধী।—ছবি পিটিআই।
চল্লিশ মিনিট কেটে গিয়েছে বক্তৃতার। অর্থনীতিতে সব ভাল, এমন একটি ছবি মেলে ধরার চেষ্টা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যেটুকু ‘চ্যালেঞ্জ’, তার দোষ চাপাচ্ছিলেন কংগ্রেস জমানার ঘাড়ে। নিজের আসনে বসেই রাহুল গাঁধী বললেন, ‘‘রোজগার! রোজগার!’’ উঠে দাঁড়িয়ে একই সুরে বললেন অধীর চৌধুরীও।
বক্তৃতার গোড়া থেকেই বারবার বাদ সাধায় অধীরকে নিয়ে এমনিতেই বিরক্ত ছিলেন মোদী। এ বারে বেকারত্বের প্রশ্ন তুলতে মোদী বললেন, ‘‘কৃতজ্ঞ, আমার উপরে আস্থা রাখার জন্য। আপনি বুঝেছেন, আমিই (বেকারত্ব) দূর করব। তবে একটি কাজ করব না— আপনাদের বেকারত্ব হঠতে দেব না।’’ এ কথা বলে ফের অর্থনীতির তারিফ। রাহুল বসে বসেই আবার বললেন, ‘‘রোজগার! রোজগার!’’ এ বারে একটু ধৈর্য্য হারালেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘কৃষকদের থেকে অনেক শিখি। তাঁরা জমি তৈরি করে অনেক দিন রেখে দেন। সময় এলে বীজ বপন করেন। গত দশ মিনিট ধরে যা হচ্ছে (রাহুলদের রোজগার খোঁচা), এত ক্ষণে আপনাদের মস্তিষ্কে জায়গা হয়েছে। এ বারে বীজ দেব।’’
প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে অনেকেই ভাবলেন, তিনি হয়তো তাঁর জমানায় কত রোজগার দিয়েছেন, তার হিসেবটা দিয়েই রাহুলের মুখ বন্ধ করবেন। কিন্তু তা না! সেই পুরনো ধাঁচে মুদ্রা লোন, স্টার্ট আপ, স্ট্যান্ড-আপ, ইপিএফ-এর সাম্প্রতিক হিসেব দিলেন। তবে আগের মতো যোগ করলেন না। শুধু দাবি করলেন, বিনা রোজগারে এ সব হয় না। ব্যস! তার পরেই টেনে আনলেন দিল্লি ভোটের জনসভায় গত কাল রাহুলের ‘মোদীকে লাঠিপেটা’ করার মন্তব্য। যেখানে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘রোজগার না পেলে ছয় মাসে যুবকরা মোদীকে লাঠিপেটা করবেন।’’ আর বাজেটের পরে মোদীর সূর্য নমস্কারের পুরনো ভিডিয়ো নতুন করে সাজিয়ে অর্থনীতিকে ধাক্কা দেওয়ার ব্যঙ্গও করেছিলেন রাহুল। সেটিও আজ তুললেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বললেন, ‘‘কাল শুনলাম, কংগ্রেসের এক নেতা বলেছেন ৬ মাসে মোদীকে লাঠি মারবেন। ২০ বছর ধরে গালি শুনে ‘গালি-প্রুফ’ হয়ে গিয়েছি। কিন্তু যাক, ৬ মাস সময় দিয়েছেন। ধন্যবাদ। ঠিক করেছি, ৬ মাসে এত সূর্য-নমস্কার করব, তাতে পিঠে লাঠি খাওয়া সয়ে যায়।’’ নাম করেননি, কিন্তু রাহুল বুঝলেন, তাঁকেই বলা হচ্ছে। এ বারে তিনি প্রথম বার উঠে দাঁড়ালেন, ‘‘আরে রোজগার কত দেবেন, বলুন না।’’ আরও কিছু বলছিলেন, বিজেপি সাংসদদের হল্লায় শোনা যায়নি। রাহুলকে উঠতে দেখে এ বারে ঝুলি থেকে আসল আক্রমণটি বের করলেন প্রধানমন্ত্রী: ‘‘৩০-৪০ মিনিট ধরে বলছি, কারেন্ট পৌঁছতে এত দেরি হল। অনেক টিউবলাইটের এমনই হয়।’’
হাসির রোল বিজেপি শিবিরে। কংগ্রেসেরও অনেকে হাসলেন। কিন্তু রাহুলকে ‘টিউবলাইট’ বলাতেও কেউ প্রতিবাদ করলেন না। তাতে আরও জোর পেয়ে সংবিধান ভঙ্গ নিয়ে রাহুল-সনিয়া গাঁধীকে নাম না করে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী। নজির টানলেন মনমোহন সিংহের ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত রাহুলের ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা আর রিমোট কন্ট্রোলে মনমোহনকে চালানোর অভিযোগ করলেন সনিয়ার বিরুদ্ধে। সংসদ থেকে বেরিয়ে রাহুল বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে আজ ৩,৪,৫,১০ বার জিজ্ঞাসা করলাম, যুবকদের জানান, রোজগার দিতে কী করছেন? সেটাই আসল সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী জবাব দিতে পারেননি। নজর ঘোরাতে কংগ্রেস, পাকিস্তান, নেহরু— কত কী বললেন! তিন ঘণ্টার বাজেটে অর্থমন্ত্রীও রোজগার নিয়ে বলেননি। প্রধানমন্ত্রী বছরে ২ কোটি রোজগার দেওয়ার কথা বলেছিলেন, গত বছরই ১ কোটি চাকরি খুইয়েছে।’’ কংগ্রেসের আর এক নেতার কথায়, ‘‘লাঠিপেটা খেতে রাজি, তবু চাকরি দেওয়ার কথা বলবেন না মোদী! এ কেমন প্রধানমন্ত্রী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy