Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kangana Ranaut

‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি’, রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়ে বিস্ফোরক কঙ্গনা

মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইটা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন কঙ্গনা রানাউত।

রবিবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারির বৈঠকে কঙ্গনা রানাউত। ছবি: সংগৃহীত। 

রবিবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারির বৈঠকে কঙ্গনা রানাউত। ছবি: সংগৃহীত। 

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩৬
Share: Save:

নিজের কর্মস্থল মুম্বইতে নিরাপদবোধ করছেন না। সুশান্ত সিংহ রাজপুত-কাণ্ডে মুখ খোলার জন্যই তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে। উদ্ধব সরকারের নামোল্লেখ না করেও একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ কঙ্গনা রানাউতের।

মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইটা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন কঙ্গনা রানাউত। রবিবার বিকেলে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎসিংহ কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোন রঙ্গোলি রানাউতও। মুম্বইয়ের পালি হিলে কঙ্গনার অফিসের একাংশ ভাঙা এবং তা ঘিরে তীব্র সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের মুখ্য পরামর্শদাতা অজয় মেহতাকে তলব করেছিলেন কোশিয়ারি। সেই বৈঠকে কঙ্গনার মতোই কোশিয়ারিও মত ছিল, পালি হিলের অফিসের একাংশ ‘অবৈধ’ নয়। তবে মুম্বই পুরসভা নিজের যুক্তিতে অনড় থেকেছে। ফলে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের পর ফের কঙ্গনার হাত শক্ত হতে চলেছে, তা মনে করছেন অনেকে।

যদিও রাজ্যপালের সঙ্গে কঙ্গনার ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তা সবিস্তার উল্লেখ না করলেও বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উদ্ধব সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। কঙ্গনার দাবি, ‘‘সুশান্ত-কাণ্ডে মুখ খোলার জন্যই আমাকে নিশানা করা হচ্ছে। হেনস্থা করা হচ্ছে আমাকে। আমি এখানে নিরাপদ নই।’’ সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘মুম্বই আমার কর্মস্থল। আমাকে এখান থেকে উপড়ে ফেলা যাবে না।’’ পাশাপাশি, কঙ্গনা জানিয়েছেন, নিজের প্রতি অবিচারের কথা রাজ্যপালকে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কী রকম অন্যায়-অবিচারের শিকার হতে হয়েছে, তা (রাজ্যপালকে) জানিয়েছি। রাজ্যপাল নিজের মেয়ের মতো আমার কথা মন দিয়ে শুনেছেন। আশা করি, সুবিচার পাব, যাতে এই সিস্টেমের উপর সমস্ত নাগরিকের পাশাপাশি কমবয়সি মেয়েদেরও আস্থা ফিরে আসবে।’’

আরও পড়ুন: ‘আমি ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছিলাম’, কঙ্গনার পুরনো ভিডিয়ো ঘিরে হইচই

রাজ্যপালের পাশাপাশি পুরনো ‘শত্রু’ করণী সেনাকেও পাশে পেয়েছেন কঙ্গনা। পুরনো ‘শত্রুতা’ ভুলে কঙ্গনা রানাউতের পক্ষে তারা মুখ খুলেছিল আগেই। এ বার কঙ্গনাকে যাবতীয় সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিলেন করণী সেনার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। মহারাষ্ট্র সরকার বনাম কঙ্গনা রানাউতের ‘দ্বন্দ্বে’ তাঁরা যে অভিনেতার দিকেই ঝুঁকে রয়েছেন, তা-ও ফের স্পষ্ট করল করণী সেনা। এ দিন মুম্বইয়ে কঙ্গনার বাড়িতে গিয়ে ওই কট্টরপন্থী সংগঠনের আশ্বাস, শহরে তাঁর নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখবেন তারা।

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে আরও সুর চড়ালেন কঙ্গনা। ছবি: সংগৃহীত।

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পরই মুম্বই পুলিশ তথা মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে সরব কঙ্গনা। মুম্বইকে ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’ বলে তোপও দেগেছেন তিনি। তার পরই ‘প্রতিঘাত’ শুরু করে উদ্ধব ঠাকরে সরকার। কঙ্গনাকে মুম্বইতে পা রাখতে দেবেন না বলে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। ঘটনাচক্রে, এর পরই গত ৯ সেপ্টেম্বর কঙ্গনার পালি হিলের অফিসের ‘অবৈধ’ নির্মাণ ভাঙতে শুরু করেছিল শিবসেনা পরিচালিত বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)। কঙ্গনার আবেদনে সাড়া দিয়ে আদালত আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাতে স্থগিতাদেশ দিলেও উদ্ধব সরকারের সঙ্গে অভিনেতার সঙ্ঘাত-বিরতি হয়নি। বরং তা আরও তীব্র মাত্রা পায়। এর পর খারে কঙ্গনার ফ্ল্যাটের ‘বেআইনি’ অংশ ভাঙতে তৎপর হয় বিএমসি। এর পরই একের পর এক টুইটে উদ্ধবের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেন কঙ্গনা। উদ্ধবকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর টুইট ছিল, ‘‘আজ আমার ঘর ভেঙেছে, কাল তোর অহঙ্কার ভাঙবে।’’

আরও পড়ুন: অসুস্থ হয়ে ফের এমসে ভর্তি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ

সঙ্ঘাতের এই আবহে কঙ্গনার পাশে ছিল করণী সেনা। যদিও বছর দুয়েক আগে ‘মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’ ফিল্মের জন্য করণী সেনার রোষের মুখে পড়েছিলেন কঙ্গনা। তবে সে সব অতীতের গর্ভে ঠেলে নয়া প্রেক্ষাপটে কঙ্গনারই ‘সাহায্যদাতা’র ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে করণী সেনাকে। তাঁর সমর্থনে ইতিমধ্যেই গোরক্ষপুরে মিছিল বার করেছে সংগঠনটি। সেখানে সঞ্জয় রাউতের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। সঙ্গে সঞ্জয়ের ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিও জোরালো হয়।

আরও পড়ুন: মূত্রের নমুনায় জল মিশিয়েছেন রাগিনী দ্বিবেদী! নয়া অভিযোগ পুলিশের

আরও পড়ুন: নববিহারের কাণ্ডারী নীতীশ, ভোটমুখী বিহারকে তিন পেট্রোলিয়াম প্রকল্প দিয়ে বললেন মোদী

শুধুমাত্র করণী সেনাই নয়, কঙ্গনার পাশে দাঁড়িয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসও। উদ্ধব ঠাকরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কঙ্গনার সমর্থনে মুখ খুলে ফডণবীস আগেই বলেছিলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু তা যেন রাজ্যের সমস্ত বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রেই হয়। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বলে তাঁকেই (কঙ্গনাকে) নিশানা করা হচ্ছে, এমনটা হওয়া উচিত নয়। এটা কাপুরুষতা, বদলা নেওয়ার মানসিকতা।’’

তবে সংঘাতের অন্যতম চরিত্র সঞ্জয় রাউতের পাল্টা অভিযোগ, বিহার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই সুশান্ত সিংহ রাজপুত-কাণ্ডে কেন্দ্র তথা বিজেপি নেতারা কঙ্গনাকে সমর্থন করছেন। জাতপাতের সমীকরণে বিহারে রাজপুত এবং ক্ষত্রিয় ভোটব্যাঙ্কের টানেই নাকি কঙ্গনার দিকে ঝুঁকেছে বিজেপি। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘এমনটা করতে গিয়ে মহারাষ্ট্রের সম্মান যে ধূলিসাৎ হচ্ছে, তা বিবেচ্য নয়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘যে ভাবে এ রাজ্যকে অপমান করা হয়েছে, তাতে মহারাষ্ট্রের কোনও (বিজেপি) নেতা দুঃখ পাননি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE