প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
তিন মাসে এই প্রথম ৫০ হাজারের নীচে নেমেছে এক দিনে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা। রোগমুক্তির হার পৌঁছেছে ৮৮ শতাংশে। এই ‘মঞ্চ ব্যবহার করে’ মঙ্গলবার দেশের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, উৎসবের মরসুম দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে সাবধানতায় সামান্যতম ঢিলেমিও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তছনছ করে দিতে পারে করোনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত পাওয়া সাফল্যকে। তাই প্রতিষেধক না-আসা পর্যন্ত সাবধানতায় এতটুকুও ঢিল না-দিতে প্রত্যেক দেশবাসীকে করজোড়ে অনুরোধ করেছেন তিনি।
কলকাতা-সহ রাজ্যে শেষ কয়েক দিনে পুজোর বাজারের উপচে পড়া ভিড় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের আগে করোনা-সাবধানতাকে থোড়াই কেয়ার করে অনেকে সপরিবার বেরিয়েছিলেন ঠাকুর দেখতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই ভিড়ের ভিডিয়ো। বিহারে আবার ‘বড়’ নেতাদের ভোট প্রচারে ভিড় হচ্ছে তুমুল। এ দিনই যেমন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের নির্বাচনী জনসভায় মাঠ ভর্তি মাস্কহীন লোকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খেয়েছে দিনভর। নবরাত্রি, দশেরার কারণে বাজারে ভিড় বাড়ছে অন্যান্য রাজ্যেও।
এ দিন বক্তৃতায় আলাদা করে কোনও রাজ্যের নাম না-করেও মোদী বলেছেন, “সম্প্রতি আমরা সবাই এমন অনেক ছবি এবং ভিডিয়ো দেখেছি, যাতে স্পষ্ট যে, হয় অনেকে সাবধানতা অবলম্বন করা বন্ধ করে দিয়েছেন, নয়তো বিষয়টিকে আর তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এটি একেবারেই ঠিক নয়।”
আরও পড়ুন: টিকায় আবশ্যিক নয় ডিজিটাল স্বাস্থ্যকার্ড: কেন্দ্র
আমেরিকা, ইউরোপ সমেত পশ্চিমী দুনিয়ায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা মাঝে কমতে শুরু করলেও, হালে ফের তা আশঙ্কাজনক ভাবে ঊর্ধ্বমুখী। ভারতেও সামনে উৎসবের লম্বা মরসুম। দরজায় দাঁড়িয়ে শীত। এই সাঁড়াশি আক্রমণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে, এ দেশের স্বাস্থ্য-পরিকাঠামো এবং অর্থনীতি তা কী ভাবে সামাল দেবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। সে কথা মনে করিয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘ভুলবেন না, লকডাউন উঠে গেলেও, ভাইরাস যায়নি।” সাবধানতায় ঢিল না-দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে মোদী এ দিন কখনও কবীরের পংক্তি বলেছেন, কখনও রামচরিতমানস। আশ্বাস দিয়েছেন, প্রতিষেধক এলে দ্রুত তা প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নীল নকশা তৈরি রাখছে সরকার। মোদী বলেন, প্রতিষেধকের খোঁজে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। ভারতেও একাধিক প্রতিষেধক পরীক্ষায় অনেকখানি এগিয়েছে। কয়েকটির ফল আশাপ্রদ। তা এলেই যাতে প্রত্যেকের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার পরিক্লপনা ও প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এক সপ্তাহে দু’বার বৈঠকে বসেছেন মোদী।
মোদীর দাবি, “দেশে সুস্থ হয়ে ওঠার হার এখন ভাল। মৃত্যুর হার কমেছে। ভারতে যেখানে প্রতি ১০ লক্ষে ৫,৫০০ জন করোনায় আক্রান্ত, সেখানে আমেরিকা ও ব্রাজিলের মতো দেশে তা ২৫ হাজারের মতো। ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে মৃত্যু হয়েছে গড়ে ৮৩ জনের। সেখানে আমেরিকা, ব্রাজিল, স্পেন, ব্রিটেনের মতো বহু দেশে তা ৬০০-র বেশি।”
বিরোধী শিবির অবশ্য প্রশ্ন ছুড়েছে, অত দূরের উদাহরণ কেন? গত কালই অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর টুইট তুলে ধরে রাহুল গাঁধীর অভিযোগ ছিল, ভারতে করোনায় মৃত্যুর হার বাংলাদেশ, পাকিস্তান সমেত প্রায় সমস্ত পড়শি মুলুকের থেকে বেশি!
প্রশ্ন উঠেছে অর্থনীতি নিয়ে মোদীর দাবি ঘিরেও। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনতা কার্ফু থেকে এখন পর্যন্ত আমরা লম্বা রাস্তা পেরিয়ে এসেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি।… উৎসবের মরসুমে বাজারের ঔজ্জ্বল্যও ফিরছে ধীরে ধীরে।” কংগ্রেসের প্রশ্ন, প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি সঙ্কুচিত হয়েছে ২৩.৯%। মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে টেক্কা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। লগ্নির দেখা নেই। উৎসবের ভরা মরসুমেও চাহিদা বাড়ন্ত। এর মধ্যে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ছবি মোদী দেখলেন কোথায়?
কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, মোট সংক্রমিতের সংখ্যা, দৈনিক সংক্রমণের হার থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত কোভিড-মাপকাঠিতে ভারত শীর্ষে। কেন্দ্রের ভুল নীতিতে ভাইরাসের বদলে প্রাণ গিয়েছে অর্থনীতিরই। তিন দিন পরে বিহারে ভোটের প্রচারে গিয়ে জনসভায় উপচে পড়া ভিড় দেখলে কী করবেন মোদী, বিরোধীদের জিজ্ঞাস্য এ-ও।
আরও পড়ুন: কৃষি আইন নাকচ, বিল পাশ পঞ্জাবে
মোদীর বক্তৃতার আগে টুইটে রাহুলের দাবি ছিল, “চিনা সেনাকে কবেকার মধ্যে বাইরে ছুড়ে ফেলবেন, তা দেশকে বলুন।” কিন্তু কোভিড-সাবধানতার বাইরে অন্য কিছু নিয়ে এ দিন মুখ খোলেননি মোদী। অনেকের বক্তব্য, অনেক উৎসবের নাম করে শুভেচ্ছা জানালেও মোদীর তালিকা থেকে বাদ দুর্গাপুজো। একাংশের দাবি, দুর্গাপুজোর কথা সচেতন ভাবেই ২২ তারিখের বক্তৃতার জন্য তুলে রেখেছেন মোদী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy