ছবি পিটিআই।
অন্দরের ফাটল বাড়ছে। বাইরে থেকে নিশানা আরও তীব্র হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হতেই আরও আক্রমণের মুখে পড়ল নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই-এর পরে নরেন্দ্র মোদী জমানায় নির্বাচন কমিশনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হয়েছে। আজ সেই সূত্র ধরেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী অভিযোগ তুলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে একসময়ে ভয় পেতেন অনেকে। সম্মান করতেন। কিন্তু আর সেই দিন নেই।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এ বারের ভোটে বিরোধীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে বারবার নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা। তিনি কমিটির বৈঠক থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ বার শেষ দফার ভোটগ্রহণে বিরোধীদের অভিযোগ, আচরণবিধি মেনে প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেদারনাথ মন্দিরে গিয়ে ধ্যানে বসে কার্যত ভোটের প্রচারই করেছেন। তা সত্ত্বেও চোখ বুজে থেকেছে নির্বাচন কমিশন। বস্তুত আজ মোদী নিজেই কেদারনাথ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁকে পুজো-ধ্যানের অনুমতি দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর দফতর কমিশনের অনুমতি চেয়েছিল। কমিশন অনুমতি দিলেও আদর্শ আচরণবিধি এখনও বলবৎ রয়েছে বলে মনে করিয়ে দিয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী কেদারনাথে গিয়ে সারাক্ষণ টিভিতে উপস্থিত থেকে গোটা দেশে তো বটেই, তাঁর নিজের কেন্দ্র বারাণসীর জন্যও ভোটের প্রচার চালিয়েছেন।
আজ রাহুল বলেন, ‘‘নির্বাচনী বন্ড, ইভিএম, ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ, নমো টিভি, মোদীর সেনা, কেদারনাথের নাটক। পুরো ঘটনা থেকে শ্রী মোদী ও তাঁর দলের সামনে নির্বাচন কমিশনের আত্মসমর্পণ সমস্ত ভারতীয়ের কাছে স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশনকে সাধারণত ভয় ও সম্মান করা হত। এখন আর তা করা হয় না।’’ বিজেপি নেতাদের পাল্টা যুক্তি, ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কমিশনকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতৃত্ব আসলে নিজের হতাশা প্রকাশ করছেন। ভোটে হার স্পষ্ট বুঝে কমিশনের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন।
আজ রাহুলের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুও চিঠি লিখে লাভাসার কথায় কান না দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দুষেছেন। তাঁর অভিযোগ, অশোক লাভাসার মত সংখ্যালঘু হলেও তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। নায়ডুর যুক্তি, সংখ্যালঘু মতকে গুরুত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের মতো সংস্থাকে মানায় না। এ থেকেই স্পষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।
আজ সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হতে উপ-নির্বাচন কমিশনারদের সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে, এই বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে কমিশন কী করবে? কিন্তু কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ভোটগ্রহণ শেষের পরে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ধন্যবাদের সেই তালিকায় দ্বিতীয় নামটিই অশোক লাভাসার। এতে অন্দরমহলের ফাটল মেরামত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীর কেদারনাথ-বদ্রীনাথ সফরের লাগাতার সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বোঝাই যাচ্ছে তখনও লাভাসার মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘গত দু’দিনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর তীর্থযাত্রায় ভোটারদের প্রভাবিত করতে ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করেছেন। এতদিন আমাদের অভিযোগ ছিল, কমিশন ঘুমিয়ে রয়েছে। এ বার আমরা বলতে পারি, কমিশন পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছে। খুবই লজ্জাজনক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy