Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
মোদী না মন্ত্রক, কার কথা ঠিক?
India-China Clash

চিনের আগ্রাসন নথি গায়েব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সাইট থেকে

পূ্র্ব লাদাখে চিন সেনার অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জুন মাসের সর্বদলীয় বৈঠকে দাবি করেছিলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডে কেউ অনুপ্রবেশ করেনি।

গালওয়ান উপত্যকায় চিনা নির্মাণের ফাইল উপগ্রহ চিত্র।

গালওয়ান উপত্যকায় চিনা নির্মাণের ফাইল উপগ্রহ চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

চিনা সেনার আগ্রাসনের কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মানতে রাজি না-হলেও তাঁর বক্তব্যকে কার্যত খারিজ করে বসেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নথি। যদিও বিষয়টা জানাজানি হতেই মন্ত্রকের সাইট থেকে সেই নথি গায়েব!

পূ্র্ব লাদাখে চিন সেনার অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জুন মাসের সর্বদলীয় বৈঠকে দাবি করেছিলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডে কেউ অনুপ্রবেশ করেনি। ভারতীয় কোনও পোস্টও কেউ দখল করেনি। কিন্তু তাঁর কথাকে কার্যত মিথ্যা প্রতিপন্ন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে জানানো হয়— মে-র গোড়া থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়, বিশেষ করে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা আগ্রাসন দেখা যাচ্ছিল। চিনা সেনা ১৭-১৮ মে কুগরং নালা, গোগরা ও প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে।

নথির বিষয়টি সামনে আসতেই অবশ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে তা গায়েব হয়ে যায়। কিন্তু তত ক্ষণে বিরোধীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। রাহুল গাঁধীর প্রশ্ন, কেন তবে মিথ্যা বলছেন প্রধানমন্ত্রী? নথি গায়েব হতেও ফের এক প্রস্ত প্রশ্ন ছোড়েন তিনি। অস্বস্তিতে পড়ে মন্ত্রক এখন ঘরোয়া ভাবে বলছে, কী ভাবে ওই নথি প্রকাশ্যে এল, কী ভাবেই বা গায়েব হল, সবটাই খতিয়ে দেখা হবে।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা আগ্রাসন সংক্রান্ত নথি।

মন্ত্রকের সাইটে প্রকাশিত নথিতে ছিল, গত এপ্রিল-মে মাস থেকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে অনুপ্রবেশ শুরু করে চিন সেনা। একে একে দখল করে নেয় প্যাংগং লেকের একাধিক ফিঙ্গার ও গালওয়ান উপত্যকার একাধিক পেট্রোলিং পয়েন্ট।

গত ১৫ জুন ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টের কাছে দু’দেশের সেনার সংঘর্ষে মারা যান ২০ জন ভারতীয় সেনা। ওই ঘটনার পরে সর্বদল বৈঠকে মোদী দাবি করেন, ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে কোনও অনুপ্রবেশ হয়নি। ভারতের সীমান্তে কেউ বসে নেই। প্রধানমন্ত্রীর ওই দাবি ঘিরে সেই সময়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা।

সেই নথি বৃহস্পতিবার আর দেখা যায়নি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে।

ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটের ‘নতুন কী’ বিভাগে গত মঙ্গলবার একটি নথি আপলোড করা হয়। যাতে মে মাস থেকে চিন সেনার ধারাবাহিক অনুপ্রবেশের বিষয়টি ছিল। উপরন্তু তারা যে কুগরং নালা, গোগরা এবং প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ঢুকে পড়েছে, সে বিষয়েও বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। এ ছাড়া ওই নথিতে সেনাদের ফেরানো নিয়ে ৬ জুনের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক এবং সেই বৈঠক হওয়া সত্ত্বেও ১৫ জুন সেনা-সংঘর্ষ এবং ফের ২২ জুন কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের উল্লেখ ছিল। নথিতে বলা হয়, দু’দেশের মধ্যে সেনা স্তরে ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালু থাকলেও অচলাবস্থা দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব লাদাখে চিনা সেনার একতরফা আগ্রাসন একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং তাদের গতিবিধি খুব কাছ থেকে নজরদারি করা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।

আমাদের ভূখণ্ডে চিন বসে আছে, এ তথ্য অস্বীকার করলে, ওয়েবসাইট থেকে নথি সরালে সত্য পাল্টাবে না।

—রাহুল গাঁধী

নথিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে থাকলেও গোড়ায় কারও নজরে আসেনি। তার পর এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম সরব হলে দু’দিনের মাথায় ওয়েবসাইট থেকে লেখাটি সরিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি মন্ত্রক। কিন্তু মন্ত্রকের সাইটই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডন করায় রীতিমতো অস্বস্তিতে মোদী সরকার। ‘লাদাখ সীমান্তে কেউ অনুপ্রবেশ করেনি’—প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ধামাচাপা দিতে সে সময়েই অবশ্য বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রককে বলতে হয়েছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় কাঠামো তৈরি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে দু’দেশের সেনা। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, খোদ প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন অনুপ্রবেশ হয়নি, সেখানে ভারত কিসের ভিত্তিতে বেজিংয়ের সঙ্গে দর কষাকষি করবে!

বাস্তবে হয়েছেও তাই। কমান্ডার পর্যায়ের পঞ্চম দফা বৈঠকের পর চিন জানিয়ে দিয়েছে, তাদের সেনা প্রত্যাহার শেষ। প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার পাঁচ থেকে আট পর্যন্ত যে এলাকায় তারা বসে পড়েছে, সেখান থেকে সরার প্রশ্ন নেই। ফলে দর কষাকষির প্রশ্নে রীতিমতো ব্যাকফুটে দিল্লি। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নথি সামনে আসায় ফের সরব কংগ্রেস নেতৃত্ব।

রাহুল গাঁধী আজ প্রথমে টুইট করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কেন মিথ্যা কথা বলছেন? পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ওই নথি সরিয়ে দিতেই রাহুল ফের টুইট করেন, ‘‘চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া তো দূর, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের নাম নিতেই সাহস পাচ্ছেন না। চিন আমাদের ভূখণ্ডে বসে রয়েছে এই তথ্য অস্বীকার করলে এবং ওয়েবসাইট থেকে নথি সরিয়ে নিলে সত্য পাল্টাবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy