কোনও মহিলা একা রাস্তায় থাকলে পৌঁছে দেবে পুলিশ। ছবি-টুইটার থেকে নেওয়া।
হায়দরাবাদে চিকিৎসক তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর, রাতের রাস্তায় মহিলাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে ফেলল পঞ্জাব আর মহারাষ্ট্রের দুটি শহর। রাতে কোনও মহিলা একা রাস্তায় থাকলে, তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিল লুধিয়ানা আর নাগপুর পুলিশ। কলকাতা পুলিশ কিন্তু এ ধরণের কোনও পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা এই মুহূর্তে ভাবছে না।
রবিবার ১ ডিসেম্বর লুধিয়ানার পুলিশ কমিশনার রাকেশ আগরওয়াল ঘোষণা করেন— রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যদি কোনও মহিলা রাস্তায় একা থাকেন, এবং গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য কোনও নিরাপদ পরিবহণ পাচ্ছেন না এমন পরিস্থিতি হয়, তা হলে তিনি পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। দুটি হেল্পলাইন নম্বরও তিনি ঘোষণা করেন। একটি মোবাইল নম্বর এবং অন্য নম্বরটি ১০৯১। তিনি জানিয়ে দিলেন, যে কোনও মহিলা ওই নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইলে পুলিশের গাড়ি তাঁকে নিরাপদে, বিনা খরচায় গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। মহিলাদের জন্য একই রকম পরিষেবা চালু করেছে নাগপুর পুলিশও।
গত কয়েক দিনে লুধিয়ানা পুলিশের পরিষেবার ওই হেল্পলাইন নম্বর-সহ মেসেজটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। অন্য অনেক শহরেই প্রচার ছড়ায় যে, সেই শহরের পুলিশ ওই পরিষেবা চালু করেছে। লুধিয়ানা পুলিশ জানাচ্ছে, পরিষেবা চালু হওয়ার পর শহরের তুলনায় বাইরে থেকেই বেশি ফোন পেয়েছে তারা। এমনকি শুধু পঞ্জাব নয়, কেরল-মহারাষ্ট্র-উত্তরপ্রদেশ থেকেও কয়েকশো ফোন পেয়েছে লুধিয়ানা পুলিশ।
এই ভুল বার্তা ছড়ানোর তালিকায় রয়েছে কলকাতাও। গত দু’দিন ধরে লুধিয়ানা পুলিশের দেওয়া নম্বরটি দিয়েই মেসেজ ছড়িয়ে পড়ে— এই নম্বরে ফোন করলে, রাতের কলকাতায় মহিলাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে পুলিশের গাড়ি।
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, এমন কোনও পরিষেবা চালু হয়নি। এ রকম কিছু চালু করার পরিকল্পনাও আপাতত তাঁদের নেই। তবে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য উইনার্স বাহিনীর পাশাপাশি মহিলা পুলিশ কর্মীদের নিয়ে বিশেষ বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা। এর আগেই মহিলা অফিসারদের দিয়ে অফিস পাড়া, পার্ক স্ট্রিটের মতো জায়গায় বিশেষ টহলদারি চালু করেছিল কলকাতা পুলিশ। সেই টহলদারির পরিধি এখন গোটা শহর জুড়ে করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে লালবাজার জানাচ্ছে, আলাদা কোনও পরিকাঠামো তৈরি না হলেও, বর্তমান ব্যবস্থাতেই রাতের রাস্তায় কোনও মহিলা সমস্যায় পড়ে ১০০ নম্বরে ফোন করলে সাহায্যে ছুটে যাওয়া হয়, এর পরও তা হবে।
আরও পড়ুন-আমার স্বামীকে যাঁরা খুন করেছেন, তাঁদেরও হত্যা করুন, বলছেন অভিযুক্তের স্ত্রী
আরও পড়ুন-‘বেত মারল, ছুরি চালাল, তার পর আমার গায়ে পেট্রল জ্বালাল’
কিন্তু কেন লুধিয়ানা বা নাগপুরের মতো আলাদা পরিকাঠামো গড়ে এই বিশেষ পরিষেবা চালু করছে না কলকাতা পুলিশ? এ প্রশ্নের জবাবে এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা বলেন, লুধিয়ানা বা নাগপুরের মতো ছোট শহরে যা সম্ভব, তা কলকাতা বা দিল্লির মতো শহরে সফল করা সম্ভব নয়। কলকাতা পুলিশের মূল লক্ষ্য অপরাধ দমন, যাতে এ ধরণের অপরাধ রোখা সম্ভব হয়।
অন্য দিকে নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের সর্বত্র মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একটি নতুন হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সেখানে ফোন করলে, ওই কল সেন্টারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা এবং পুলিশ আধিকারিককে জানানো হবে। তাঁরা যোগাযোগ করবেন ওই মহিলা অভিযোগকারীর সঙ্গে। সূত্রের খবর, গত সোমবার নবান্নে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বার বার সতর্ক করেছেন, যাতে হায়দরাবাদের মতো ঘটনা না ঘটে। আরও নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে, মহিলাদের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy