Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Ladakh

দক্ষিণ প্যাংগংয়ে চিনা সেনাকে বোকা বানায় পানাগড়ের ‘পাহাড়ি বাহিনী’

ঝটিতি অভিযানের পরিণতিতে এখন থাকুং সেনাঘাঁটির অদূরে হেলমেট টপ থেকে রেচিন লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা ভারতীয় সেনার দখলে।

প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে ভারতীয় সেনার অবস্থান। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে ভারতীয় সেনার অবস্থান। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:১১
Share: Save:

এক মাসের নিপুণ পরিকল্পনা, ঝটিতি সেনা সন্নিবেশ, এমনকি, প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে জাল পতাকার ব্যবহার! অগস্টের শেষপর্বে লাদাখের প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে ভারতীয় ফৌজের নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েমের পিছনে এমন ‘তত্ত্ব’ই উঠে এসেছে। ভারতীয় সেনার পানাগড়-স্থিত মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর (১৭ নম্বর কোর) এই ‘অপারেশনে’ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল বলে সরকারি সূত্রের খবর।

ওই অঞ্চলে ‘অবস্থান’ মজবুত করার পরে ভারতীয় সেনা আলোচনার টেবিলে দর কষাকষিতে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গিয়েছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্যাংগংয়ের দক্ষিণে সেনা তৎপরতার জেরে চিনের তরফে হামলার কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছিল। শুধু লাদাখ নয়, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) এমনকি, সমুদ্রপথেও সম্ভাব্য চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় চূড়ান্ত প্রস্তুতিও নেওয়া হয় সে সময়। ভারতীয় নৌসেনার পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের যুদ্ধজাহাজ এবং বিমানবহর সমুদ্রে যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিল।

চিনা ফৌজের তরফে লাদাখ ছাড়া অন্যত্র হামলার চেষ্টা হয়নি। প্যাংগংয়ের তীরে দু’বার রাতের অন্ধকারে চুপিসাড়ে হামলা চালাতে গিয়ে গিয়ে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতে পিছু হটতে হয় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-কে।

মে মাসের গোড়ায় গালওয়ান উপত্যকা, ডেপসাং, গোগরা, হট স্প্রিংয়ের পাশাপাশি প্যাংগং লেকের উত্তরে বেশ কিছু ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছিল চিনা সেনা। সেখানে এলএসি-র সীমানা নির্দেশক ফিঙ্গার এরিয়া-৮ থেকে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে ফিঙ্গার এরিয়া-৪-এ চলে আসে তারা। পরে আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘বাফার এরিয়া’ তৈরি করতে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও তারা এলএসি থেকে পুরোপুরি পিছু হটেনি। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব লাদাখের গোটা ছ’য়েক এলাকা চিহ্নিত করে পাল্টা আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ভারতীয় সেনা।

ওই সূত্রের খবর, পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরে বেছে নেওয়া হয় প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণের উঁচু এলাকাগুলিকে। অগস্টের গোড়ায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল সভনীত সিংহের নেতৃত্বে শুরু মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিসে শুরু হয় অভিযান। মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের অগ্রবর্তী দলের সেনারা দ্রুত উঁচু এলাকাগুলিতে বিনা বাধায় পৌঁছে গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেন। পরবর্তী পর্যায়ে আনা হয় পাহাড়ে যুদ্ধের উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র এবং সরঞ্জাম।

আরও পড়ুন: ‘বদলাচ্ছে বিশ্ব’, লাদাখ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বণিক সভায় রাজনাথ

১৭ নম্বর কোরের পাশাপাশি প্যারা কম্যান্ডো এবং স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (এসএফএফ)-এর সেনারাও ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। সেনা সূত্রের খবর, চিনা ফৌজকে বিভ্রান্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘জাল পতাকা’। প্যাংগংয়ের দক্ষিণে অভিযানের সময় লাদাখের অন্যত্র চিনা ফৌজ হামলা চালালে তা প্রতিরোধের দায়িত্ব ছিল লেহ্‌তে মোতায়েন ১৪ নম্বর কোরের উপর।

আরও পড়ুন: ‘লোকেশন ট্র্যাকিং’ তথ্য নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা অ্যাপল-গুগলের

লাদাখের সাম্প্রতিক ঘটনাপর্বের আবহে এই ‘উলটপুরাণ’ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। এই ঝটিতি অভিযানের পরিণতিতে এখন থাকুং সেনাঘাঁটির অদূরে হেলমেট টপ এলাকা থেকে রেচিন লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা থেকে চিনা ফৌজের গতিবিধির উপর নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কালা টপ, মুকপরী এবং রেজাংলাও ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে। প্যাংগংয়ের দক্ষিণে স্পাংগুর হ্রদ লাগোয়া উপত্যকায় মোতায়েন চিনা বাহিনীও চলে এসেছে ‘নাগালে’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE