—ফাইল চিত্র।
পকেট খালি। অথচ গ্রামেও কাজ বাড়ন্ত। পরিস্থিতির এই চাপেই সংক্রমণের ঝুঁকি, প্রবল অনিশ্চয়তা আর দুর্ভোগ মাথায় করেও ফের শহরমুখী শ্রমিকদের এক বড় অংশ।
এক্সএলআরআই-এর অর্থনীতির অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দরের কথায়, “লকডাউন ঘোষণার পরে যে কোনও মূল্যে গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। কাজ খোয়ানো যেমন তার কারণ, তেমনই ওই অনিশ্চিত সময়ে আগে নিজের জায়গায়, পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন তাঁরা।” ইঙ্গিত, গত কয়েক মাস পরিবারের সঙ্গে কাটানোর পরে করোনা-কালের রোগজনিত অনিশ্চয়তা এখন কিছুটা গা-সওয়া। বরং দিন-দিন কঠিন হচ্ছে সংসার চালানো। তাই শহরমুখী হতে হচ্ছে বাধ্য হয়েই। তখন যেমন শ’য়ে শ’য়ে মাইল হেঁটে বাড়ির পথ ধরতে দেখা গিয়েছিল, সম্প্রতি তেমনই ওই শ্রমিকদের ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে শহরের রাস্তায়।
এনআইপিএফপি-র অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তী বলেন, “সঙ্কট সামাল দিতে শুরুতেই সরকারের উচিত ছিল দিন আনা-দিন খাওয়া মজুর, পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ খোয়ানো কর্মীদের হাতে টিকে থাকার মতো নগদটুকু জোগানো। তা হলে হয়তো এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ খুঁজতে শহরে ফিরতেন না সকলে।” তাঁর প্রশ্ন, নগদ জোগালে সহজে পরিযায়ী শ্রমিকেরা শহরে ফিরবেন না জেনেই কি সে পথে হাঁটেনি কেন্দ্র?
আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পক্ষেই মত ডাক্তারদের
আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন, মেট্রো এখনই চালাবে না রেল
মোদী সরকারের যুক্তি, এই ঘোর অনিশ্চয়তার সময়ে হাতে নগদ জোগালেও তাতে অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার সম্ভাবনা ছিল অল্প। কারণ, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেই টাকা খরচ না-করে যথাসম্ভব সঞ্চয় করতেন সাধারণ মানুষ। ফলে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিতে চাহিদার চাকা ঘুরত না। কিন্তু লেখার বক্তব্য, এই মুহূর্তে অর্থনীতির অসুখ চাহিদার অভাবই। দরিদ্র মানুষের হাতে টাকা এলে, তার একটা অংশ অন্তত তাঁরা খরচ করতেন কেনাকাটায়। তাতে চাহিদা কিছুটা চাঙ্গা হত। তার দৌলতে কল-কারখানায় কাজে ফিরতে পারতেন অনেক বেশি কর্মী। তা ছাড়া, গ্রামেও কাজ বাড়ন্ত।
কর্মী সংগঠন সিটু-র নেতা তপন সেনের অভিযোগ, “শহরাঞ্চলে বহু কল-কারখানা চলছে অর্ধেক উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে। কর্মী লাগছে কম। আবার সরকার যতই একশো দিনের কাজে বাড়তি টাকা জোগানো আর প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা নিয়ে ঢাক-ঢোল পেটাক, চাহিদার তুলনায় কাজের সংখ্যা নগণ্য গ্রামেও। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। বহু বাড়িতে হাঁড়ি না-চড়ার জোগাড়। তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও অনিশ্চিত জীবিকার খোঁজে অনেকে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন শহরে।”
উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯ অগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে গ্রাম ও শহরে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ৮.৩৭% এবং ৯.৩১%। ২ অগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে যা ছিল ৬.৪৭% এবং ৮.৭৩%। অর্থাৎ, দু’জায়গাতেই বেকারত্ব ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু শহরের থেকেও তার গতি বেশি গ্রামে।
শ্যাম সুন্দরের মতে, গ্রামে রোজগারের পথ মূলত চারটি। কৃষি ক্ষেত্রে খরিফ শস্য বোনার কাজ শেষের পরে সেখানে এখন কর্মী লাগছে কম। পশুপালন ইত্যাদিতে নতুন কাজের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা অল্প। গ্রামীণ পরিকাঠামো নির্মাণ— নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ এ ক্ষেত্রে নেহাতই কম। আর একশো দিনের কাজের মতো প্রকল্পে প্রয়োজনের তুলনায় কাজের সুযোগ সামান্য। তাঁর কথায়, “পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই শহরে যে মজুরি পান, গ্রামে তার তুলনায় রোজগার অনেক কম। শহুরে জীবনযাত্রাতেও অভ্যস্ত তাঁরা। তাই তিরুপুরের বস্ত্র কারখানা কিংবা পুণে-চাকনের শিল্প ক্লাস্টার থেকে যখন কারখানার মালিক কিংবা ঠিকাদারেরা ফের কাজে ডেকে পাঠান, তখন সেই হাতছানি উপেক্ষা করতে পারছেন না তাঁরা। উপরন্তু সঙ্গে জুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিচিতদের। অনেকে যাচ্ছেন সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কাজ খুঁজবেন বলেও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy