Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

আর্থিক বৃদ্ধি গত ১১ বছরে সর্বনিম্ন

গত আর্থিক বছর, ২০১৯-২০-তে বৃদ্ধির হার ৪.২%-এ আটকে থেকেছে। ২০০৮-এর মন্দার পরে ১১ বছরে আর্থিক বৃদ্ধি এত নীচে নামেনি।

জানুয়ারি থেকে মার্চ, অর্থাৎ গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.১%। ছবি: পিটিআই।

জানুয়ারি থেকে মার্চ, অর্থাৎ গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.১%। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

লকডাউনের আগে থেকেই যে দেশের অর্থনীতি বেহাল ছিল, তার প্রমাণ মিলল। আগামিকাল, শনিবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বর্ষপূর্তি। তার ঠিক আগে আজ সরকারি পরিসংখ্যানই জানাল, জানুয়ারি থেকে মার্চ, অর্থাৎ গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.১%। এই তিন মাসে শুধু শেষ সাত দিন লকডাউন ছিল।

গত আর্থিক বছর, ২০১৯-২০-তে বৃদ্ধির হার ৪.২%-এ আটকে থেকেছে। ২০০৮-এর মন্দার পরে ১১ বছরে আর্থিক বৃদ্ধি এত নীচে নামেনি। নোটবাতিলের আগে ২০১৬-১৭-র ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধির কার্যত অর্ধেক। আজ সরকারি হিসেব জানিয়েছে, মোদী সরকার ২০১৯-২০-তে রাজকোষ ঘাটতিও ৩.৮%-এর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে পারেনি। তা ৪.৫৯%-এ গিয়ে ঠেকেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চের মধ্যরাত থেকে দেশে লকডাউন জারি হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ— তিন মাসের ৯১ দিনের মধ্যে ৭ দিনের লকডাউনেই বৃদ্ধির হার ৩.১%-এ নেমে আসায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের মন্তব্য, “এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি সরকার কেমন অর্থনীতি পরিচালনা করছে।” গোটা এপ্রিল-মে মাসের লকডাউনের পরে অর্থনীতি কোন তলানিতে ঠেকেছে, তারও ইঙ্গিত মিলেছে। শিল্প মন্ত্রকের পরিসংখ্যান জানিয়েছে, এপ্রিলে আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন ৩৮.১% কমেছে।

আরও পড়ুন: সোমবার থেকে লকডাউন কতটা? আজ বলতে পারে কেন্দ্র

এক ঝলকে বৃদ্ধির হিসেব

তখনও করোনা আসেনি। কিন্তু দেশে কেনাকাটায় ধাক্কা, সংস্থাগুলির লগ্নিতে অনীহা এবং বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ গতির প্রভাব যে ২০১৯-২০ সালে ভারতের জিডিপি-তে পড়বে, সেই দেওয়াল
লিখন স্পষ্ট হচ্ছিল বেশ কয়েক মাস ধরে। অর্থবর্ষের একের পর এক মাসে গাড়ি বিক্রিতে ধাক্কা, এমনকি কম দামের বিস্কুটের মতো পণ্যের ঢিমেতালে বিক্রিও চোখ রাঙাচ্ছিল। এ সবের জেরে বছরের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার ছিল নিম্নমুখী। পুরো বছরেও তা যে বেশ কয়েক অর্থবর্ষের মধ্যে সর্বনিম্ন হবে, সেটাও বলছিল মূল্যায়ন সংস্থাগুলি। এই অবস্থায় মার্চের শেষে থাবা বসাল করোনা। যা আটকাতে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করল কেন্দ্র। তার পর থেকে অর্থনীতি ঠিক কতটা ধাক্কা খাবে, সেই প্রশ্নই ঘুরছিল নানা মহলে। শুক্রবার কেন্দ্র জানাল, ২০১৯-২০ সালে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.২%। যা ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার পর সর্বনিম্ন। গত ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধিও (৩.১%) পৌঁছেছে আট বছরের তলানিতে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্য থেকে স্পষ্ট, করোনা-সঙ্কট ও লকডাউনের আগে থেকেই অর্থনীতি হোঁচট খেতে খেতে এগোচ্ছিল। বাজারে চাহিদা ছিল না। নতুন লগ্নিও আসছিল না। আগে বলা হয়েছিল, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে বৃদ্ধির হার ৪.৭% ছুঁয়েছিল। আজ সরকার নিজেই তা কমিয়ে ৪.১% করেছে। জানুয়ারি-মার্চে বাজারে কেনাকাটার খরচ বেড়েছে মাত্র ২.৭%। যা দেখে নতুন লগ্নি বোঝা যায়, সেই মূলধনী পণ্য বা কারখানার যন্ত্রপাতিতে খরচ কমেছে ৬.৫%।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফার ব্যর্থতা ঢাকতে চায় বিজেপি

এই সব খরচ আরও কমবে বলে মনে করেন প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন। কারণ, লকডাউনের সময় রোজগার কমলেও, প্রথম দিকে মানুষ সঞ্চয়ের টাকা খরচ করে আগের মতোই কেনাকাটা করতে চাইবেন। তার পর তা ফুরিয়ে এলে মাস ছয়েক পরে রোজগার কমে যাওয়ার আসল ছবিটা স্পষ্ট হবে। এপ্রিল, মে মাসে রফতানিও ভাল হয়নি। আর্থিক বৃদ্ধিতে এ সবের ধাক্কা কতখানি লাগবে, তা নির্ভর করছে সরকার কতখানি রাজকোষ থেকে খরচ করছে।

দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করছিলেন। দেখা যাচ্ছে, তাতে সরকারি খরচ মাত্র ২ লক্ষ কোটি টাকার মতো। গত বছরেই রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েও তা পূরণ করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। এ বছর লকডাউনের ফলে রাজস্ব আয় কমবে। সরকার কতখানি খরচ বাড়াতে পারবে? প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য রথীন রায়ের টুইট, “১৫ মাস আগে রাজকোষের সঙ্কট নিয়ে সতর্ক করেছিলাম। এখন সঙ্কটের সময়ে তা স্পষ্ট। আশা করি, রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরা এ বার মূল্যায়ন করবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi GDP Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE