প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রয়াত।
সোমবার বিকেল ৫টা ৪৬ মিনিটে তাঁর পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় টুইট করে বাবার মৃত্যুর খবর জানান।
গত ৯ অগস্ট রাতে দিল্লির রাজাজি মার্গের বাসভবনে শৌচাগারে প্রণববাবু পড়ে যান। তাঁকে দিল্লির সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। অস্ত্রোপচার করার আগে শারীরিক পরীক্ষা করতে গিয়ে শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতির বদলে অবনতি হয়। দু’দিন পরে ৮৪ বছরের প্রণববাবু গভীর কোমায় চলে যান। তাঁকে ভেন্টিলেশনেই রাখা হয়েছিল।
দিল্লির সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সোমবার সকালেই জানিয়েছিলেন, প্রণববাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ফুসফুসে সংক্রমণের জেরে তাঁর ‘সেপটিক শক’ দেখা দিয়েছে। ফুসফুসের সঙ্গে কিডনিতেও সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
আরও পড়ুন: পড়ে রইল ‘জঙ্গিপুর ভবনে’র গ্রন্থালয়, আর আসবেন না তিনি
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রয়াণে কেন্দ্র সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি বিনোদন অনুষ্ঠান হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য কবে ও কোথায় হবে, তা পরে জানানো হবে। তবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কোভিড প্রোটোকল মেনে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ রাজাজি মার্গের বাসভবনে শায়িত রাখা থাকবে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
জীবনপঞ্জি
• ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ জন্ম বীরভূম জেলার কীর্ণাহারের কাছে মিরিটি গ্রামে। বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। মা রাজলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়।
• পড়াশোনা সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে এমএ। পরে এলএলবি।
• আপার-ডিভিশন ক্লার্কের কাজ নেন পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফে। শিক্ষকতা করেন হাওড়া জেলার বাঁকড়া ইসলামিয়া হাইস্কুলে ও পরে বিদ্যানগর কলেজে।
• ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই বিয়ে শুভ্রাদেবীর সঙ্গে।
• ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি প্রথম সন্তান অভিজিতের জন্ম।
• ১৯৬৫-র ৩০ অক্টোবর মেয়ে শর্মিষ্ঠার জন্ম। শর্মিষ্ঠার এক ভাই রয়েছে, ইন্দ্রজিৎ।
• ১৯৬৬ অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলা কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি।
• জুলাই ১৯৬৬ পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ। পরে ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৯ সালেও রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন।
• ১৯৭৩ সালে হন কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী।
• ১৯৮০ কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা।
• ১৯৮২ একাধিক মন্ত্রকের ভার সামলে প্রথম বার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
• ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুর পরে রাজীব গাঁধীর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। কংগ্রেস ছেড়ে গড়েন রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস।
• ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসে মিশে যায় তাঁর দল।
• ১৯৯১ সালে রাজীবের মৃত্যুর পরে ফের রাজনীতির জগতে উত্থান। প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও বসালেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন পদে।
• ১৯৯৫ সালে রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী।
• ১৯৯৮ সালে সীতারাম কেশরীকে সরিয়ে সনিয়া গাঁধীকে কংগ্রেস সভানেত্রী করার মুখ্য কারিগর।
• ২০০৪ সালে জঙ্গিপুর থেকে জিতে প্রথম বার লোকসভার সাংসদ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের।
• ২০০৬ সালে মনমোহন সিংহ সরকারের বিদেশমন্ত্রী।
• ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণ।
• ২০০৯ সালে আবার অর্থমন্ত্রী।
• ২০১২ দীর্ঘ ২৩ বছর কংগ্রেস কর্মসমিতির সদস্য ও ৯৫টিরও বেশি মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য থাকার পরে দলীয় রাজনীতি থেকে অবসর। ইউপিএ-র প্রার্থী হিসেবে ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি।
• ১৮ অগস্ট ২০১৫ পত্নীবিয়োগ।
• ২৫ জুলাই ২০১৭ রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর।
• ৭ জুন ২০১৮ প্রথম বার প্রাক্তন কোনও রাষ্ট্রপতি হিসেব আরএসএসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
• ২০১৯ সালে ভারতরত্ন।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গলবার রাজ্যের সব সরকারি ও সরকার-পোষিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
লোকসভা, রাজ্যসভা, দুই কক্ষেরই সাংসদ, যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি— একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া দেশের প্রায় সব শীর্ষপদেই প্রণব মুখোপাধ্যায় কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: সংগ্রহ করতেন নিজের কার্টুন, রাষ্ট্রপতি ভবনে সে সবের প্রদর্শনীও করেন প্রণব
২২ দিনের যুদ্ধ শেষ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির দলমত নির্বিশেষে অনেকেই মনে করেন, প্রণববাবু প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসলে সেরা প্রধানমন্ত্রী হতেন। এক বছর আগেই তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয়। কংগ্রেসের বাইরেও সব দলে তাঁর জন্য শ্রদ্ধা, গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যক্তিগত হৃদ্যতা ছিল প্রণববাবুর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম সম্পদ। তাঁর প্রয়াণের পরে সব দলের নেতারাই শোকপ্রকাশ করেছেন।
সমস্ত রাজনৈতিক দলে প্রণববাবুর প্রতি শ্রদ্ধার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি বলেন, ‘‘২০১৪-য় আমি দিল্লিতে নতুন এসেছিলাম। প্রথম দিন থেকেই ওঁর পরামর্শ, সাহায্য ও আশীর্বাদ পেয়েছি। ওঁর সঙ্গে আলাপচারিতা চিরকাল মনে থাকবে। কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবনে প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থনৈতিক ও রণকৌশলগত মন্ত্রকে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গিয়েছেন। দুর্দান্ত সাংসদ ছিলেন। সব সময় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেন। সুবক্তা এবং রসবোধও ছিল। রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনকে সাধারণ মানুষের জন্য আরও খুলে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি ভবনকে শিক্ষা, উদ্ভাবনা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র করে তুলেছিলেন।’’ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে প্রণববাবুর বিচক্ষণ পরামর্শ তিনি কখনওই ভুলবেন না।
আরও পড়ুন: ভালবাসতেন, চোখের জলও ফেলিয়েছিলেন
প্রণববাবুর মৃত্যুর খবর ঘোষণার পরেই কংগ্রেস নেতা, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘আমি ওঁর সঙ্গে বহু বছর কাজ করেছি। বিশেষ করে ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছি। অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তি ছিল। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি ছিল। অর্থনীতির বিষয়, সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত বিষয় গভীর ভাবে বুঝতেন। কংগ্রেসে আমাদের জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। উনি এমন এক বিরল ব্যক্তি ছিলেন যে সব বিষয়েই ছাপ রেখে যেতেন।’’
প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা এ দিন টুইট করেন, ‘‘সবারে আমি প্রণাম করে যাই। বাবা, তোমার প্রিয় কবিকে উদ্ধৃত করেই সকলকে তোমার শেষ বিদায় জানাচ্ছি। দেশের, দেশের মানুষের সেবায় তুমি সার্থক জীবন কাটিয়েছ। আমি তোমার মেয়ে হিসেবে জন্ম নিয়েছি বলে আশীর্বাদধন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy