কোভিড-১৯ সংক্রমিত দেশের তালিকায় ভারতের নাম প্রথম উঠেছিল গত ৩০ জানুয়ারি। উহান ফেরত এক পড়ুয়ার শরীরে ধরা পড়েছিল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ। তার পর থেকে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরও দু’জন, অর্থাৎ মোট তিন জনের ধরা পড়েছিল ওই সংক্রমণ। সংক্রমিতেরা সকলেই ছিলেন কেরলের বাসিন্দা।
অথচ তার ১১৬ দিন পরে মোট সংক্রমিত রোগীর সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে কেরলের স্থান ১৬ নম্বরে! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত সে রাজ্যে মোট সংক্রমিত রোগী ৮৪৭ জন। ৫২১ জন সুস্থ হয়েছেন। মৃত চার জন। অর্থাৎ, দেশের মধ্যে সব থেকে আগে সংক্রমণ ছড়ালেও গত কয়েক মাসে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে কেরল সরকার। যেখানে পরে সংক্রমণ ছড়ালেও অন্য রাজ্যে হু-হু করে বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত।
কেরলের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের একটি অংশের বক্তব্য, কোনও মির্যাকল নয়। বরং মহামারি রুখতে যা ‘থাম্বরুল’, অর্থাৎ তথ্য-স্বচ্ছতার নীতি মেনেই সংক্রমণ ঠেকানো গিয়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা বা সেই সংক্রান্ত তথ্য চেপে না রেখে জনসাধারণকে জানানোর মাধ্যমে সার্বিক সচেতনতা তৈরি করা গিয়েছে। যার ফল মিলেছে হাতেনাতে। অবশ্য ২০১৮ সালে নিপা ভাইরাস সংক্রমণের সময়েও তথ্যে স্বচ্ছতা রেখেছিল কেরল সরকার।
যে ভাবে বেড়েছে সংক্রমণ
ভারত
• ৩০ জানুয়ারি: ১
• ২৯ ফেব্রুয়ারি: ৩
• ৩০ মার্চ: ১০৭১
• ৩০ এপ্রিল: ৩৩০৫০
• ২৫ মে: ১৩৮৮৪৫
পশ্চিমবঙ্গ
• ১৭ মার্চ: ১
• ১৭ এপ্রিল: ১৬২ (অ্যাক্টিভ)
• ১৭ মে: ১৪৮০ (অ্যাক্টিভ)
• ২৫ মে: ২১২৪ (অ্যাক্টিভ)
তথ্যসূত্র: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর
নিপা ভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও তার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে চিকিৎসকের অন্যতম ভূমিকা ছিল, তিনি হলেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক অনুপ কুমার। বর্তমানে তিনি কোভিড নিয়ন্ত্রণে কেরল সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ দলেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি জানাচ্ছেন, যে কোনও সংক্রমণজনিত রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়ই হল সরকারি তথ্যের স্বচ্ছতা। জনসাধারণকে সেই তথ্য জানানো। অনুপ কুমারের কথায়, ‘‘২০১৮ সালের মে মাসে কালিকট থেকে যখন নিপা ভাইরাস সংক্রমণের খবর এসেছিল, তখনই সরকার নাগরিকদের সতর্ক করার পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও (হু) জানিয়েছিল। এই সমস্ত ক্ষেত্রে তথ্য চাপলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’’
আরও পড়ুন: যোগী সরকারের অনুমতি ছাড়া উত্তরপ্রদেশ থেকে পরিযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে না কোনও
কিন্তু এ দেশের অনেক রাজ্য তো বটেই, এমনকি, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধেও তথ্য চাপার অভিযোগ উঠছে। মূল অভিযোগের তির অবশ্যই চিনের দিকে। গত দু’মাসে (২৬ মার্চ-২৪ মে) সেখানে সংক্রমিত রোগী বেড়েছে ২৫৬৪ জন। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৪৩ জন করে সংক্রমিত হয়েছেন! এই তথ্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরামর্শদাতা তথা ‘দ্য সেন্টার ফর ডিজ়িজ় ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র (সিডিডিইপি) ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণের মতে, “চিন থেকে আসা সব তথ্যই যে অভ্রান্ত, তা বলা যাবে না। কারণ, চিন সরকার বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় নিজের নাগরিকদের গতিবিধি (পপুলেশন মুভমেন্ট) ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’’ মহামারি-অতিমারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জনসাধারণকে জানানোর জন্য হু-র তরফেও বারবার বলা হয়েছে। কারণ, জরুরি পরিস্থিতিতে জনসাধারণ তথ্য চায়। তখন হাতের সামনে যা পায়, তার সত্যতা যাচাই না করেই তা বিশ্বাস করে। হু-র এক গবেষকের কথায়, ‘‘মহামারি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ঠিক তথ্যই হল প্রধান অস্ত্র। বিশেষ করে কোভিড ১৯-এর মতো নতুন সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঠিক তথ্যকে মাধ্যম করেই সরকার জনসাধারণের কাছে পৌঁছতে পারে।’’ ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা ইমিউনোলজিস্ট ইন্দিরা নাথ বলছেন, ‘‘আমেরিকা কিন্তু তথ্য চাপেনি। বরং বিশ্বের সঙ্গে তা ভাগ করে নিয়েছে। তাতে আমেরিকার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়নি। সেখানে আমাদের স্বভাবই তথ্য গোপন করা।’’ এ শহরের কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পড়শি যদি আক্রান্ত হন এবং যদি সে খবর জানতে না পারি, তা হলে আমারও সংক্রমণের ভয় থাকছে। কারণ, তখন নিজের গতিবিধি সম্পর্কে সচেতন হব না। ফলে তথ্য ভাগই এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে বর্মের কাজ করবে!’’
আরও পড়ুন: রাস্তায় গাড়ি থেকে ফেলে প্রতিশোধ নিল মহিষ, ক্যামেরায় ধরা পড়ল সেই দৃশ্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy