ফাইল চিত্র।
লকডাউন তথা ঘরবন্দির বছরেই ধুন্ধুমার নোটবন্দি ঘিরে! ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার চার বছর পূর্তিতে রবিবার ওই ‘ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ’-এর জন্য মোদী সরকারকে তুলোধোনা করল কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির। অভিযোগ, ওই আচমকা ঘোষণায় দেশের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তার খেসারত গুনতে হয়েছে কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষকে। কাজ গিয়েছে বহু জনের। আর অর্থনীতিকে স্বচ্ছ করার নামে গুটিকয়েক ‘বন্ধু’ শিল্পপতির পকেট ভরার বন্দোবস্ত করেছেন মোদী। যদিও টুইটে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং জাল নোটের সংখ্যা কমার পাশাপাশি জিডিপির অনুপাতে কর আদায় চোখে পড়ার মতো বেড়েছে ওই সাহসী পদক্ষেপের দৌলতে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর অভিযোগ, “কোভিড নয়, ভারতীয় অর্থনীতির বিপর্যয়ের আসল কারণ নোটবন্দি। চার বছর আগে অর্থনীতির উপরে মোদীর আক্রমণের খেসারত গুনেছেন কৃষিক, মজুর, ছোট দোকানদাররা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, বৃদ্ধির হার অন্তত ২ শতাংশ বিন্দু কমবে। সেটাই হয়েছে। সেই সময়ে ব্যাঙ্কে জমা হওয়া সাধারণ মানুষের টাকা ২-৩ জন ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিকে দিয়েছেন মোদী। ঋণ মকুব করেছেন ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকার।…” বিঁধেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও।
আরও পডুন: সংযমের কড়া বার্তা তেজস্বীর
সাধারণত, নোটবন্দি নিয়ে কথা উঠলে, তাকে কিছুটা অগ্রাহ্য করেন মোদী। কিন্তু রবিবার ৮ নভেম্বরকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা দিবস’-এর তকমা দিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ এতটাই উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছেন যে, নিজের টুইটে নোট বাতিলের পক্ষে যুক্তি সাজাতে হয়েছে তাঁকে। হালে হঠাৎ লকডাউন ঘোষণাকে বার বার নোটবন্দির গোত্রে ফেলার চেষ্টা করেছেন বিরোধীরা। অভিযোগ, দুই হঠকারী পদক্ষেপেই চরম মাশুল গুনতে হয়েছে অর্থনীতিকে। অনেকের ধারণা, প্রত্যাঘাত সেই কারণেও।
আরও পডুন: কুপোকাত হল বিভাজনের রাজনীতি, স্বস্তি
কংগ্রেসের অভিযোগ, শুরুতে বলা হয়েছিল, কালো টাকা ও দুর্নীতিকে নির্মূল করতে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত। তার পরে একে একে এসেছে জাল নোট বাতিল, ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদে রাশ টানা, আয়করের জাল বিস্তারের মতো হরেক যুক্তি। কিন্তু তার ক’টিতে সাফল্য মিলেছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “কালো টাকা কমাতে, করের জাল বিস্তারে, অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনায় সহায়ক হয়েছে নোটবন্দি।” বিজেপি মুখপাত্র রাজীব চন্দ্রশেখরের কটাক্ষ, “নোটবন্দি ছিল কালো টাকার উপরে সরাসরি হামলা। তাতে হয়তো অখুশি বিরোধীরা।”
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের টুইট, নোটবন্দির পর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধরা পড়েছে ১৩,৪০০ কোটি টাকার বেনামি সম্পত্তি। বেড়েছে জিডিপির সাপেক্ষে কর আদায়। কিন্তু বিরোধীদের জিজ্ঞাসা, শুধু এর জন্য নোট বাতিলের প্রয়োজন ছিল? যে সিদ্ধান্তের কারণে শতাধিক ব্যক্তি স্রেফ এটিএমের লাইনে মারা যান, কাজ যায় এত জনের— তার পক্ষে কেন্দ্রের যুক্তি কি আদৌ জুতসই?
রাহুলের সাত প্রশ্ন
• নোটবন্দিতে সত্যিই কালো টাকা ও দুর্নীতি কমেছে? কালো টাকা ধরা পড়লে, পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে থাকা ১৫.৪১ লক্ষ কোটি টাকার ৯৯.৩% নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্কে ফিরেছিল কী ভাবে? দুর্নীতি ধাক্কা খেয়ে থাকলে, বিভিন্ন রাজ্যে কোথা থেকে আসছে বিধায়ক কেনা-বেচার বিপুল অঙ্ক?
• নোট নাকচের পরেও কী করে বাড়ল জাল নোট? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট, নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট নকলের ঘটনা বেড়েছে যথাক্রমে ১২১ ও ২১.৯ শতাংশ।
• নগদহীন অর্থনীতিই পাখির চোখ হলে, কেন বেড়েছে নগদে কেনাকাটা? সত্যিই কি তেমন অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত? আমেরিকা, কানাডা, জার্মানির মতো উন্নত দেশে কিন্তু নগদে লেনদেন ৪৬ থেকে ৮০ শতাংশ! নাকি জোর করে ডিজিটাল লেনদেনের পথে ঠেলে দিয়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে কিছু সংস্থাকে?
• সন্ত্রাসবাদ, মাওবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ নোট বাতিলে ধাক্কা খেয়েছে কতখানি? জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হানার সংখ্যা কিংবা সন্ত্রাসে বলির সংখ্যা তো ঊর্ধ্বমুখী।
• ব্যাঙ্কে সত্যিই আমানত বেড়েছে? ২০১৩-১৪ সালে যেখানে দেশে সঞ্চয়ের হার ৩২.১২% ছিল, সেখানে ২০১৮-১৯ সালে তা ৩০.১১%।
• বলা হয়েছিল, নোটবন্দিতে দাম কমবে বাড়ি-ফ্ল্যাটের। কিন্তু ওই বাজারে চোট এতটাই যে, বিক্রি না-হয়ে পড়ে রয়েছে ১৩.১৯ লক্ষ ফ্ল্যাট।
• নোট নাকচে কাজ গিয়েছে কত জনের? আজ়িম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা ৫০ লক্ষ। সিএমআইই-র তথ্য অনুসারে, শুধু ২০১৮ সালেই চাকরি গিয়েছে ১.১ কোটি।
মোদীর চার জবাব
• স্বচ্ছ হয়েছে অর্থনীতি। চিহ্নিত হয়েছেন এমন ৩.০৪ লক্ষ জন, নোট বাতিলের পরে যাঁরা ১০ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলেন অথচ কর দিতেন না। তাঁদের থেকে মোটা অঙ্কের কর আদায়। ধরা পড়েছে ১৩,৪০০ কোটি টাকার বেনামি সম্পত্তি।
• নাগাড়ে কমছিল জিডিপির অনুপাতে কর আদায়। নোটবন্দির পরে তা ঊর্ধ্বমুখী।
• চোখে পড়ার মতো শ্লথ হয়েছে হাতবদল হওয়া নোটের মোট অঙ্ক। ১৪.৫১% থেকে নেমে এসেছে ৯-১০ শতাংশে।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য মাফিক ধরা পড়া জাল নোটের সংখ্যা কমেছে অনেক। ২০১৬-১৭ সালের ৭.৬২ লক্ষ থেকে কমে ২০২০-২১ সালে (সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ৯০ হাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy