Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Hathras Gangrape

‘মেয়ে করোনায় মরলে টাকা পেতে?’

বাড়ির পুরুষরা এখনও যোগীর পুলিশের ভয়ে সিঁটিয়ে।

নির্যাতিতার বাড়িতে প্রিয়ঙ্কা। ছবি: পিটিআই।

নির্যাতিতার বাড়িতে প্রিয়ঙ্কা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

‘‘ও ছিল বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে। সবার আদরের। আর ওকেই দাহ করার আগে একটু হলুদ ছোঁয়াতে পারলাম না! দু’ফোঁটা জল ছিটিয়ে দিতে পারলাম না!’’ বলতে বলতে এবিপি নিউজ়ের ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হাথরসের নির্যাতিতার দিদি।

তিন দিন ধরে নির্যাতিতার বাড়ি, পাড়া-সহ গোটা গ্রাম পুলিশ দিয়ে ঘিরে রেখে টানা হুমকি দেওয়া যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন আজ সকালে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছে। আর তার পরেই বুল গড়হী গ্রামে নির্যাতিতার বাড়িতে পা রাখা এবিপি-র সাংবাদিকের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরিবারের মহিলারা। এক এক করে সকলেই মুখ খুললেন। কান্নাভেজা গলায় কেউ বলছেন, ‘‘কাউকে বিশ্বাস করি না। এত দিন কাউকে ঢুকতে না-দিয়ে আজ কেন দিল?’’ কেউ বলছেন, ‘‘বাড়িতে খাবার নেই। বাজারে পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে না! বাচ্চাগুলোর জন্য দুধ আনতে গেলেও পুলিশ শাসাচ্ছে! ’’

সেই কান্নাই পরে বদলে গেল তীব্র ক্ষোভে। জেলাশাসক বাড়ি বয়ে এসে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন! ‘‘এখানে বসে ডিএম (জেলাশাসক) বলছে, ‘২৫ লাখ টাকা তো পেয়ে গেছ! মেয়ে করোনায় মরলে এই টাকা পেতে?’’’ এত ক্ষণ বুক ছাপিয়ে নেমে আসা ঘোমটার নীচে এক ভাবে কেঁদে যাচ্ছিলেন হাথরস-কন্যার মা। প্রায় সপ্তাহখানেক কিচ্ছু মুখে তোলেননি। শুধুই কেঁদেছেন। সেই কান্নাই থেমে গেল জেলাশাসকের প্রসঙ্গ উঠতে। ‘‘চাই না আমার টাকা, মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিক। ওর দেহটাকে সামনে এনে দিক। কিচ্ছু চাই না! ক্ষতিপূরণের টাকা-বাড়ি সব নিয়ে নিক, আমার মেয়েটাকে একবার দেখাক’’— এ-ও বললেন, ‘‘শাসাচ্ছে সব সময়। হয়তো গ্রামেই আর থাকতে পারব না আমরা। তবে সুবিচার চাই। দোষীদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে।’’ আবার কান্নায় ডুবে গেল মায়ের গলা।

আরও পড়ুন: হাথরসে সিবিআই, নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে কথা রাহুল-প্রিয়ঙ্কার

কথাবার্তায় বার বার ফিরে আসছে সেই রাতের কথা। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মেয়ে মারা যাওয়ার পরেই জেনে গিয়েছিলেন দেহের ময়না-তদন্ত হবে। তার পরে দেহ হাতে পাবেন, এই আশা নিয়ে হাসপাতালের গেটে অপেক্ষায় ছিলেন পরিবারের কয়েক জন। হঠাৎই জানতে পারলেন, পিছনের দরজা দিয়ে দেহ বার করে গ্রামের দিকে রওনা দিয়েছে পুলিশ। রাত দু’টো নাগাদ শববাহী গাড়ি যখন প্রায় শ্মশানের কাছে, তখন খবর পান পরিবারের লোকেরা। মা এবং দিদি বার বার বললেন, ‘‘পুলিশকে বার বার বললাম, এত রাতে হিন্দুদের দেহ দাহ করতে নেই। ভোর পর্যন্ত মেয়েটাকে রাখুন না ঘরের সামনে। পরিবারের লোকেরা একটু দেখুক। হলুদ লাগিয়ে দিই। তা হলে মেনে নেব, ও আমাদেরই মেয়ে। পুলিশ শুনলই না! গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকাতে গেলে কী মার মারল! ওরা কাকে জ্বালিয়েছে? আমাদের মেয়ে তো? বেওয়ারিশ লাশের মতো জ্বালিয়ে দিল কাকে?’’

আরও পড়ুন: ইতিহাসের ‘প্রবীণ’ ছাত্র যখন হাথরসের বর্তমান ‘ভিলেন’

বাড়ির পুরুষরা এখনও যোগীর পুলিশের ভয়ে সিঁটিয়ে। তার মধ্যেই নির্যাতিতার ভাই বললেন, ‘‘আমাদের সব ফোনে ওরা আড়ি পাতছে। কারও সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে না।’’ বললেন, ‘‘শেষ দেখাটা যেমন দেখতে দেয়নি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চাইলে বলল, ইংরেজি পড়তে পারো না, রিপোর্ট কী বুঝবে?’’ বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর তদন্ত চলছে বলে গত তিন দিন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না পুলিশ। নির্যাতিতার ভাইয়ের কথায়, ‘‘‘সিট তো পরশু সব শুনে লিখে নিয়ে গেল।’’ কাল কেউ আসেনি? ‘‘না তো!’’

আগের দিন যোগীর পুলিশের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যাওয়া রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এবং তিন নেতা আজ রাতে হাথরসে যান। তার আগেই কর্তব্য সেরে গেলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি এইচ সি অবস্থি এবং অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র) অবনীশ অবস্থি। নির্যাতিতার বাড়িতে রীতিমতো হাতজোড় করে অনেক কথা বলে এবং শুনে আসা ডিজিপি বাইরে এসেই অন্য রূপ! দেহ সৎকারের আগে পুলিশ কেন পরিবারের অনুমতি নেয়নি? আগের দিন উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার এবং বিজেপি নেতারা যে কথা বলেছিলেন, সেটাই প্রায় আওড়ে ডিজি-ও সব দোষ চাপালেন স্থানীয় পুলিশের উপরেই!

বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ডিজেল ঢেলে মেয়ের দেহ জ্বালানোর দৃশ্যটা দূর থেকে দেখেছেন। গত তিন দিন ধরে সেখানেই পড়ে সাদা-কালো মেশানো কিছু ছাই। ওটাই হাথরসের কন্যার চিতা। সেখান থেকে মেয়ের অস্থি তুলে জলে ভাসানোর সনাতনী নিয়মও মানেনি পরিবারের কেউ। কেন? ‘‘ওর তো চেহারাটাই দেখতে পাইনি শেষ মুহূর্তে, কেন আনব অস্থিভস্ম। ওটা ওরা কাকে পুড়িয়েছে?’’ চোখের জলে ভেসে ফের বললেন মা। একটু পরে অবশ্য মেয়ের চিতা থেকে অস্থি সংগ্রহ করলেন পরিবারের সদস্যরা।

এ বারে জলে ভেসে যাবে লাল শালুতে মোড়া কন্যার চিতাভস্ম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy