সাক্ষাৎ: চিনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ভারতীয় সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করলেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। মঙ্গলবার লে-র সেনা হাসপাতালে। পিটিআই
পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চোখে-চোখ রেখে দাঁড়ানো অবস্থান থেকে অবশেষে সরে আসতে রাজি হল ভারত ও চিন। তবে আজই চিনা সেনার সংঘর্ষে আহত ভারতীয় জওয়ানদের দেখতে লাদাখে গিয়ে সেনাপ্রধান এম এম নরবণে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, ভারতের পক্ষ থেকে কোনও উস্কানি দেওয়া না-হলেও সীমান্ত পাহারায় বিন্দুমাত্র শিথিলতা দেখানো হবে না।
গত কাল চুসুল-মলডো সীমান্তে বৈঠকে বসেন লেফটেন্যােন্ট জেনারেল হরিন্দর সিংহ ও চিনা মেজর জেনারেল লিউ লিন। সেনা সূত্রে বলা হচ্ছে, ১১ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যে সব এলাকায় দু’দেশের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরানো হবে বাড়তি সেনা ও কামান। তবে কাজটি যে সময়সাপেক্ষ তা মেনে নিয়েছে দু’দেশই। কেন্দ্রের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপ ছোট হলেও সীমান্তে শান্তি ফেরানোর প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন আজ জানান, পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এ ব্যাপারে গত কাল কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে চিন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত কালের বৈঠক নিয়ে আজ বেলা একটা পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি দিল্লি। দুপুরে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য জানার পরেই মুখ খোলে ভারতীয় সেনা। সূত্রের মতে, বেজিং ওই বৈঠককে কতটা ইতিবাচক ভাবে দেখছে, তা আগে দেখে নিতে চাইছিল সাউথ ব্লক।
আরও পড়ুন: স্বার্থের অঙ্কেই ভারত-চিন দ্বন্দ্ব মেটাতে সক্রিয় রাশিয়া
তবে প্যাংগং হ্রদ এলাকায় যে বিপুল সংখ্যক চিনা সেনা বাঙ্কার, নজরদারি চৌকি বানিয়ে বসে রয়েছে, তাদের সরানোর ব্যাপারে কতটা সাফল্য পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে ফিঙ্গার ৪ থেকে ফিঙ্গার ৮-এর বিতর্কিত এলাকায় এত দিন দু’সেনার নজরদারি চালালেও, এখন ভারতের পক্ষে পেট্রোলিং করতে যাওয়াই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনা সেনা যে ভাবে ওই এলাকায় পরিকাঠামো নির্মাণ করে ঘাঁটি বানিয়েছে তাতে কতটা তারা এলাকা ছাড়তে চাইবে তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন সেনাকর্তারা। সেনা সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন পথে গড়ায় তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। এর আগে গত ৬ জুন দু’দেশের সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকেই সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। চিন প্রতিশ্রুতি মতো তাদের তাঁবু ভেঙেছে কিনা তা দেখতে গিয়েই ১৫ তারিখ রাতে আক্রান্ত হন কর্নেল সন্তোষ বাবু এবং তাঁর সঙ্গী জওয়ানেরা। নিহত হন ২০ জন সেনা।
আরও পড়ুন: চিনা পণ্য বর্জনে ঝোঁক, উপদেষ্টার কথা শোনে কে
তাই গত কালের বৈঠকে উত্তেজনা কমার আবহ তৈরি হলেও সীমান্তে পাহারার প্রশ্নে কোনও ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষপাতী নয় ভারত। এখন গালওয়ানের বিতর্কিত এলাকাগুলিতে ভারতের সেনার তুলনায় উঁচুতে, পাথরের আড়ালে রয়েছে চিনা সেনা। রাতের অন্ধকারে তাদের উপরে নজর রাখতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর থার্মাল ইমেজিং যন্ত্র বসিয়েছে ভারত।
সেনাপ্রধান নরবণে আজ লে-তে ১৪ কোরের সেনাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, চিনা সেনা যাতে আর কোথাও অনুপ্রবেশ করতে না-পারে সে জন্য প্রয়োজনে নজরদারি বাড়াতে হবে। আগামিকাল নোবরা সেক্টরে সীমান্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy