Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
National News

আমার ছেলেটাকে মৃত্যুর মুখে দিও না, হত কিশোরের মায়ের আর্তি কানেও তোলেনি ২ লস্কর জঙ্গি

পুলিশের নজর এড়াতে যে বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিল লস্কর-ই-তৈবার দুই জঙ্গি, সেই বাড়িরই নাবালক পুত্র আতিফকে জঙ্গিরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মানবঢাল করতে চেয়েছিল।

আতিফের মা শরিফ বানো। ছবি- পিটিআই

আতিফের মা শরিফ বানো। ছবি- পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
হাজিন (বান্দিপোরা) শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ১৪:০১
Share: Save:

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এ বার উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরায় ১২ বছরের একটি শিশুকে ‘মানবঢাল’ করল লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গিরা। প্রাণ হারাল শিশুটি। ১২ বছরের সেই শিশুটির নাম আতিফ শফি। পড়ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে। পুলিশের দাবি, প্রাণে বাঁচবে না বুঝে জঙ্গিরাই গুলি করে খুন করে শিশুটিকে। ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ।

পুলিশের নজর এড়াতে যে বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিল লস্কর-ই-তৈবার দুই জঙ্গি, সেই বাড়িরই নাবালক পুত্র আতিফকে জঙ্গিরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মানবঢাল করেছিল। এর আগে গত বছর একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অফিসার।

বান্দিপোরায় ঝিলম নদীর তীরে হাজিন শহরে ওই ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। ছবির মতো সুন্দর ওই ছোট্ট শহরেই তিন তলা বাড়ি আতিফের। সে দিন ভোর থেকেই লস্কর জঙ্গিদের খোঁজে হাজিন শহরটাকে ঘিরে ফেলেছিল কাশ্মীর পুলিশ-সহ ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। ফলে, নিজেদের বাঁচাতে দুই লস্কর জঙ্গি আশ্রয় নিয়েছিল আতিফদের বাড়িতে। আতিফের মা তাদের জল, খাবারদাবারও দিয়েছিলেন।

না, তার পরেও জঙ্গিরা রেহাই দেয়নি শরিফ বানোর বছর বারোর শিশুপুত্রটিকে। হাজিন শহরের মির মহল্লায় ওই বাড়িতে আতিফের বাবা ও কাকার পরিবার মিলিয়ে থাকতেন ৬ জন। পুলিশ গোটা শহর ঘিরে ফেলেছে, সাতসকালেই সেই খবর রটে যাওয়ায় জঙ্গিরা বাড়ির লোকজনকে অন্যত্র সরে যেতে বলে। শুধু আটকে রেখে দেয় আতিফ আর তার কাকা আবদুল হামিদ মিরকে। পুলিশ এ বার তাঁদের বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে জঙ্গিদের তাক করে গুলিগোলা ছুড়বে জেনে দুই মেয়েকে নিয়ে পাশের গলিতে আর একটা বাড়িতে ঢুকে পড়েন আতিফের মা শরিফ বানো। সঙ্গে যান তাঁর স্বামী, আতিফের বাবা মহম্মদ শফি মির আর আতিফের পিসি।

পুলিশ-জঙ্গি সংঘর্ষের পর আতিফের বাড়ি। বান্দিপোরার হাজিন শহরের মির মহল্লায়। ছবি- পিটিআই

আতিফের মা শরিফ বলেছেন, ‘‘যাওয়ার সময় বার বার জঙ্গিদের বলি, আল্লার দোহাই, তোমরা আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও। তোমাদের রাখলাম, খাওয়ালাম, এত যত্নআত্তি করলাম, তোমাদের পায়ে পড়ি, আমার ছেলেটাকে তোমরা ছেড়ে দাও। সে সভ শুনে জঙ্গিরা বলে, তোমরা এগিয়ে যাও। ও (আতিফ) ওপরতলায় আছে। নেমে আসছে। তার পরেই পাঠিয়ে দেব।’’

তার পরেও পাশের গলির অন্য একটি বাড়ি থেকে আতিফের মা বার বার ফোন করেন জঙ্গিদের ‘কই এখনও তো এল না আতিফ। আল্লার দোহাই, ওকে ছেড়ো দাও তোমরা।’’ ওই সময় আতিফের বাবা ও পিসিও বার বাহর ফোন করেন জঙ্গিদের।

কিন্তু তার পরেও আতিফকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেয়নি ভিতরে থাকা দুই লস্কর জঙ্গি। বাইরে থেকে লাউডস্পিকারে পুলিশও জঙ্গিদের উদ্দেশে বার বার বলতে থাকে, ‘‘বাচ্চাটাকে ছেড়ে দে। না হলে আমরা গুলি করে মারব তোদের।’’ ওই সময় আতিফের মা ছুটে গিয়ে পুলিশকে বলেন, ‘‘জঙ্গিদের তাক করে গুলি ছুড়বেন না। তা হলে ওরা আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলবে।’’ স্থানীয় একটি মসজিদের লাউডস্পিকার থেকেও আতিফকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় জঙ্গিদের।

আরও পড়ুন- কাশ্মীরে খুন পণবন্দি বালক

আরও পড়ুন- নিহত কাশ্মীরি শিক্ষকের বন্ধু এ বার জঙ্গি দলে!​

এই সবের মধ্যেই বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঊর্ধ্বশ্বাসে আতিফদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় জঙ্গিদের হাতে আটকে থাকা তার কাকা আবদুল হামিদ মিরকে। বেরিয়ে এসেই তিনি কিছুটা দৌড়ে গিয়ে একটা জায়গায় বসে পড়েন, হাঁফাতে থাকেন। পাশের বাড়ির এক জনের কাছে থেকে চেয়ে ঢকঢক করে কয়েক গ্লাস জল খান। পরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘‘জঙ্গিরা আমাকে বাড়ির ওপর তলায় আটকে রেখেছিল। বলেছিল, পুলিশ বাইরে থেকে গুলি ছুড়লে আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, ওদের (জঙ্গিদের) বাঁচানোর জন্য। তাই আমাকে বাড়ির খোলা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে বলেছিল। ওই সময়েই এক দিকের দরজাটা খোলা রয়েছে দেখতে পাই। আর তা দেখেই দিই ছুট বেরিয়ে আসার জন্য। পিছন থেকে জঙ্গিদের ছোড়া গুলির শব্দ শুনি। কিন্তু তার পরেও যা কপালে আছে, হবে, ভেবে প্রাণপণে সিঁড়ি বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামতে শুরু করি। এই ভাবেই বেরিয়ে আসি বাইরে।’’

অন্ত্যেষ্টির জন্য নিয়ে আসার পথে আতিফ শফির দেহ। ছবি- পিটিআই

এর পরেই পুলিশের গুলির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবে না বুঝে আটকে রাখা আতিফকে গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। পরে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ওই দুই লস্কর জঙ্গির দেহও।

বান্দিপোরা পুলিশের এসএসপি রাহুল মালিক বলেছেন, ‘‘ওই বাড়িতে লস্কর জঙ্গিরা লুকিয়ে ছিল তিন দিন ধরে। শুক্রবার ওই বাড়ি থেকে তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আতিফ ও দুই জঙ্গির। শুক্রবার বিকেলেই অন্ত্যেষ্টি হয় আতিফের।’’

আতিফের অন্ত্য়েষ্টিতে তার এক বন্ধু। ছবি- এপি

আতিফের অন্ত্যেষ্টিতে আসা প্রতিবেশীদের চোখ ভরে ছিল জলে। তাঁরা জঙ্গিদের দোষারোপ তো করছিলেনই, তোপ দাগছিলেন পুলিশ-সহ নিরাপত্তাবাহিনীর দিকেও। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুলি‌শ কেন ওই শিশুটিকে বাঁচাতে পারল না?’’

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে ‘মানবঢাল’ বানানোর অভিযোগ রয়েছে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধেও। গত বছর কাশ্মীরে এমনই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এক সেনা অফিসার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy