Advertisement
E-Paper

‘ভাইয়া, আমি বাঁচতে চাই’, দাদার গলা জড়িয়ে ধরে শেষ আর্তি উন্নাওয়ের তরুণীর

বোনের শেষ ইচ্ছাকে সম্বল করে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে নতুন লড়াইয়ে নামতে চলেছেন উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের নির্যাতিতার দাদা।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন উন্নাও নির্যাতিতার আত্মীয়েরা। শনিবার। ছবি: রয়টার্স

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন উন্নাও নির্যাতিতার আত্মীয়েরা। শনিবার। ছবি: রয়টার্স

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৫
Share
Save

‘ভাইয়া, আমি বাঁচতে চাই। যদিও জানি, আমি আর বাঁচব না। দেখো, দোষীদের যেন শাস্তি হয়। মৃত্যুদণ্ড হয়।’ শেষ বার দাদার গলা জড়িয়ে ধরে বোনের আর্তি ছিল এটুকুই। জীবন-মৃত্যুর লড়াই শেষ হয়েছে কাল রাতেই। কিন্তু বোনের শেষ ইচ্ছাকে সম্বল করে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে নতুন লড়াইয়ে নামতে চলেছেন উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের নির্যাতিতার দাদা।

আজ সন্ধেয় যোগী ও মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসে কংগ্রেসও। যন্তর-মন্তর থেকে মিছিল করে ইন্ডিয়া গেটের দিকে মশাল নিয়ে মিছিল করেন কংগ্রেসের মহিলা মোর্চার কর্মীরা। হাতে জাতীয় পতাকা। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের কাছে পুলিশ তাঁদের আটকায়। মিছিল ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করলে জলকামান ছোড়ে পুলিশ। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল ভিড় মনে করিয়ে দিচ্ছিল ২০১২ সালের নির্ভয়া বিক্ষোভের দিনগুলো। ১৬ ডিসেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন নির্ভয়া। ওই দিনই নির্ভয়ার খুনিদের ফাঁসি দেওয়ার দাবি তুলেছে কংগ্রেস মহিলা মোর্চা-সহ একাধিক নারী সংগঠন। না হলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।

গত দু’দিন ধরে ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন উন্নাওয়ের বছর তেইশের যুবতী। লখনউয়ের শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে যখন সফদরজং হাসপাতালে আনা হয়, তখনই তাঁর বাঁচার আশা প্রায় নেই বলেই এক রকম জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কাল রাত সাড়ে আটটার পর থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শলভ কুমার জানান, ‘‘রাত ১১টা ১০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হন যুবতী। আধ ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ।’’

ব্রাহ্মণ ‘ধর্ষক’দের শাস্তির দাবিতে অনড় থাকার খেসারত এ ভাবেই দিতে হল লোহার সমাজের মেয়েটিকে। জবানবন্দিতে তিনি বলে গিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আদালতের শুনানিতে যাওয়ার পথে দুই ধর্ষণকারী-সহ পাঁচ জন তাঁকে আটকায়। রাস্তায় ফেলে প্রথমে মারধর করে। তার পর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।

আজ ময়না-তদন্ত ও ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে নির্যাতিতার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন গাজিয়াবাদ প্রশাসনের কর্তারা। পরিবারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, বিমানে বা সড়ক পথে উন্নাও ফেরার। শেষ পর্যন্ত গাড়িতেই ফেরেন তাঁরা। রাতে গ্রামে পৌঁছে যান। পুলিশ আধিকারিক এবং রাজ্য সরকারের দুই মন্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটির দাদা বলেন, ‘‘বোন বারবার বলছিল, দাদা আমি মরতে চাই না। কথা দিয়েছিলাম, বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। তা আর হল না। ওর তো গোটা শরীরটাই জ্বলে গিয়েছে। তাই শেষকৃত্যের পরিবর্তে নিজেদের গ্রামের বাড়ির উঠোনের জমিতেই শুইয়ে দেওয়া হবে ওকে। উপরে গড়ে তোলা হবে বেদি।’’

নির্যাতিতার বাবা আজ তেলঙ্গানার ধাঁচে দোষীদের এনকাউন্টারের দাবিও তুলেছেন। সেই দাবি ওঠে হাসপাতাল চত্বর থেকেই। অনেকেই জড়ো হয়ে প্রতিবাদে শামিল হন। এর আগে সংসদের সামনে প্রতিবাদ জানানো তরুণী অনু দুবে এসেছিলেন। গত রাত থেকেই ছিলেন পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা কুলসুম বেগম। অভিযোগ, ছ’বছর আগে তাঁর মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ক’দিন জেল খেটেই ছাড়া পেয়ে যায় জামাই। উন্নাওয়ের ঘটনা তাঁর মেয়ের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। হতাশ কুলসুম বলছিলেন, ‘‘দেখবেন, কিচ্ছু হবে না। দিনের পর দিন মামলা চলবে। তারপর অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবে। হায়দরাবাদ পুলিশ ঠিক করেছে।’’
আজ হাসপাতালের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন এক মহিলা ও তাঁর মেয়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ওই মহিলা তাঁর চার-পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে অন্যদের সঙ্গেই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। তার পর হঠাৎই নিজের ও মেয়ের শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। বলতে
থাকেন, ‘‘মেয়ে বড় হলে ওর সাথেও তো এ ধরনের অত্যাচার হবে। মা হয়ে আমি তা মেনে নিতে পারব না। তার চেয়ে এখনই মরে যাওয়া ভাল।’’ তবে তিনি দেশলাই কাঠি জ্বালানোর আগেই তাঁকে ধরে ফেলেন পুলিশকর্মীরা।

Unnao Rape Unnao Uttar Pradesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।