পুরাতন দিল্লির এক বাজারে। ছবি: পিটিআই।
করোনা-সঙ্কটের মোকাবিলায় লকডাউনের ফলে কোটি কোটি মানুষ রুটিরুজি হারিয়েছেন। তাঁদের সুরাহা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে চলেছে, তা নিয়ে আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রশ্ন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। মুখ্যমন্ত্রীদের প্রশ্ন, গরিব মানুষ থেকে ছোট দোকানদার, ঠিকা শ্রমিক থেকে খেতমজুর, পরিযায়ী শ্রমিক থেকে ছোট-মাঝারি শিল্প, এদের সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রের তহবিল কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় রাজ্যের হাতেও টাকা নেই। ফলে অর্থের জোগান কেন্দ্রকেই দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীদের প্রশ্নের জবাব প্রধানমন্ত্রী সরাসরি না-দিলেও ইঙ্গিত করেছেন, তিনি এখন জীবনের পাশাপাশি জীবিকার দিকেও নজর দিতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, ‘‘এক দিন আমাদের মন্ত্র ছিল ‘জান হ্যায় তো জহান হ্যায়’। এখন মন্ত্র হবে, ‘জান ভি, জহান ভি’।’’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ দাবি তোলেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও রুটিরুজি হারানো মানুষকে সাহায্য করতে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করুক কেন্দ্র। বৈঠকে মমতা বলেন, জাপান জিডিপি-র ২০ শতাংশ, ব্রিটেন ১৫ শতাংশ, আমেরিকা ১০ শতাংশ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যে ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা জিডিপি-র ১ শতাংশেরও কম। মমতা সারা দেশের জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকার ‘ন্যাশনাল ইকনমিক কাম হেলথ প্যাকেজ’ চেয়েছেন। যা দেশের জিডিপির ৬%। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন রাজ্যের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ, ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য টাকা, জিএসটির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩০০ কোটি টাকা ফের চেয়েছেন। এ ছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া, পেনশন, রেশন ব্যবস্থার উপরেও জোর দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দু’তিন দিন অপেক্ষা করুন। কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি
রুটিরুজি হারানো ঠিকা শ্রমিক, খেতমজুর, ছোট দোকানদার, ছোট-মাঝারি শিল্পর জন্য আর্থিক প্যাকেজ
করোনা-মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে অর্থসাহায্য
১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে খেতমজুরদের ফসল কাটার কাজে লাগানো
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ভাবনা, দরকারে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা
কেন্দ্রীয় ঋণ শোধের উপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ
রাজ্যগুলির রাজকোষ ঘাটতি ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫% করতে দেওয়ার দাবি
মমতা আরও দাবি তোলেন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে খেতমজুরদের রবি ফসল কাটার কাজে লাগানো হোক। তাতে খেতমজুরদের যেমন আয় হবে, তেমনই চাষিদেরও খরচ বাঁচবে। সূত্রের খবর, মমতার এই প্রস্তাব শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনেক রাজ্যে খেতমজুরদের সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। মমতা বলেন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দু’মাসের টাকা আগাম দিয়ে দেওয়া হোক। অসংগঠিত ক্ষেত্র, ছোট-মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও কৃষি ক্ষেত্রের বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা হোক।
মমতা ও বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীরা মূলত পাঁচটি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। এক, গরিব, রুটিরুজি হারানো শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীদের সুরাহা দিতে কেন্দ্রকে অর্থ সাহায্য করতে হবে। দুই, কেন্দ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের বেতন দিয়ে যেতে বললেও ছোট শিল্প সংস্থাগুলির পক্ষে দীর্ঘদিন এই দায় নেওয়া সম্ভব নয়। অনেকেই গ্রামে ফিরতে চাইছেন। তাঁদের বিষয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। তিন, রাজ্যের তহবিলে টান পড়েছে। তাই কেন্দ্রীয় ঋণ মেটানো সম্ভব নয়। ছয় মাসের জন্য ঋণ শোধে স্থগিতাদেশ জারি হোক। মমতা আগেও এই দাবি তুলেছেন। চার, রাজ্যগুলিকে বাড়তি অর্থ খরচ করতে গিয়ে বাড়তি ধার করতে হচ্ছে। তাই বাজেটে রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। এই দাবিও মমতা আগেই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। পাঁচ, অত্যাবশ্যক পণ্যের জোগান যাতে অব্যাহত থাকে, তা দেখা হোক। কংগ্রেসের তরফে পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, “সব মুখ্যমন্ত্রী আর্থিক প্যাকেজ ও রাজ্যের জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবি তুললেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।” প্রসঙ্গত, এ দিন অধিকাংশ রাজ্যের তরফে রাজস্বের কথা মাথায় রেখে মদের দোকান খুলতে দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy