Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
National News

বিভাজনকে হারিয়ে জন-প্রিয়তার রাজনীতির জয় দিল্লিতে

আপ নেতৃত্বের দাবি, কার্যত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশের রাজনীতি।

উদ্‌যাপন: দিল্লি বিধানসভায় দলের জয় নিশ্চিত হতেই দলীয় দফতরে সপরিবার আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

উদ্‌যাপন: দিল্লি বিধানসভায় দলের জয় নিশ্চিত হতেই দলীয় দফতরে সপরিবার আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

হ্যাটট্রিক করলেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে সত্যি প্রমাণ করে দিল্লিতে পর পর তিন বার ক্ষমতায় এল আম আদমি পার্টি (আপ)। ২০১৪ সালে লোকসভায় জিতে দিল্লিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া। পাঁচ বছর পরে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল। রাত পর্যন্ত ৭০টি আসনের মধ্যে ৬২টি কেন্দ্রে হয় জিতেছেন, না হয় এগিয়ে রয়েছেন আপ প্রার্থীরা। অথচ, কয়েক মাস আগেই লোকসভা ভোটে দিল্লির সাতটি আসনই জিতেছিল বিজেপি। আজ বিধানসভায় আটটির বেশি আসন দখল করতে ব্যর্থ মোদীর দল। লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস এ বারও খাতা খুলতে ব্যর্থ।

আজ সন্ধ্যায় টুইট করে কেজরীবালকে জয়ের শুভেচ্ছা জানান মোদী। অভিনন্দন জানিয়েছেন রাহুল গাঁধীও। আপ সূত্রের মতে, ১৪ ফেব্রুয়ারি শপথ নেওয়ার কথা ভাবছেন কেজরীবাল। ২০১৪ সালে প্রথম দফায় ৪৯ দিন ক্ষমতায় থাকার পর এই তারিখেই ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে ফের শপথ নিয়েছিলেন ওই তারিখেই।

আরও পড়ুন: মেরুকরণের ধার কি কমছে? আপ-ঝড়ে অমিত কোথায়

আজ সকাল আটটায় গণনার প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে যেতে থাকেন আপ প্রার্থীরা। প্রথম দু’ঘণ্টা তা-ও কিছু কেন্দ্রে পাল্লা দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বেলা দশটা বাজতেই স্পষ্ট হয়ে যায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছেন কেজরীবাল। নিজের কেন্দ্র নয়াদিল্লি আসনে জেতা নিশ্চিত হতেই দলের সদর দফতরে চলে আসেন তিনি।

এ দিকে, রাঘব চড্ডা, গোপাল রাই, সোমনাথ ভারতীর মতো নেতারা অনায়াসে জিতলেও, উদ্বেগে ফেলে দেন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। পূর্ব দিল্লির পটপড়গঞ্জে দ্বাদশ রাউন্ডের পরে ব্যবধান বাড়ে তার। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ সিসৌদিয়ার জয় নিশ্চিত হতে স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও সহকর্মীদের নিয়ে মঞ্চে ওঠেন কেজরীবাল। বলেন, ‘‘আজ থেকে গোটা দেশে এক নতুন রাজনীতি শুরু হল। কাজের রাজনীতি। প্রমাণ হল, যে কাজ করবে মানুষ তাকেই ভোট দেবে।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আপ নেতৃত্বের দাবি, কার্যত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশের রাজনীতি। তাঁদের যুক্তি, সিএএ, এনআরসি-কে হাতিয়ার করে সমাজকে বিভাজন করার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। জামিয়া-শাহিন বাগকে সামনে রেখে প্রবল মেরুকরণের প্রচেষ্টা হয়েছিল। এমনকি কেজরীবালকে জঙ্গি আখ্যাও দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। অন্য দিকে মেরুকরণ ও কু-কথার রাজনীতি এড়িয়ে কেজরীবাল ভরসা রাখেন নাগরিক জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণের বিষয়গুলি প্রচারে। দিনের শেষে পরাস্ত হয়েছে বিভেদকামী শক্তি। জিতেছে উন্নয়ন।

সিএএ, এনআরসি-কে হাতিয়ার করে মেরুকরণের যে চেষ্টা বিজেপি করেছিল, শেষ পর্যন্ত তা সাফল্যের মুখ দেখেনি। দিল্লির পরে গোটা দেশের মানুষও ‘কাজের রাজনীতি’-কেই বেছে নেবে বলে আশা কেজরীবালের। আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘বিভাজনের রাজনীতিকে দূরে ঠেলে শেষ পর্যন্ত উন্নয়নকেই বেছে নেওয়ার জন্য দিল্লির জনতাকে অভিনন্দন।’’

আপ শিবিরের আরও বক্তব্য, দুর্নীতি ও কাজে ব্যর্থতার কারণে ২৩ জন বিধায়ককে টিকিট দেওয়া হয়নি। এক-তৃতীয়াংশ বিধায়ক বদলের এই কৌশলও সাফল্যের অন্যতম কারণ।

অন্য দিকে, ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি নেতৃত্ব মানছেন, দল যে মেরুকরণের রাজনীতিতে ভরসা করেছিল তা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেননি। পরিবর্তে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় দৃষ্টান্তমূলক উন্নতি, নিখরচায় বিদ্যুৎ, মহিলাদের বাসে যাতায়াত বিনামূল্যে করার মতো জনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি হেরে গিয়েছে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কাছে।

পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কাজ করতে না-দেওয়ার অভিযোগে সরব থাকতেন কেজরীবাল। আপের অভিযোগ ছিল, দিল্লি পুরসভা আর কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের মাঝে পড়ে কার্যত কোনও পরিকল্পনা রূপায়িত করতে পারছে না তারা। ২০১৮-র জুনে সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে দিল্লি সরকারের পক্ষে রায় দেওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।

তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসেই দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ও দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ। কিন্তু কেন্দ্র সেই দাবি কি আদৌও মানবে? জয়ের দিনেই অবশ্য বিরোধের রাস্তায় যেতে চাননি কেজরীবাল। বরং প্রধানমন্ত্রীর টুইটের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘‘দিল্লিকে বিশ্বমানের শহর বানানোর জন্য আমি কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy