মরিয়া: টাকা নেই। জুটছে না খাবার। তাই লকডাউনের মেয়াদ বাড়লেও তাঁরা চান বাড়ি ফিরতে। মঙ্গলবার বান্দ্রা (পশ্চিম) স্টেশনের পাশে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের বিক্ষোভ।ছবি: পিটিআই।
মার্চে চার ঘণ্টার নোটিসে আচমকা লকডাউন ঘোষণার পরে দিল্লির আনন্দবিহার বাস টার্মিনালে বাড়ি ফিরতে চাওয়া ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের ভিড় উপচে পড়েছিল। ঘরে ফিরতে চাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল গুজরাতের সুরতেও। সেই স্মৃতি উস্কে দিয়ে এ বার ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের ভিড় মুম্বইয়ের বান্দ্রায়। শ্রমিকদের দাবি, সরকার হয় বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুক, না-হলে দু’বেলা ভরপেট খেতে দিক। বিক্ষোভ সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আটকে পড়া শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা মহারাষ্ট্রে। সেখানে এই জমায়েত নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
বান্দ্রায় ঘটনার পরে বৈঠকে বসেন উদ্ধব। পরে তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন মানে লক-আপ নয়। আপনারা ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক হলেও আমার রাজ্যে আপনারা সুরক্ষিত। উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।’’ বিক্ষোভ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, কেউ শ্রমিকদের বুঝিয়েছিলেন, ১৪ এপ্রিলের পরে ট্রেন চালু হবে। তাই আজ তাঁরা স্টেশনে চলে এসেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে উদ্ধবের সঙ্গে কথা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের।
বান্দ্রার ঘটনার পরে কেন্দ্রের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশ্ন, ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকরা খেতে না-পাওয়ার অভিযোগ করছেন কেন? তাঁদের ঘরে ফেরা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, ওই শ্রমিকেরা যে রাজ্যে রয়েছেন, সেখানেই তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: কিছু ছাড় মিললেও, ৩ মে পর্যন্ত ঘরেই বন্দি গোটা দেশ
এ দিন বেলার দিকে পটেল নগরী এলাকার বস্তিতে বসবাসকারী শ্রমিকেরা বান্দ্রা (পশ্চিম) রেলস্টেশনের কাছে বাসডিপোয় জড়ো হন। এঁদের বড় অংশই দিনমজুর। পুলিশ জানিয়েছে, বিকেল ৩টে নাগাদ বাসডিপোয় হাজার খানেক শ্রমিক জড়ো হন। যদিও স্থানীয়দের মতে, সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। শ্রমিকেরা দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি ফেরার জন্য সরকার যানবাহনের ব্যবস্থা করুক। ওই শ্রমিকদের বেশির ভাগই উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। মালদহের আসাদুল্লা শেখ বলেন, ‘‘লকডাউনের গোড়ার দিকেই আমাদের জমানো টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন কী খাব? আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হোক।’’ বান্দ্রা থেকে মালদহের অন্য এক শ্রমিক আতাউর রহমান বললেন, ‘ ‘খেতে পাচ্ছি না, আরও ১৯ দিন কী ভাবে কাটাব!’’ বাস-ট্রেনের ব্যবস্থা না-হওয়ায় রাস্তাতেই বসে পড়েন তাঁরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেখে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বান্দ্রার ঘটনার জন্য সরাসরি কেন্দ্রকে দুষে উদ্ধব-পুত্র তথা পর্যটন মন্ত্রী আদিত্যের টুইট, ‘‘বান্দ্রার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। কিন্তু যা ঘটল এবং সুরতে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা— সবই কেন্দ্রের ব্যর্থতা। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, সে ব্যাপারে কেন্দ্র সঠিক দিশা দিতে পারেনি।’’ বিজেপি আবার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উদ্ধব-সরকারকে নিশানা করেছে।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী, ভর্তি বাঙুরে
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy