উজ্জয়িনীতে পুলিশ হেফাজতে বিকাশ দুবে। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
গাড়ির গায়ে তাকে ঠেসে ধরেছে পুলিশ। আর সাদার উপরে ডোরাকাটা ফুলহাতা গেঞ্জি, নীল সার্জিকাল মাস্ক পরা, ভারী চেহারার লোকটা সেই অবস্থায় চেঁচিয়ে উঠেছে, ‘‘ম্যায় বিকাশ দুবে হুঁ, কানপুরওয়ালা।’’ কথা শেষ হতে না-হতেই পিছন থেকে এক পুলিশের সপাট থাপ্পড় এসে পড়ছে তার গালের নীচে। মুখ বন্ধ রাখার অস্পষ্ট নির্দেশ-সহ।
টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ বেলা গড়াতেই ছড়িয়ে পড়ল এই ভিডিয়ো। সঙ্গে ‘ব্রেকিং নিউজ়’— মধ্যপ্রদেশে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে গ্রেফতার হয়েছে উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। ধরা পড়েছে তার দুই শাগরেদও। পাঁচ দিন আগে কানপুরের বিকরুতে এই বিকাশকে ধরতে গিয়েই তার গ্যাংয়ের গুলিবৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ডিএসপি-সহ আট পুলিশ। সেই ইস্তক গোটা দেশের পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছিল তাকে। বিকাশের সন্ধান দেওয়ার পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছিল ৫ লক্ষ।
দিন দুয়েক ধরেই বিকাশের সঙ্গীরা কেউ ধরা পড়ছিল পুলিশের গুলিতে জখম অবস্থায়, কারও জীবন শেষ হচ্ছিল এনকাউন্টারে। চার রাজ্যে পর-পর আস্তানা বদলের পরে আজ উজ্জয়িনীতে শেষ হল বিকাশের দৌড়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানাচ্ছেন, আজ সকাল ৭টায় মহাকাল মন্দিরের পিছনের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢোকে বিকাশ। মন্দিরের ঢোকার সময়েই এক দোকানদার চিনে ফেলেন তাকে। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের খবর দেন তিনি। বেরোনোর সময়ে রক্ষীদের প্রশ্নের মুখে প্রথমে ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখায় বিকাশ। কিন্তু তাঁদের বোকা বানাতে পারেনি। ক্রমশ রক্ষীদের সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতিতে জড়ায় বিকাশ। এর পরেই তাকে আটক করে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। যদিও কেউ কেউ বলছেন, পুজো দেওয়ার জন্য নিজের নামেই আড়াইশো টাকার স্লিপ কাটিয়েছিল বিকাশ। কোথায় ব্যাগ রাখা যাবে, জানতে চেয়েছিল এক ব্যক্তির কাছে। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে নাকি মন্দির চত্বরেই ঘোরাফেরা করছিল সে।
এই কথা শুনে অভিজ্ঞ পুলিশকর্মীদের একাংশ-সহ কেউ কেউ মনে করছেন, ইচ্ছে করেই হয়তো ধরা দিয়েছে বিকাশ। পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হোক, এমনটা চায়নি সে। সম্ভবত সেই কারণেই প্রকাশ্যে চেঁচিয়ে নিজের পরিচয় দিয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, গ্রেফতারির পরে মহাকাল থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও একই ভাবে ‘‘ম্যায় বিকাশ দুবে’’ বলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে সে।
উত্তরপ্রদেশের আইপিএস অফিসার অমিতাভ ঠাকুর যেমন টুইটারে দাবি করেছেন, আত্মসমর্পণ করেছে বিকাশ। কেন তাকে সরাসরি গ্রেফতার করা গেল না, তার তদন্ত চেয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, ‘‘বিকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে নাকি আত্মসমর্পণ, তা সরকারের স্পষ্ট করা উচিত। তার মোবাইলের কল রেকর্ড প্রকাশ্যে আনা হোক, যাতে বিকাশের সঙ্গে কারা যুক্ত, তা জানা যায়।’’
বুধবারই ফরিদাবাদের একটি হোটেল থেকে চম্পট দেয় বিকাশ। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজস্থানের কোটা থেকে নিজের গাড়িতে চেপে সরাসরি উজ্জয়িনীতে গিয়েছিল সে। তবে হরিয়ানা, রাজস্থানের সীমানায় কড়া পুলিশি প্রহরা পেরিয়ে সে কী ভাবে মধ্যপ্রদেশে ঢুকে পড়ল, গ্রেফতারির পরেও তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
বিকাশ কাদের কাছ থেকে ‘নিরাপত্তা’ পেত, তা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। তাঁর বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিন মাস আগে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। কুখ্যাত অপরাধীদের তালিকায় বিকাশের নাম যুক্ত করা হয়নি। এত বড় ঘটনার পরেও অভিযুক্তের উজ্জয়িনী পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়াটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার গলদ স্পষ্ট করে দিয়েছে। এমনও ইঙ্গিত মিলছে যে, জোগসাজশের শিকড় অনেক গভীরে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জানান, এ বিষয়ে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। বিকাশকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আজ পৃথক দু’টি এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে বিকাশের দুই শাগরেদ। তাদের মধ্যে কার্তিকেয় ওরফে প্রভাতকে গত কাল ফরিদাবাদ থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, কানপুরে ফেরার পথে পাঙ্কি অঞ্চলে গাড়ির চাকা বদলের সময়ে এক পুলিশকর্মীর পিস্তল ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে প্রভাত। পুলিশ গুলি চালালে গুরুতর জখম হয় সে। পরে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। আর এক দুষ্কৃতী, প্রবীণ ওরফে বাউয়া দুবে এটা-য় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়।
বিকাশের গ্রেফতারের পরে নিহত কনস্টেবল জিতেন্দ্রর বাবা তিরথ পাল দাবি করেছেন, যে সমস্ত পুলিশকর্মী বিকাশকে সাহায্য করে সহকর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক। ইতিমধ্যেই অভিযানের খবর ফাঁস করায় স্থানীয় এসএইচও বিনয় তিওয়ারি-সহ একাধিক পুলিশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy