Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Farmers' Protest

চাপের মুখে দর কষাকষিতেও মোদী সরকারের ‘নরম সুর’

চারটি দাবির মধ্যে দু’টি বিষয়ে সরকার রাজি হওয়ায়, ৩১ ডিসেম্বর দিল্লিতে যে ট্রাক্টর মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কেন্দ্রের সঙ্গে প্রত্যেক বৈঠকেই নিজেদের খাবার সঙ্গে আনছেন কৃষক প্রতিনিধিরা। বুধবারের বৈঠকের ফাঁকে মন্ত্রীরা কৃষকদের আনা খাবারই খেলেন। ছবিতে (ডান দিক থেকে তৃতীয়) কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। পিটিআই

কেন্দ্রের সঙ্গে প্রত্যেক বৈঠকেই নিজেদের খাবার সঙ্গে আনছেন কৃষক প্রতিনিধিরা। বুধবারের বৈঠকের ফাঁকে মন্ত্রীরা কৃষকদের আনা খাবারই খেলেন। ছবিতে (ডান দিক থেকে তৃতীয়) কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

কৃষক নেতারা সরকারের অন্ন ছোঁবেন না। তাই এত দিন বৈঠকের সময় গুরুদ্বারার লঙ্গর থেকেই তাঁদের জন্য চা-ডাল-রুটি পাঠানো হচ্ছিল বিজ্ঞান ভবনে। বুধবার কৃষক নেতাদের সঙ্গে সরকারের বৈঠকের সময় নরেন্দ্র সিংহ তোমর, পীযূষ গয়ালের মতো মন্ত্রীরা সেই লঙ্গরের খাবারই প্লেটে তুলে নিলেন। দ্বিতীয় বার চা-পানের বিরতিতে কৃষক নেতারাও নরম হলেন। তাঁরা সরকারি চায়ের কাপ হাতে নিলেন।

টানা কৃষক আন্দোলনের চাপের মুখে কৃষক নেতাদের দর কষাকষিতেও বুধবার মোদী সরকার ‘নরম সুর’ নিল। কৃষকদের চারটি দাবির মধ্যে আজ কেন্দ্র দু’টি দাবি মেনে নিল। তবে কৃষকদের মূল দাবি— তিন কৃষি আইনের প্রত্যাহার ও ফসলের দাম বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি নিয়ে বুধবারের বৈঠকেও সমাধানসূত্র মেলেনি। কৃষক নেতারা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের কাছেই এই জট কাটানোর সূত্র জানতে চেয়েছেন।

বৈঠকে মন্ত্রীরা কৃষক নেতাদের অনুরোধ করেন, আইন প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প থাকলে তা জানান। আইনে আরও সংশোধন দরকার হলে, তা-ও জানান। ৪ জানুয়ারি ফের বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়েছে।

আরও পড়ুন: পুরভোটে বিজেপি ধরাশায়ী হরিয়ানায়

বুধবার কৃষক সংগঠনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে দু’টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক, দিল্লির দূষণ কমাতে রাজধানী ও সংলগ্ন রাজ্যে খড় পোড়ানোর দায়ে ৫ বছর পর্যন্ত জেল ও ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার ব্যবস্থা করে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল, কৃষকদের তার আওতার বাইরে রাখা হবে। দুই, বিদ্যুৎ আইনে প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে কৃষকদের দাবি ছিল, আগে সেচের জন্য যে-ভাবে বিদ্যুতে ভর্তুকি মিলত, সেই ভাবেই ভর্তুকি বজায় রাখতে হবে। সরকার সেই দাবিও মেনে নিয়েছে। আদতে সরকারের প্রস্তাব ছিল, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা পুরো মাসুলই নেবে। রাজ্য চাইলে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি দিতে পারে।

মোদী সরকার আগেই তিন কৃষি আইনে একগুচ্ছ সংশোধন করতে রাজি হয়েছিল। এ দিনের বৈঠকে মন্ত্রীরা জানান, সরকার আইনে আরও সংশোধন করতে রাজি। এমএসপি-তে ফসল কেনার ব্যবস্থা কী ভাবে আরও ভাল করা যায়, তা-ও সরকার দেখবে। তবে কৃষি সংস্কারের আইন প্রত্যাহার নিয়ে মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরও পড়ুন: অমর্ত্য সম্পর্কে কুমন্তব্য, নিন্দায় বিদ্ধ দিলীপ

তবে চারটি দাবির মধ্যে অন্তত দু’টি বিষয়ে সরকার রাজি হওয়ায়, ৩১ ডিসেম্বর দিল্লির সীমানায় রিং রোডে যে ট্রাক্টর মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আন্দোলন যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। বৈঠকের পরে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর অনুরোধ করেন, শৈত্যপ্রবাহের কথা মাথায় রেখে বয়স্ক ও মহিলাদের যেন আন্দোলন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কৃষক নেতারা রাজি হননি। গত এক মাসের আন্দোলনে ৪০ জনের বেশি কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে তাঁদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন কৃষক নেতারা।

বৈঠকের পরে কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা আজ প্রথম থেকেই নরম সুর নিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছেন, আপনাদের কথা মানতে আমরা রাজি। কিন্তু আমাদের সমস্যাটাও আপনারা বুঝুন।’’ কৃষক নেতাদের মতে, সরকারের ‘সমস্যা’ হল প্রধানমন্ত্রী এত বার তিন কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করেছেন যে, তা প্রত্যাহার করলে তাঁর মুখ পুড়বে। সরকার আজ ফের তিন কৃষি আইন খতিয়ে দেখতে দু’পক্ষের কমিটি বা আমলা-গোষ্ঠী তৈরির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কৃষক নেতারা তা খারিজ করে দেন। তবে এমএসপি-র বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি বলে কৃষিমন্ত্রী ফের কৃষকদের জানান।

কিন্তু কৃষক নেতারা জানিয়ে দেন, মাত্র ছয় শতাংশ কৃষক এমএসপি-তে ফসল বেচতে পারেন। মোদী সরকার যতই স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে চাষের খরচের দেড় গুণ ফসলের দাম দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করুক, আসলে সরকার স্বামীনাথনের কথা মতো সব খরচ হিসেব করছে না। হান্নান বলেন, ‘‘আমরা মন্ত্রীদের প্রশ্ন করেছি, আপনারা কি এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির বিষয়ে নীতিগত ভাবে রাজি? মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, এমন কথা তাঁরা বলতে পারছেন না। তবে কৃষকদের প্রস্তাব মেনে এমএসপি ব্যবস্থা আরও ভাল করা যায়।’’

আন্দোলনরত কৃষকরা যে-ভাবে সংযম বজায় রেখেছেন, আজ কৃষিমন্ত্রী তার প্রশংসা করেছেন। উল্টো দিকে আন্দোলনের দিকে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা যে-ভাবে কাদা ছুড়ছেন, তার কড়া নিন্দা করেছেন কৃষক নেতারা। তবে কৃষক নেতারা আশা করছেন, ৪ জানুয়ারির বৈঠকই শেষ বৈঠক হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers' Protest Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy