Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Swami Chinmayanand

চিন্ময়ানন্দ ‘যৌন নির্যাতন’ মামলায় নাটকীয় মোড়, পিছু হটলেন ছাত্রী

চাপে পড়ে ওই তরুণী অভিযোগ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে মত সমাজকর্মীদের একাংশের।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ১২:৩৫
Share: Save:

এক বছর যাবৎ আইনি লড়াইয়ের পর প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্বামী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে আনা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থেকে আচমকাই পিছু হটলেন অভিযোগকারিণী আইনের ছাত্রী। এক বছর আগে দেওয়া নিজের বয়ান থেকেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানিয়ে দিলেন, চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগই আনেননি তিনি। আচমকা এই অবস্থান পরিবর্তনে মিথ্যাচারের জন্য তাঁকেই এ বার শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।

ইলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত লখনউয়ের বিশেষ আদালতে মঙ্গলবার হাজিরা দেন ২৩ বছরের ওই এলএলএম পড়ুয়া। সেখানে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কথাই অস্বীকার করেন তিনি। এতে তাঁর বিরুদ্ধেই মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন সরকারি আইনজীবী। বিচারকের কাছে ফৌজদারি আইনের ৩৪০ ধারায় ওই তরুণীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আর্জি জানান। যত শীঘ্র সম্ভব সেই অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে ওই তরুণীকে। বৃহস্পতিবার আবেদনটির শুনানি করবেন বিচারক পিকে রাই।

উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে চিন্ময়ানন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত ছিলেন ওই তরুণী। গত বছর অগস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা ভিডিয়ো বার্তায় প্রথম চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তিনি। সন্ত গোষ্ঠীর ওই প্রভাবশালী নেতা তাঁকে হুমকিও দিচ্ছেন বলে জানান। তার এক দিন পরই নিখোঁজ হয়ে যান ওই তরুণী। এর পর চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে মেয়ের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণীর বাবা। জানান, তাঁদের রীতিমতো হেনস্থা করছিলেন চিন্ময়ানন্দ।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণ ভোটে মায়ার টান কি বিজেপির চাল​

তার প্রায় এক সপ্তাহ পর রাজস্থান থেকে অভিযোগকারিণী ওই তরুণীকে খুঁজে বার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন তিনি। ২০ সেপ্টেম্বর চিন্ময়ানন্দকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সেইসময় পুলিশ জানায়, জেরার মুখে প্রায় সব অভিযোগই স্বীকার করে নিয়েছেন চিন্ময়ানন্দ। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি উপধারাও প্রয়োগ করা হয়ে, যাতে সম্ভোগের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব খাটিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে।

এর পর ওই তরুণীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন চিন্ময়ানন্দ। জানান, অপ্রস্তুত অবস্থায় তোলা একটি ভিডিয়ো নিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন ওই তরুণী। তাঁর কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা হাতাতে চাইছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগকারিণীকে হেফাজতে নেওয়া হয়। মামলা দায়ের হয় তাঁর তিন বন্ধুর বিরুদ্ধেও। ৬ নভেম্বর গোটা মামলায় চার্জশিট জমা দেয় সিট।

তার পর ডিসেম্বর মাসে ওই তরুণীর জামিন মঞ্জুর করে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। এ বছরের শুরুতে জামিন মঞ্জুর হয় চিন্ময়ানন্দেরও। শাহজাহানপুর জেল থেকে বেরোতেই সেখানে মহা সমারোহে তাঁকে স্বাগত জানান সমর্থকরা। চিন্ময়ানন্দের জামিন মঞ্জুর করার সময় হাইকোর্টের জানায়, অভিযোগকারী তরুণী ও চিন্ময়ানন্দ, দু’জনেই প্রয়োজনে পরস্পরকে ব্যবহার করেছেন। এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানপুর থেকে মামলাটি লখনউয়ের বিশেষ আদালতে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেখানেই মঙ্গলবার অভিযোগ থেকে পিছু হটেন ওই তরুণী।

আরও পড়ুন: মনরেগার ধাঁচে এ বার শহরেও রোজগার প্রকল্প​

কিন্তু চাপে পড়েই ওই তরুণী অভিযোগ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি নারী অধিকার সংক্রান্ত কাজে যুক্ত থাকা একাধিক সমাজকর্মীর। তাঁদের মতে, প্রতি পদে উত্তরপ্রদেশ সরকার ওই তরুণীর লড়াইয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাঁর গোটা পরিবারের উপর লাগাতার চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। অভিযুক্তের প্রভাব ও প্রতিপত্তির সামনে তাই মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE