Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
India

ডোভালের ফোনে অগ্রগতি, প্রশ্ন রেখেই সেনা সরাল ভারত-চিন

চিনা সেনা কতটা পিছিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট করেনি নয়াদিল্লি।

ফাইল চিত্র। রয়টার্স।

ফাইল চিত্র। রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৪
Share: Save:

অবশেষে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানের সংঘর্ষস্থল বা পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করল চিনা সেনা। গত কাল রাত থেকেই তা শুরু হয়েছে বলে দাবি ভারতীয় সেনার। চিনা সেনা কতটা পিছিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট করেনি নয়াদিল্লি। তবে সেনা সূত্রের খবর, পিপি ১৪ থেকে ১ থেকে ২ কিলোমিটারের মতো পিছিয়ে গিয়েছে চিনা সেনা।

কিন্তু প্রাক্তন সেনাদের মতে, চিনা অনুপ্রবেশের আগে দু’দেশের মধ্যে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ছিল, চিনা সেনা সেখানে না-ফেরা পর্যন্ত একে কোনও ভাবেই সাফল্য বলা উচিত নয়। কেন্দ্রের পাল্টা বক্তব্য, এক দিনেই সীমান্ত বিবাদ মিটবে, এটা আশা করা উচিত নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।

গত ১৫ জুন পিপি-১৪-তে দু’দেশের সেনাদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। তার পর ২২ ও ৩০ জুনের সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক, প্রধানমন্ত্রীর লাদাখ সফর, চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-কে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ফোনের পরে বরফ গলে। সেনা সূত্রে খবর, দু’দেশের সেনার মধ্যে আপাতত তিন কিমি বাফার জ়োন থাকবে বলে ঠিক হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পরে ভারতীয় সেনা গিয়ে দেখবে বাস্তবে কতটা সরেছে চিন।

গালওয়ানের পাশাপাশি, গোগরা হট স্প্রিং ও প্যাংগং হ্রদের উত্তর দিকের অধিকৃত এলাকাতেও চিনা সাঁজোয়া গাড়িগুলি অনেকটাই পিছিয়েছে। কিন্তু সেনা সূত্রের মতে, সেখানে চিনা সেনা ও তাদের তাঁবু এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছে। তাই একে পশ্চাদপসরণ বলতে নারাজ ভারত।

লাদাখের পরিস্থিতি

• সংঘর্ষস্থল (পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪) থেকে চিনা সেনা ১ থেকে ২ কিমি পিছিয়েছে বলে দাবি ভারতীয় সেনার।

• পিপি ১৫ ও পিপি ১৭এ থেকে চিনা সেনা তাঁবু সরিয়ে নিয়েছে।

• তবে গোগরা হট স্প্রিং ও প্যাংগং হ্রদের উত্তরে কেবল কিছু সাঁজোয়া গাড়ি পিছিয়েছে চিন।

• বিরোধীদের অভিযোগ, ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তত ১৮ কিমি ভিতরে ঢুকে বসে আছে চিন। মাত্র ২ কিমি পিছিয়ে লাভ কী!

• চিনা অনুপ্রবেশের আগে যে স্থিতাবস্থা ছিল, বেজিং তা কি মানতে রাজি?

• তা না-হলে নিজেদের এলাকা বাড়িয়ে নিয়ে মানচিত্রে নতুন করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা টানবে চিন।

পূর্ব লাদাখে উত্তেজনা প্রশমনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও একাধিক প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত। প্রাক্তন সেনাদের মতে, সেগুলির সমাধান না-হওয়া পর্যন্ত কখনওই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবে না দিল্লি। প্রথম প্রশ্ন, পিপি-১৪ থেকে কতটা সরেছে চিনা সেনা? কারণ, এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা তাদের দখলে। যার মধ্যে রয়েছে বটলনেক পয়েন্ট বা ওয়াই জংশন। এখান থেকেই পেট্রোলিং পয়েন্ট ১০, ১১, ১১এ, ১২ ও ১৩-তে পায়ে হেঁটে নজরদারি চালাত ভারতীয় সেনা। চিনা সেনার অনুপ্রবেশের কারণে যা আপাতত বন্ধ। ওই এলাকা ফিরে না-পেলে ওই পেট্রোলিং পয়েন্টগুলিও আখেরে হাতছাড়া হবে ভারতের।

আরও পড়ুন: চিন-ভুটান দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না ভারত

দ্বিতীয়ত, রণকৌশলগত ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ গালওয়ান ও সাইয়োক নদীর সঙ্গমস্থলে চিন ঘাঁটি তৈরি করতে চায় বলে আশঙ্কা। চিনা সেনা না-সরলে সেটা গলার কাঁটা হয়ে থাকবে।

তৃতীয়ত, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অন্তত ১৮ কিমি ভিতরে ঢুকে এসেছে চিনা সেনা। প্রাক্তন সেনাদের মতে, ডোকলামের মতো লাদাখেও দু’পা এগিয়ে এক পা পিছোনোর নীতি নিয়েছে চিন। সুতরাং দিল্লির উচিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে ফেরার জন্য বেজিং-কে চাপ দেওয়া।

আরও পড়ুন: মস্কোর দৌত্যে মুক্তি ১০ জন ভারতীয় জওয়ানের

চতুর্থত, প্যাংগং হ্রদের উত্তরের পাহাড়ে ফিঙ্গার চার থেকে ফিঙ্গার আটে সেনা মোতায়েন ছাড়াও বাঙ্কার, রাস্তা, কালভার্ট, রসদ রাখার ঘাঁটি বানিয়েছে চিন। ফলে সেখানে এখন টহল দিতে পারছে না ভারতীয় সেনা। সেখান থেকে চিন আদৌ সরবে কি?

পঞ্চমত, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া দৌলত বেগ ওল্ডি রোডের সমান্তরালে একাধিক স্থানে সেনা মোতায়েনই শুধু নয়, বায়ুসেনা ঘাঁটির অদূরে ডেপস্যাং-এ ঢুকে এখনও ঠায় বসে আছে চিনা সেনা। তাই ৪ মে-র আগের স্থিতাবস্থা না-ফেরা পর্যন্ত দর কষাকষিতে ভারত সাফল্য পেয়েছে এমন কথা বলা উচিত নয়— অভিমত প্রাক্তন সেনা থেকে কূটনীতিকদের।

অন্য বিষয়গুলি:

India China Galwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy