ভারত সফরে থাকাকালীন দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি ফিরে যেতেই গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হল আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। তাদের অভিযোগ, বেছে বেছে মুসলিমদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। অথচ সব দেখেশুনেও নীরব সরকার। নৃশংস এবং লাগামছাড়া হিংসা রুখে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ তারা। তবে মার্কিন ওই সংগঠনের অভিযোগ খারিজ করে‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছে বিদেশ দফতর।
দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে দেশের অন্দরেও ইতিমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে মার্কিন ওই সংগঠনের মন্তব্যের জবাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার টুইটারে বলেন, ‘‘ইউএসসিআইআরএফ-র অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়, বরং বিভ্রান্তিমূলক। বরং মনে হচ্ছে, বিষয়টির রাজনীতিকরণই ওদের উদ্দেশ্য। হিংসা রুখে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা আমাদের সংস্থাগুলি। সরকারের শীর্ষস্তরের প্রতিনিধিরা বিষয়টি তদারকি করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে শান্তি এবং সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন। এমন সংবেদনশীল সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো মন্তব্য না করতে অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।’’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর চলাকালীনই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে তেতে ওঠে রাজধানী দিল্লি। এলোপাথাড়ি ইট ও গুলিবৃষ্টিতে গত পাঁচ দিনে সেখানে মৃত্যুসংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। বুধবার ইউএসসিআইআরএফ-এর ওয়েবসাইটে তা নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর শেষ হতেই প্রাণঘাতী দাঙ্গায় তেতে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। মুসলিমদের নিশানা করে উন্মত্ত জনতা হামলা চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি আমরা। তাতে এখনও পর্যন্ত ২০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন। বেশ কিছু মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বহু মুসলিম। গতবছর ডিসেম্বর থেকে দেশ জুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীনই এই অশান্তি দানা বেঁধেছে।’’
We have seen comments made by USCIRF, sections of the media and a few individuals regarding recent incidents of violence in Delhi. These are factually inaccurate and misleading, and appear to be aimed at politicising the issue. (1/3)
— Anurag Srivastava (@MEAIndia) February 27, 2020
রবীশ কুমারের টুইট।
আরও পড়ুন: বিচারপতি বদলি নিয়ে তোপ রাহুল-প্রিয়ঙ্কার, ‘রুটিন বদলি’ বললেন রবিশঙ্কর
ইউএসসিআইআরএফ-এর কমিশনার অনুরিমা ভার্গব বলেন, ‘‘দিল্লি জুড়ে যে নৃশংস এবং লাগামছাড়া হিংসা বেড়ে চলেছে, তা চলতে দেওয়া যায় না। সমস্ত নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা উচিত ভারত সরকারের। অথচ তার বদলে খবর আসছে, মুসলিমদের উপর হিংসাত্মক হামলা রুখতে কোনও ভূমিকাই নেয়নি দিল্লি পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। যে মুহূর্তে ভারতে বেছে বেছে মুসলিমদের নিশানা করা হচ্ছে, তাঁদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে, ঠিক সেই সময় এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের।’’
আরও পড়ুন: রাজধানী যখন জ্বলছে, পুলিশ তখন আব্বুলিশ!
ইউএসসিআইআরএফ-এর চেয়ারপার্সন টোনি পারকিন্স বলেন, ‘‘দিল্লিতে যে হিংসা চলছে, যে ভাবে মুসলিমদের উপর হামলা এবং তাঁদের বাড়ি, দোকান এবং ধর্মীয় স্থান জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়াই দায়িত্বশীল সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। তাই মুসলিমদের এবং যাঁরা যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন তাঁদের সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে পদক্ষেপ করতে আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’’
এর আগে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়েও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলে ইউএসসিআইআরএফ। গত বছর নভেম্বরে ‘ইস্যু ব্রিফ: ইন্ডিয়া’ নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা । তাতে বলা হয়, ‘ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার যে ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিতাড়ন করার এই প্রচেষ্টাই তার অন্যতম উদাহরণ। অগস্ট মাসে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বিজেপি সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ করেছে, তাতে তাদের মুসলিম বিরোধী মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। মুসলিমদের বাদ দিয়ে হিন্দু এবং বাছাই করা কিছু সংখ্যালঘুদের সুবিধা করে দিতেই যে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরীক্ষার আয়োজন, বিজেপির ইঙ্গিতেই তা স্পষ্ট।’’ সেই সময়ও তাদের রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে খারিজ করেছিল বিদেশ মন্ত্রক।