Advertisement
E-Paper

পাহাড় চুড়ো খুইয়ে যুদ্ধের হুমকি চিনের, ফের গুলি নিয়ন্ত্রণরেখায়

লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে।

সোমবার সন্ধে ৬টা। মুখপারি চুড়োতে ভারতীয় সেনার মুখোমুখি চিনা সেনা। ছবি: পিটিআই

সোমবার সন্ধে ৬টা। মুখপারি চুড়োতে ভারতীয় সেনার মুখোমুখি চিনা সেনা। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪৪
Share
Save

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে কেন্দ্র করে তীব্র মাত্রায় পৌঁছল ভারত-চিন সংঘাত। ৪৫ বছর পরে এই প্রথম গুলি চলল লাদাখ সীমান্তে। তা-ও আবার পরপর দু’দিন! দৃশ্যতই ক্ষিপ্ত বেজিং আজ তাদের সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে। পরে সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য আসন্ন শীতের সময়ে লাদাখ অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে উত্তাপ কিছুটা কমানোর বার্তাও দেয়। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার মস্কোয় সাংহাই সম্মেলনের ফাঁকে ভারত ও চিনের বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে প্রস্তাবিত বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

গত কাল গুলি চলেছিল চুসুল সেক্টরের মুখপারি চুড়ো ও রেচিন লা এলাকায়। আজও চুসুল সেক্টরে গুলি চলার খবর মিলেছে। যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। ভারত-চিন সীমান্তে শেষ গুলি চলেছিল ১৯৭৫ সালে অরুণাচলে। সে বার টুলুং লা-তে চিনা সেনার গুলিতে অসম রাইফেলসের চার জওয়ান মারা যান। গত জুনে গালওয়ান এলাকায় দু’দেশের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান মারা গেলেও গুলি চলেনি।

লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। আজ রাতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসার কথা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত ও চিনের ব্রিগেডিয়ারদের মধ্যে হটলাইনে কথা হয়। সূত্রের মতে, গত কালের ঘটনা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।

আরও পড়ুন: রিয়ার গ্রেফতারি নিয়েও কৃতিত্ব দাবি বিজেপির

গত ২৯ অগস্ট রাতে চিন সেনার অভিযান প্রতিহত করে প্যাংগং লেকের দক্ষিণে বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের দখলে এনেছিল ভারতীয় সেনা। যার ফলে রেজিং লা, রেচিং লা, ব্ল্যাক টপের মতো একাধিক প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া গুরুত্বপূর্ণ শিখর ভারতের কব্জায় চলে আসে। ফলে চিনা সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখতে সুবিধে হচ্ছে। এতেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে চিন। তাই ওই এলাকা দখলের উদ্দেশ্যে গত কাল সন্ধ্যা ছটা থেকে সাতটার মধ্যে জনা চল্লিশ চিনা সেনার একটি দল লোহার রড, বর্শা, ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেয়। হামলাকারী চিনা সেনাদের ছবি আজ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সেনা। চিনা সেনার লক্ষ্যই ছিল মুখপারি চুড়ো ও রেচিং লা দখল করা। কিন্তু ভারতীয় সেনা শিখরে অবস্থান করায় চিনা সেনার গতিবিধি ধরে ফেলে সতর্ক হয়ে যায়। ভারতীয় সেনা প্রস্তুত রয়েছে দেখে ফিরে যেতে বাধ্য হয় চিনা সেনা। ভারতীয় সেনার অভিযোগ, ফিরে যাওয়ার আগে তারা শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। পাল্টা জবাব দেন ভারতীয় জওয়ানেরাও। যদিও গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

বেজিং-এর পাল্টা দাবি, গত কাল ভারতীয় সেনা প্যাংগং লেকের দক্ষিণ দিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চিনের এলাকায় প্রবেশ করে। সে সময়ে চিনের টহলদারি বাহিনীকে দেখে তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। পাল্টা পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয় চিনা সেনা। চিনা সেনার ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কম্যান্ডের মুখপাত্র কর্নেল জাং শুলির বক্তব্য, এটি অত্যন্ত গুরুতর সামরিক প্ররোচনা।

আরও পড়ুন: সংসদে চিন নিয়ে সুর চড়ানোর ইঙ্গিত রাহুলের

ওই অভিযোগ খারিজ করে ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, দু’দেশের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক স্তরে আলোচনার মধ্যেই চিনা সেনা আগ্রাসন চালাচ্ছে। গত সোমবার চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় ফরোয়ার্ড পোস্টের কাছে চলে আসে। ফিরে যাওয়ার আগে ভারতীয় সেনাকে ভয় দেখাতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। চিনা সেনার প্ররোচনা ও উস্কানি সত্ত্বেও ভারতীয় সেনা সংযম দেখিয়ে পরিণতমনস্কতার পরিচয় দিয়েছে।

সমরসরঞ্জাম নিয়ে লে-র বিমানঘাঁটিতে নামছে বায়ুসেনার বিমান। ছবি: এএফপি।

এখন প্রশ্ন হল, এর পরে বিষয়টি কোন দিকে যাবে। চিন আজ ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ স্পষ্টতই যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে ভারতকে হুমকি দিয়েছে। লাদাখ সীমান্তে মে থেকেই সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলেও, মাঝে তা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু অগস্টের শেষ থেকে ফের গরম হতে শুরু করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা। গত কালের ঘটনা ও আজ ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর হুমকির পরে পরিস্থিতি তুঙ্গে পৌঁছেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। চিনা মুখপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারতকে গুরুতর ভাবে সতর্ক করছি। তোমরা সীমান্ত পেরিয়েছ! তোমাদের সামনের সারির সেনা সীমান্ত পেরিয়েছে। তোমাদের জাতীয়তাবাদী জনমত সীমান্ত পেরিয়েছে! তোমাদের চিন নীতি সীমান্ত পেরিয়েছে! তোমরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে চিনা সেনা ও চিনের মানুষকে উস্কানি দিচ্ছ। খাদের মুখে দাঁড়িয়ে তোমরা বিপজ্জনক কসরত দেখাচ্ছ!’

চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন-ও কড়া সুরে বলেছেন, ‘‘চিন এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না। আমি এ কথা জোর দিয়ে বলতে চাই যে, ভারতের পক্ষ থেকে চিনের সেনাদের দিকে প্রথম গুলি চালানো হয়েছে।’’ লিজিয়নের বক্তব্য, মতবিরোধ নিরসন করতে শান্তিপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কূটনৈতিক ও সামরিক ভাবে ভারতকে বলেছি অবিলম্বে এই সব বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধ করতে। গুলি ছোড়ার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’’ তবে একই সঙ্গে লিজিয়ন লাদাখে আসন্ন ‘নিষ্ঠুর’ শীতের কথা বলে উত্তাপ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘চার হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার ওই এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ। শীতকালে মানুষ থাকার উপযোগী নয়। আমরা আশা করছি সামরিক ও কূটনৈতিক পথে সেনা কমানো সম্ভব হবে।’’

এই উত্তপ্ত বাক্যবাণের কোনও সরকারি জবাব ভারত দেয়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্র মনে করছে, ২৯ অগস্ট গিরিচূড়ো দখল করে ও গত কাল গুলি চালিয়ে ভারত বেজিংকে যে বার্তা দেওয়ার তা দিয়ে দিয়েছে। বেজিং-এর পক্ষ থেকে চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা সেটাই প্রমাণ করছে। এখন আর সেই উত্তেজনা বাড়াতে চাইছে না ভারত।

ফলে উত্তেজনা প্রশমনে মস্কোয় দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গেল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

India-China Clash India-China Ladakh India China Border

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।