ছবি: এএফপি।
বিস্তর বিতর্ক পিছনে ফেলে অবশেষে ভারতের হাতে আসছে ফরাসি যুদ্ধবিমান রাফাল। আগামী মাসেই প্রথম রাফালটি ভারতের মাটিতে অবতরণ করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন খোদ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাশে নিয়েই এই ঘোষণা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য নতুন মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট রাফালকে বেছে নেওয়ার পরে ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ভারত। মোট ৩৬টি রাফাল কেনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার ঠিক তিন বছরের মাথায় প্রথম রাফালটি ভারতে এসে পৌঁছচ্ছে।
ত্রিদেশীয় সফরে রওনা হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমে গিয়েছিলেন ফ্রান্সে। নানা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মাকরঁর সঙ্গে আলোচনা হয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর। বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার মোদীকে পাশে নিয়ে মাকরঁ জানান, যে ৩৬টি রাফাল জেট ভারত কিনছে, সেগুলির মধ্যে প্রথমটি সেপ্টেম্বর মাসেই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রথম রাফলটি হাতে পেতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধনোয়া সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ফ্রান্সে যেতে পারেন বলেও নয়াদিল্লি সূত্রে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ২৬ অগস্ট পর্যন্ত চিদম্বরমকে গ্রেফতার করতে পারবে না ইডি, অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের
সামরিক পরিভাষায় রাফালকে ‘মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট’ বলা হয়। কিন্তু যে ফরাসি সংস্থা রাফাল যুদ্ধবিমান তৈরি করে, সেই ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’ রাফালকে ‘ওমনিরোল’ এয়ারক্র্যাফ্ট বলতেই বেশি পছন্দ করে। আকাশ থেকে প্রতিপক্ষের এলাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করা, প্রতিপক্ষের এলাকায় আঘাত হানা, আকাশেই প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমানের মোকাবিলা করা, অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, খুব নীচে নেমে এসে স্থলসেনাকে গ্রাউন্ড সাপোর্ট দেওয়া, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ করা এবং পরমাণু হামলা চালানো— এই সব রকমের সক্ষমতা রয়েছে এই যুদ্ধবিমানের। সেই কারণেই একে ‘ওমনিরোল’ এয়ারক্র্যাফ্ট বলতে পছন্দ করে নির্মাতা সংস্থা। এই মুহূর্তে যে সব যুদ্ধবিমান সবচেয়ে শক্তিধর ও অপ্রতিরোধ্য হিসেবে বিবেচিত পৃথিবীতে, রাফাল সেগুলির অন্যতম। এই যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়ার পরে ভারতীয় বায়ুসেনার সক্ষমতা এক লাফে অনেকখানি বেড়ে যাবে বলে সমর বিশারদদের মত। রাফালে সমৃদ্ধ ভারতীয় বায়ুসেনা উপমহাদেশে আরও বেশি সমীহ আদায় করা শুরু করবে।
আরও পড়ুন: বিদেশি বিনিয়োগে অসঙ্গতি! ইডির নজরে এ বার জেট এয়ারওয়েজ কর্তা নরেশ গয়াল
বহু পুরনো হয়ে যাওয়া মিগ-২১ এবং মিগ-২৭ যুদ্ধবিমানগুলিকে ভারতীয় বায়ুসেনা থেকে ধাপে ধাপে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণের পরে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলি অবশ্য এখনও বায়ুসেনায় বেশ কিছু দিন কর্মক্ষম থাকবে। তবে ভারতীয় বায়ুসেনা চায় চিন এবং পাকিস্তানের যৌথ শক্তির মোকাবিলায় সক্ষম থাকতে। সে জন্য বায়ুসেনায় ১০ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান বাড়ানো দরকার।
ফ্রান্স থেকে ভারত রাফাল আনছে মোট ৩৬টি অর্থাৎ ২ স্কোয়াড্রন। বসিয়ে দেওয়া মিগের সংখ্যার তুলনায় সেই সংখ্যা অনেকটাই কম। কিন্তু রাফাল যুদ্ধবিমানগুলির সক্ষমতা মিগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই ৩৬টি রাফালের সব ক’টি হাতে পেয়ে গেলে ভারতীয় বায়ুসেনা অনেক হিসেব বদলে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
যে রাফাল ভারত হাতে পেতে চলেছে, তার বিশেষত্বও রয়েছে। দাসো অ্যাভিয়েশন সাধারণ ভাবে যে রাফাল যুদ্ধবিমান তৈরি করে, ভারত ঠিক সেই সংস্করণটি কিন্তু কিনছে না। ভারতীয় বায়ুসেনার ভূকৌশলগত অগ্রাধিকারের কথা মাথায় রেখেই রাফালে বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। হিমালয়ের সুউচ্চ অংশেও যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতা, বিশেষ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা, রাডার ওয়ার্নি সিস্টেম, লো-ব্যান্ড জ্যামার-সহ নানা প্রযুক্তি আরও শক্তিশালী করে তুলছে ভারতের জন্য নির্মীয়মাণ রাফালগুলিকে।
প্রতিপক্ষের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়া এই যুদ্ধবিমানগুলি সেপ্টেম্বর থেকেই একে একে হাতে আসা শুরু হবে। যে যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিকে ঘিরে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের তুমুল তোপের মুখে পড়েছিল মোদী সরকার, সেই যুদ্ধবিমানকে শেষ পর্যন্ত দেশে আনতে পারা সামরিক আধুনিকীকরণের বড় বিজ্ঞাপনও যে হয়ে উঠবে মোদী সরকারের জন্য, সে-ও বলাই বাহুল্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy