Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
National news

উচ্চস্তরীয় বৈঠকে জেনারেল নরবণে, লাদাখে বড় সৈন্য সমাবেশ ভারতের

এলএসি বরাবর চিনা তৎপরতার মুখে ভারত যে চুপ করে বসে থাকবে না, সে বার্তা আগেই দেওয়া শুরু হয়েছিল দিল্লির তরফ থেকে।

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) বরাবর সেনা সমাবেশও বাড়াতে শুরু করল ভারত।

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) বরাবর সেনা সমাবেশও বাড়াতে শুরু করল ভারত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ১৯:৩১
Share: Save:

পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে সর্বোচ্চ সামরিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পরের দিনই আরও তৎপরতা শুরু হয়ে গেল ভারতীয় বাহিনীতে। দেশের স্থলসেনার প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণে বুধবার বৈঠক করলেন বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) বরাবর সেনা সমাবেশও বাড়াতে শুরু করল ভারত। তবে চিনের তরফে এ দিন সুর কিছুটা বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলল। সীমান্তে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দু’দেশেরই রয়েছে— বুধবার এমনই বললেন চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র।

এ দিন নয়াদিল্লিতে জেনারেল নবরণের নেতৃত্বে আর্মি কম্যান্ডারদের বৈঠকটি হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দফতরেই। লাদাখে চিনের সেনা সমাবেশের প্রেক্ষিতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে, এমন কিছু বলা হয়নি মন্ত্রক বা বাহিনীর তরফ থেকে। কিন্তু ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে এবং লাদাখের পরিস্থিতিও যে তার মধ্যেই পড়ছে, সে কথা মন্ত্রক সূত্রে স্পষ্টই জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। এই ধরনের বৈঠক কিন্তু কোনও রুটিন বৈঠক নয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সিডিএস (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) এবং তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে আচমকা বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী, এই ছবি বিরলই। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার প্রয়োজন না হলে এত বড় সামরিক বৈঠক প্রধানমন্ত্রী ডাকেন না বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত।

আরও পড়ুন: দুর্বিপাকের ২০২০: ব্যাপক বিপর্যয়ের চক্রব্যূহে গোটা দেশ

লাদাখে এলএসি (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) বরাবর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি চিনা সামরিক বাহিনীর তৎপরতা আচমকা বেড়ে গিয়েছে। চলতি মাসেই লাদাখে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ায় চিনা সেনা। পরে উত্তর সিকিমের নাকু লা এলাকা থেকেও দুই বাহিনীর মধ্যে সঙ্ঘাতের খবর সামনে আসে। উপর্যুপরি সঙ্ঘাতের খবরে পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, তখনই লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় এলএসি বরাবর চিন বিপুল সৈন্য সমাবেশ শুরু করেছে। তাতেই থামেনি লালফৌজ। প্যাংগং হ্রদের মাত্র ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত তিব্বতের গারি গুনশা বিমানঘাঁটিতে দ্রুত পরিকাঠামো বাড়ানো শুরু হয়েছে। সেখানে যুদ্ধবিমান এনে রাখা হয়েছে বলেও উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে।

এলএসি বরাবর এই চিনা তৎপরতার মুখে ভারত যে চুপ করে বসে থাকবে না, সে বার্তা আগেই দেওয়া শুরু হয়েছিল দিল্লির তরফ থেকে। সীমান্তবর্তী এলাকায় চিন সৈন্যসংখ্যা দ্রুত বাড়ানো শুরু করতেই ভারতও অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো শুরু করে ওই সব অঞ্চলে। বুধবারও অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানোর কাজ চলছে বলে সেনা সূত্রে জানা যাচ্ছে।

তৎপরতা শুরু ভারতীয় সেনার।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক দিনে ভারতীয় বাহিনীর তৎপরতা এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হওয়া সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক বৈঠক স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, ভারত যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য তৈরি হচ্ছে। কূটনৈতিক পথে বিবাদের সমাধান করার ভাবনা দিল্লি ছেড়ে দিয়েছে, এমন নয়। সে পথও খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক পথ ব্যর্থ হলে অন্য যে পথে মোকাবিলা করা দরকার, সেই পথেই মোকাবিলা করা হবে— প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হওয়া বৈঠক সেই বার্তা খুব স্পষ্ট ভাবে দিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

আরও পড়ুন: সীমান্তে চিনা ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান, ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে

চিনের কণ্ঠস্বর অবশ্য ঈষৎ নরম বুধবার। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে যেমন প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈঠকে বসেছিলেন, তেমনই বেজিঙেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সে দিন ভাষণ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য পিএলএ (পিপলস লিবারেশন আর্মি) যেন প্রস্তুত থাকে— নিজের বাহিনীকে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। চিনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রস্তুত হন, প্রশিক্ষণ বাড়িয়ে দিন— পিএলএ-র শীর্ষ পদাধিকারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট চিনফিং। কিন্তু বুধবার চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার উত্তাপ কিছুটা কম।

চিনা মুখপাত্র ঝাও লিচিয়ান বুধবার বলেছেন, ‘‘দুই নেতার মধ্যে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যকে আমরা অনুসরণ করছি এবং দু’দেশের মধ্যে হওয়া সমঝোতাগুলিকে আমরা কঠোর ভাবে পালন করছি।’’ সীমান্তের পরিস্থিতি ‘সামগ্রিক ভাবে স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলেও চিনের তরফে এ দিন মন্তব্য করা হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডং-ও কূটনৈতিক সৌজন্যের বার্তা দিতে চেয়েছেন এ দিন। তিনি বলেছেন, ‘‘...এই দুই দেশ পরস্পরের জন্য অনেক সুযোগ বহন করছে এবং এই দুই দেশ পরস্পরের জন্য বিপজ্জনক নয়।’’

কূটনৈতিক পথ ব্যর্থ হলে অন্য যে পথে মোকাবিলা করা দরকার, সেই পথেই মোকাবিলা করা হবে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হওয়া বৈঠক সেই বার্তা খুব স্পষ্ট ভাবে দিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনা বিদেশ মন্ত্রকের একাধিক প্রতিনিধির তরফ থেকে বুধবার যে বার্তা এল, তা নিঃসন্দেহে উত্তেজনা কমানোর অনুকূল। কিন্তু লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় এলএসি বরাবর হাজার পাঁচেক সেনা যে চিন মোতায়েন করে রেখেছে এবং তিব্বতের বিমানঘাঁটির শক্তিও যে ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা যেমন চলছে, তা চলতেই পারে। কিন্তু এলএসি বরাবর পাল্টা সামরিক তৎপরতা থামিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।

সামরিক তৎপরতা যে থামছে না, সে খবরও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে স্পষ্ট ভাবেই মিলছে। লাদাখে সৈন্যসংখ্য দ্রুত বাড়াতে শুরু করেছে ভারত। বুধবারও সে প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণের নেতৃত্বে উচ্চপদস্থ সেনাকর্তাদের বৈঠকও এ দিনই হয়েছে দিল্লিতে।

চিনের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনও বিমানঘাঁটির পরিকাঠামো যদি চিন দ্রুত বাড়াতে থাকে বা এলএসি বরাবর চিনা অংশে যদি সে দেশ সৈন্য সমাবেশ বাড়াতে থাকে, তা হলে ভারতের এতটা বিচলিত হওয়ার কি কোনও কারণ রয়েছে? চিনা বিদেশ মন্ত্রক তো এ দিনও সৌজন্যের বার্তাই দিতে চেয়েছে, তার পরেও এতটা সামরিক তৎপরতা কি জরুরি ভারতের তরফে? এ সব প্রশ্নও তুলছে কোনও কোনও শিবির।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের কূটনৈতিক বার্তার ধারাবাহিকতা কম। কাশ্মীর ইস্যু হোক বা সন্ত্রাসবাদ, ভারতে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ হোক বা পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া কোনও জঙ্গির উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা— এমন নানা বিষয় নিয়ে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের বয়ান বার বার বদলে গিয়েছে বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কোনও গ্রহণযোগ্য কারণ না দেখিয়েই এক বয়ান থেকে সরে চিন ঠিক উল্টো বয়ান দিয়েছে— এমন একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তাই চিনের বয়ান যা-ই হোক, এলএসিতে চিনের তৎপরতার দিকে নজর রেখেই ভারত সিদ্ধান্ত নেবে, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি যদি অত্যন্ত গুরুতর না হত, তা হলে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক বৈঠকে বসতে হত না, এমনটাও বলছেন একাধিক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা।

—ফাইল চিত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

India China Ladhakh LAC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy