প্রতীকী ছবি
পরিকল্পনা মাফিক সব এগোলে আগামিকালই সম্ভবত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনা প্রতিষেধক ‘কোভিশিল্ড’-এর তৃতীয় তথা শেষ দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে চলেছে দেশে। গত মাসেই এ দেশে মানবদেহে ‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধকটি পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছিল পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। সূত্রের মতে, কাল থেকে এই সংস্থা মানবদেহে পরীক্ষার শেষ তথা তৃতীয় ধাপটি শুরু করতে চলেছে। প্রায় দু’মাস পরীক্ষার শেষে ফলাফল ইতিবাচক হলে এই টিকা দেশবাসীর উপর প্রয়োগের ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে দেশীয় বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এই প্রতিষেধকের।
ভারতে করোনার প্রতিষেধক গবেষণার প্রশ্নে এই মুহূর্তে তিনটি টিকা মানব শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ভারত বায়োটেক ‘কোভ্যাক্সিন’ ও জাইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকোভ-ডি’ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের প্রথম ধাপ পেরিয়েছে। অর্থাৎ টিকাটি আদৌও নিরাপদ কি না তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ বার পরবর্তী পর্যায়ে ওই টিকা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে কি না, সেই পরীক্ষা শুরু করার পথে ওই দুই সংস্থা।
নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল আজ বলেন, ‘‘তৃতীয় সংস্থা হিসাবে সিরাম অক্সফোর্ডের টিকাটির আজ বা আগামিকাল তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে।’’ সিরাম সংস্থার সঙ্গে অক্সফোর্ডের টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর উৎপাদন সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী, মোট উৎপাদনের অর্ধেক ভারতে ব্যবহার করতে চায় পুণের ওই সংস্থা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে অক্সফোর্ডের ওই টিকাটির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ইতিবাচক ফল মিলেছে তাতে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী কোনও বিদেশি সংস্থার টিকা দেশীয় বাজারে ছাড়তে হলে তৃতীয় ধাপে, দেশের জনগণের উপরে তা পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম রয়েছে। সে কারণেই সিরাম ভারতে ‘কোভিশিল্ড’ টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: হোম বন্ধ করতে গিয়ে হেনস্থা এড্স রোগীদের
তৃতীয় দফার এই পরীক্ষায় ১০টি কেন্দ্রে ১৬০০ ব্যক্তির উপরে এটি প্রয়োগ করা হবে। সূত্রের মতে, তালিকায় মহারাষ্ট্রের সঙ্গেই পার্শ্ববর্তী রাজ্য গুজরাতের কিছু হাসপাতালকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি সুস্থ ও নিরোগ স্বেচ্ছাসেবকদের দু’দফায় ওই টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য চোদ্দো দিন তাঁদের অন্তরালে রাখা হবে। এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হবে প্রায় দু’মাস। তার পর ওই পরীক্ষার ফল ও বিশ্বের অন্য প্রান্তে হওয়া পরীক্ষার ফল খতিয়ে দেখে তবেই এই টিকা বাজারে ছাড়ার প্রশ্নে উপযুক্ত কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অক্সফোর্ড।
এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘সমস্ত গবেষণার তথ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার অব ইন্ডিয়ার কাছে জমা দিতে হবে। সব ক’টি ধাপের ফল খতিয়ে দেখে তার পরেই ভারতে ছাড়ার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ভারতের বাজারে কবে ওই টিকা আসতে পারে তা নিয়ে কোনও ভবিষ্যৎবাণী করতে চাননি নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পল। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায যেমন সাফল্য মিলতে পারে, তেমনই ব্যর্থ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।’’
তবে সূত্রের মতে, সব যদি আশানুরূপ ভাবে এগোয়, সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভারতের বাজারে অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টিকা উৎপাদন সংস্থা সিরামের। অক্সফোর্ডের টিকাটি শেষ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেলে প্রতি মাসে অন্তত ১০ কোটি টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রতিষেধক আবিষ্কারের দৌড়ে থাকা মার্কিন সংস্থা নোভাভ্যাক্সের কাছ থেকে তাদের ১০ কোটি টিকা উৎপাদনের বরাতও পেয়েছে সিরাম। বিপুল সংখ্যক টিকার উৎপাদন খরচসাপেক্ষ। তাই বিল ও মিরিন্ডা গেটসের কাছ থেকে পাওয়া ১৫ কোটি ডলার সাহায্যের পরেও বাজার থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে সিরামের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy