Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Delhi Violence

‘নরক হয়ে গেল চেনা রাজধানী’

চারতলা রাজধানী স্কুলের সমস্ত কাচের জানলা ভাঙা। চার দিকে বই, পরীক্ষার খাতা, কাচের টুকরো ছড়িয়ে।

স্বজনহারা: দিল্লিতে সংঘর্ষে নিহত মুদাস্‌সর খানের দেহ ঘিরে হাহাকার। বৃহস্পতিবার। রয়টার্স

স্বজনহারা: দিল্লিতে সংঘর্ষে নিহত মুদাস্‌সর খানের দেহ ঘিরে হাহাকার। বৃহস্পতিবার। রয়টার্স

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৯
Share: Save:

‘‘ওই যে রাজধানী পাবলিক স্কুলটা দেখছেন, তার ছাদে ইট-পাথর-অ্যাসিড-পেট্রল বোমা জমা করেছিল ওরা। ছাদে লোহার রড গেঁথে বিরাট গুলতি বানিয়েছিল। আমরা নীচ থেকে ইট-পাথর ছুড়ছিলাম। ওরা তিন-চারজন মিলে গুলতিতে টান দিয়ে বড় বড় পাথর গোলার মতো ছুড়ছিল।’’

আমরা আর ওরা! এক দিকে শিবপুরী। অন্য দিকে মুস্তাফাবাদ। আশপাশের পুড়ে যাওয়া বাড়ি, দোকানের ভিতর থেকে পাকিয়ে পাকিয়ে কালো ধোঁয়া উঠছে। সারি সারি গাড়ির পোড়া কঙ্কাল। বাড়ির গায়ে, পুড়ে যাওয়া কাঠের দরজায় গুলির দগদগে ক্ষত। মাঝখানের রাস্তাটা স্থানীয়দের কাছে ‘ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বর্ডার’। সত্যিই যেন ‘সংঘর্ষবিধ্বস্ত সীমান্ত’। সেই ‘সীমান্তে’ দাঁড়িয়ে বছর তিরিশের রাজু বাদোরিয়া সোম-মঙ্গলবারের সংঘর্ষের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। রাজুর চশমার নীচে, নাকে, হাতে-পায়ে চোটের দাগ। পাথর এসে লেগেছিল।

এত ঝুঁকি নিয়ে পাথর ছুড়ছিলেন কেন? এক মুহূর্ত না-থেমে রাজু জবাব দেন, ‘‘মুস্তাফাবাদে ওদের মসজিদে আগুন ধরানো হয়েছিল। তাই ওরা আমাদের মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মতলব করছিল। নিজেদের মান-ইজ্জত বাঁচাতে পাথর ছুড়েছি।’’ এসব শুরু করল কে? রাজু আর জবাব খুঁজে পান না। ‘‘জানি না। কেন এসব শুরু হল, বুঝতে পারিনি এখনও।’’

মুস্তাফাবাদে ব্রিজপুরী মেন রোড দিয়ে ঢুকতেই ডান হাতে পরপর রাজধানী পাবলিক স্কুল ও ডিআরপি কনভেন্ট স্কুল। চারতলা রাজধানী স্কুলের সমস্ত কাচের জানলা ভাঙা। চার দিকে বই, পরীক্ষার খাতা, কাচের টুকরো ছড়িয়ে। গোটা স্কুল জুড়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। স্কুলের মালিক ফয়জল ফারুক সকালে এসে সব দেখে, অশান্তির ভয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। পাশের দোতলা ডিআরপি স্কুলেরও অর্ধেক পুড়ে ছাই। যে-সব টেবিল-চেয়ার, কাগজপত্র বাঁচানো গিয়েছে, সেগুলো খোলা মাঠে ডাঁই করে রাখা। সেই স্কুলের মালিক রূপচাঁদ শর্মা মাথায় হাত দিয়ে বসে। ‘‘সব তো শেষ হয়ে গেল। হাজারখানেক ছাত্রছাত্রী কোথায় যাবে? কোথায় পড়াশোনা করবে ওরা,’’ প্রশ্ন দিশাহারা রূপচাঁেদর।

সোম-মঙ্গলবার টানা সংঘর্ষের পরে গত কাল থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লি জুড়ে পুলিশ, র‌্যাফ, আধাসেনার টহলদারি শুরু হয়েছে। জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরীর অনেক এলাকাই আগের তুলনায় ‘শান্ত’। শান্তই বটে! দলে দলে পাড়া খালি করে পালাচ্ছেন মৌজপুরের বাসিন্দারা। শিবপুরী, মুস্তাফাবাদের মতো ভিতরের দিকে পাড়ায় পাড়ায় অশান্তি এখনও থামেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরেই শিবপুরীর একটি ধর্মীয় স্থানে আগুন লাগানো হয়েছে। ফের পাথর ছোড়াছুড়ি হয়েছে। অটোর ভিতর থেকে অ্যাসিডের বোতল-সহ আটক করা হয়েছে চার যুবককে।

শিবপুরী-মুস্তাফাবাদের মাঝখানের রাস্তা বরাবর বিরাট নালা। সোমবার থেকে নালা পারাপারের সমস্ত সেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোথাও বেঞ্চ-চেয়ার-টেবিল, কোথাও বাঁশ-তারের জালের ব্যারিকেড। নালার একটি জায়গা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। গাড়ি থেকেও নামতে দেওয়া হল না। কী ব্যাপার? মুস্তাফাবাদের বাসিন্দা হায়দর আলি নিজের পোড়া জামাকাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফিসফিস করে বললেন, ‘‘বলছে নাকি, ৩৮ জন মারা গিয়েছে। আমি বলছি, সংখ্যাটা আরও বেশি। ওই নালায় কত দেহ পড়ে রয়েছে, কেউ জানে না।’’

কারা করল এ-সব? হায়দর আশেপাশে আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘‘বেছে বেছে আমাদের দোকানগুলোয় আগুন লাগিয়েছে। বাড়ির ছাদে কাঁদানে গ্যাসের শেল ‘রাজধানী’ পেয়েছি। পুলিশের নয়, বেআইনি কাঁদানে গ্যাসের শেল। এ সব কোথা থেকে এল?’’ দিল্লি পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘অন্তত দু’দিন ধরে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। না-হলে এত পেট্রল বোমা, বিরাট বিরাট গুলতি, অ্যাসিড, বন্দুক-গুলি জোগাড় করে ফেলা সম্ভব নয়।’’ টের পাননি কেন? পুলিশ অফিসার তেতো মুখে জবাব দেন, ‘‘টের পেয়েও কিছু করার ছিল না। দু’দিক থেকে ওই অ্যাসিডের বোতল, পেট্রল বোমা ছোড়া হলে কে কী করবে? মঙ্গলবারই এখানে এক এসএসবি জওয়ানের মুখে অ্যাসিড এসে পড়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy